ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪ | ৫ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

জবির নতুন ক্যাম্পাসে অনিরাপদ নিরাপত্তাকর্মীরা

মুজাহিদ বিল্লাহ
🕐 ৫:৩৩ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২৫, ২০২১

জবির নতুন ক্যাম্পাসে অনিরাপদ নিরাপত্তাকর্মীরা

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) নতুন ক্যাম্পাসে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা নিরাপত্তাকর্মীরা মানবেতর ও অনিরাপদ ভাবে জীবন যাপন করছেন। প্রায় ২০০ একর জায়গায় মাত্র চার জন নিরাপত্তাকর্মীকে দায়িত্ব দেয়া হলেও তাঁরা পাচ্ছেন না কোনো সুযোগ-সুবিধা। নিয়ম অনুযায়ী আট ঘন্টা ডিউটির নিয়ম থাকলেও চব্বিশ ঘন্টা ডিউটি করেও ভাতা ও সুযোগ-সুবিধা থেকে তাঁরা বঞ্চিত হচ্ছেন।

সরেজমিনে, নতুন ক্যাম্পাসের কোণায় একটি বিল্ডিংয়ে বসবাস করছেন তাঁরা। সুবিধাজনক স্থানে না হওয়ায় ২০০ একরের ক্যাম্পাসে মাত্র চার (৪) জন নিরাপত্তাকর্মী প্রতিনিয়ত হিমশিম খাচ্ছেন। প্রতিদিন ভোরবেলায় একবার ও বিকালে পুরো ক্যাম্পাসে একবার টহল দেন তাঁরা। ক্যাম্পাসের পুরো জায়গাটি প্রতিবার প্রদক্ষিণ করতে প্রায় দেড় থেকে দুই ঘন্টা পায়ে হাঁটতে হয় তাঁদের। অনেকটা জনমানবহীন জায়গা হওয়ায় লাঠিসোঁটা সাথে নিয়ে ভয়ের সাথেই তাঁরা টহল দেন।

এদিকে তাঁদের বাসকৃত বিল্ডিংয়েও নেই কোনো শৌচাগার ও পানির সংযোগ। রাতে অনেকটা দূরের শৌচাগারে যেতে রয়েছে সাপ ও শেয়ালের ভয়। একজন বাইরে বের হলে বাকিদের লাঠিসোঁটা নিয়ে সাথে যেতে হয় হয় পাহারা দিতে। নেই সুপেয় পানির ব্যবস্থাও। ২৪ ঘন্টা সেখানে অবস্থান করায় পরিবার থেকে দূরে থাকতে হচ্ছে তাঁদের। সেজন্য তাঁদের বাজার ও যাতায়াতসহ অন্যান্য বাড়তি খরচ গুণতে হচ্ছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোনোপ্রকার ভাতা ও সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন না তাঁরা। অতিরিক্ত ডিউটি করার পরও কোনো প্রকার সুযোগ-সুবিধা না পাওয়ায় এবং বাড়তি খরচ হওয়ায় পরিবার চালাতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে তাঁদের।

এদিকে চলতি বছরের শুরুর দিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নতুন ক্যাম্পাসের নিরাপত্তার চুক্তিভিত্তিক জন্য আনসার মোতায়েন করেছিল। প্রায় ৭ লক্ষ টাকা অগ্রিম নিয়ে দায়িত্ব পালন শুরু করে আনসাররা। ১৫ জন আনসার সদস্যের জন্য আসবাবপত্রসহ প্র‍য়োজনীয় সামগ্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব অর্থায়নে কিনে দেওয়া হয়। এমনকি সেখানে বিদ্যুৎ ও জ্বালানী সুবিধা না থাকায় তাদের জন্য মিটারের কার্ড বিল ও গ্যাস সিলিন্ডার কেনার খরচ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহন করা হয়। তবে দুই মাস থাকার পর প্রায় ৪ লক্ষ টাকারও অধিক টাকা নিয়ে বাকি টাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ফেরত দিয়ে তারা চলে যায়। এরপরই বিশ্ববিদ্যালয়ের সীমিত নিরাপত্তাকর্মী থেকে মাত্র ৪ জন চুক্তিভিত্তিক ও স্থায়ী নিরাপত্তাকর্মীকে বিশাল ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মোতায়েন করা হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নিরপত্তাকর্মী বলেন, আমরা এখানে বাড়তি ডিউটি করলেও কোনো ধরণের সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছিনা। আমরা এখানে নিজেরাই অনেক কষ্টে চলাফেরা করছি। আমাদের ন্যূনতম প্রতিমাসে বিদ্যুৎ খরচ (মিটার কার্ডে রিচার্জ) ১ হাজার টাকা ও গ্যাস সিলিন্ডার কিনতে ১২০০ টাকা দিলেও আমরা এখানে কোনোরকমে চলতে পারি। নিজেদের পকেট থেকে এখন আমাদের এই খরচগুলো দিতে হচ্ছে। আমরা প্রশাসনকে জানিয়েছি। মানবিক দিক থেকে হলেও অল্প কিছু ভাতা বাড়িয়ে দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করলে আমাদের জন্য ভালো হয়।

এব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী রেজিস্ট্রার মো. সাইদুর রহমান (নিরাপত্তা শাখা) বলেন, স্থায়ী যারা আছে তাদের আলাদা কোনো ব্যবস্থা নাই। এখন মৌখিক অনুমতি সাপেক্ষে আমরা চালাচ্ছি৷ ফাইল দিয়েছি, ওদের সিদ্ধান্ত আসেনাই এখনও। আসলে বুঝা যাবে কি হলো। আমি জানিয়েছি যে মাসে এতো টাকা খরচ দরকার।

বিষয়টি জানালে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. কামালউদ্দীন আহমদ বলেন, তারা যে মানবেতর জীবনযাপন করছে আমি আগেও কিছু শুনেছি, তুমিও কিছু বললে। তাঁদের বিষয়টি আমরা দেখছি। ফাইলটি দ্রুত পাস করানোর ব্যবস্থা করবো।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হক বলেন, আমরা কিছুদিন আগে ক্যাম্পাস পরিদর্শনে গিয়েছিলাম। তারা আমাকে তাদের বিষয়টি জানিয়েছে। আমি সংশ্লিষ্টদের বলেছি ফাইল জমা দিতে। খুব দ্রুতই ফাইল পাস করার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 
Electronic Paper