আশালতা
আরজু আফরিন ক্যাথি
🕐 ২:৪৫ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ১১, ২০১৯
হলে আসার পর আমাকে অবাক করা কয়েকটি ব্যাপারের মধ্যে একটি হলো আমার রুমমেট আশালতা। শ্যামবর্ণের, গোলগাল- কালোমতন মেয়েটি সারাদিন মনমরা হয়ে টেবিলে বসে থাকত। মাঝে মধ্যেই দেখতাম দখিনের জানালায় তাকিয়ে কি যেন ভাবত। মেয়েটির রেজাল্ট খুব ভালো, ভালো কবিতাও লিখত। অদ্ভুত বৈশিষ্ট্যটি হচ্ছে যে কারো সঙ্গে কোনো কথা বলত না।
অনেক যোগবিযোগের অঙ্ক কষে এক দিন জিজ্ঞাসা করেই বসলাম। আনমনে দৃষ্টিতে ও বলতে শুরু করল- ওই যে শুকনো পাতা বিছিয়ে আছে দিগন্তজুড়ে, সে পাতার মর্মর শব্দটা আমার বড্ড আপন। আমায় মনে করিয়ে দেয় আমার মেয়েবেলা। মেয়ে হয়ে জন্ম নেওয়ায় বাবা নবজন্মা সন্তানের মুখ না দেখেই মাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিলেন। মামা বাড়িতেও জায়গা হলো না মায়ের; না হওয়ার যৌক্তিক কারণও ছিল বটে, আমি মেয়ে বলে কথা- ছেলে হলে দুপয়সা আয় রোজগার করতে পারতাম।
তবে মা ফেলতে পারলেন না আমায় ; গর্ভধারিণী তো! দুই দিনের শিশুকে কোলে নিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে আসার আগ পর্যন্ত মায়ের জানা ছিল না এ শহরে একমুঠো ভাতের চেয়ে অনেক বেশি সহজলভ্য নিশিকন্যারা। আমার বয়স যখন বছর তিনেক তখন থেকেই মা আর আমি রোজ ভোরে শুকনো পাতা কুড়াতাম। ইশারা- ইঙ্গিতে, কখনো বা নখের আঁচড়ে- যখনই এই পুরুষের সমাজ মায়ের সঙ্গে জবরদস্তি করত, মা আমায় জাপটে বুকে ধরে চিৎকার করে বলতেন ‘ব্যারিস্টার হইস মা, এই পুরুষের সমাজে মেয়ের সম্মান এনে দিস।’
আমার বয়স যখন সাতের মতো মা এক দিন আমাকে বস্তির কামরায় একা রেখে বাইরে গিয়েছিলেন যেটা তিনি সচরাচর করতেন না। পাশের কামরার চাচা সেদিন আমাদের ঘরে এসেছিলেন। উদ্দেশ্য হাসিল করতে পারেননি কারণ মা ফিরে এসেছিলেন। সেদিনই মা আমাকে দূরে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। আমার বেড়ে ওঠা একটি আশ্রয়কেন্দ্রে। মা আমার- বিনা চিকিৎসায় মারা গিয়েছিলেন। মায়ের নিথর দেহ যেদিন এক ধুলার মাঠে পড়েছিল, মাকে দেখে মনে হচ্ছিল, যুদ্ধ করতে করতে বড্ড ক্লান্ত এক বীরসেনা খুব শান্তির ঘুম ঘুমিয়েছে। কান্নায় ভেঙে পড়ল আশালতা।
দীর্ঘশ্বাস নিয়ে আশার জানালার বাইরে তাকিয়ে দেখলাম, একজন মহিলা ২-৩ বছরের একটি বাচ্চাকে সঙ্গে নিয়ে পাতা কুড়োচ্ছে। বুক ফেটে কান্না আসছিল আমার। দৌড়ে গিয়ে মায়ের নম্বর ডায়াল করলাম, ওপাশ থেকে হ্যালো বলতেই ‘তোমায় বড্ড ভালোবাসি মা। খুব কষ্ট হচ্ছে মা। পৃথিবীর সব সংগ্রামী মায়েদের জন্য সালাম। মা তোমায় সালাম।
সদস্য
এগারজন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228