ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

আনন্দ

গল্প

হামীম রায়হান
🕐 ৫:৩৫ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ০৬, ২০১৮

বাংলাদেশ পাকিস্তানকে হারিয়ে এশিয়া কাপের ফাইনালে উঠেছে। আমরা সবাই বেশ আনন্দিত! কিন্তু বরাবরের মতোই বাবা একটু বেশিই আনন্দিত! কারণ, বাবা পাকিস্তানকে মোটেই দেখতে পারেন না। বাবা পাকিস্তানকে কেন এত ঘৃণা করে সেটা আমি জানি। আমার দাদাকে পাকিস্তানিরা মুক্তিযুদ্ধের সময় বাবার চোখের সামনে হত্যা করেছিল। অবশ্য আমি শুধু এটুকুই জানি। কখনো পুরো ঘটনা শোনা হয়নি।

আজ বাবাকে দাদার মৃত্যুর কাহিনী বলতে বলি। বাবা সে দিনের কথা স্মরণ করতে ভয় পান। বলতে গিয়ে বাবার চেহারাটা কেমন যেন হয়ে গেল। বাবা শুরু করলেন তার বাবার হত্যার বর্ণনা।

তখন আমার বয়স ১১ কি ১২। বাবা ছিলেন গ্রামের মসজিদের ইমাম। অনেক সময় বাবা মসজিদেই থাকতেন। আমিও বাবার সঙ্গে মসজিদে থাকতে যেতাম। সে দিন ছিল ১৯ সেপ্টেম্বর। ঢাকায় প্রচণ্ড যুদ্ধ হচ্ছিল। সারা দেশে একটা থমথমে অবস্থা।

আমাদের গ্রামে তখনো পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আসেনি। সে রাতেও আমি বাবার সঙ্গে মসজিদে ছিলাম। হঠাৎ মসজিদের বাইরে গাড়ির শব্দে ঘুম ভেঙে যায় আমার। বাবা মসজিদের বারান্দায় বসে ওজু করছিলেন। আমি রুম থেকে তাকিয়ে দেখি জিপ থেকে কয়েকজন হানাদার নেমে বাবার সামনে এসে দাঁড়ায়। বাবা তাদের দেখে উঠে দাঁড়িয়ে সালাম দেয়। তারা সালামের কোনো জবাব না দিয়ে পাল্টা প্রশ্ন করে, কামরুল মাস্টারের বাড়ি কোথায়। কামরুল মাস্টার ছিলেন আমাদের গ্রামের স্কুলের শিক্ষক।
দেশে যুদ্ধ শুরু হলে তিনি যুদ্ধে চলে যান। এরপর তার খবর কেউ জানতো না। বাবা বললেন, ‘আমি জানি না।’

‘তুম ঝুট বলতা, শালা, শুয়ার কা বাচ্ছা। সাচ, সাচ বোল।’
‘আমি তো জানি না।’

‘উল্লুকা পাঠা।’ বলেই তারা বাবার পেটে জোরে একটা লাথি মারে। বাবা ছিটকে গিয়ে মসজিদের ভেতরে জায়নামাজে পড়েন। জুতাসহ এক অফিসার মসজিদের ভেতরে গিয়ে বাবার বুকে গুলি করে। গুলির শব্দে কেঁপে উঠে মসজিদ। আমি হতবাক হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম। তারা গুলি করেই গাড়ি নিয়ে গ্রামের ভেতরে চলে গেল। আমি কাঁপা পায়ে মসজিদের ভেতরে গিয়ে দেখি জায়নামাজের ওপর বাবার লাশ পড়ে আছে। সারা রাত মসজিদের কোণায় বসে কাটালাম। সকালে গ্রামে গিয়ে দেখি চারদিকে লাশ আর লাশ।

সেই রাতে তারা আমাদের পুরো গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়। অনেক যুবতী মেয়েকে ধরে নিয়ে যায়। কত লোক যে সে রাতে নিহত হয় তার হিসাব নাই। আমাদের বসত-বাড়িটাও তারা পুড়িয়ে দিয়েছে। উঠানে আমার মায়ের লাশ। গোয়ালের নিরহ গরুগুলোও রক্ষা পায়নি ওদের হাত থেকে। তাহলে বল, এত কিছু দেখার পরও আমি পাকিস্তানকে কীভাবে সহ্য করি।’

দেখি বাবার চোখের কোণে জল পড়ছে। এ ঘটনা শুনার পর আমার মনেও প্রচণ্ড ঘৃণা জন্মালো পাকিস্তানের প্রতি। মানুষ মানুষকে এভাবে হত্যা করতে পারে? এবার বুঝলাম পাকিস্তান বধে বাবার এত আনন্দ!

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper