প্রাণবন্ত রাবি ক্যাম্পাস
লাবু হক, রাবি
🕐 ৭:০২ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২০, ২০২১
মেঘলা আকাশ। থেমে থেমে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়ছে। মোটা পলিথিন টাঙানো দোকানে চায়ের কাপের টুং টাং শব্দ। নিচে সারি সারি পাতা বেঞ্চে বসে চায়ের কাপে চুমুকের ফাঁকে খোশ গল্পে মেতেছে বেশ কয়েকজন। পাশেই আবার কয়েকজন ঢোল, তবলা ও একতারার সুরে গলা ছেড়ে গান গাইছে। দীর্ঘদিন পরে দেখা হওয়ায় অনেকে আবার কুশল বিনিময় করছে নিজেদের মধ্যে। এ দৃশ্য রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) টুকিটাকি চত্বরের।
করোনায় প্রায় ১৯ মাস বন্ধের পর যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। গত বছরের ১৬ মার্চ বন্ধ হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়টির সকল বিভাগে সশরীরে ক্লাস শুরু হচ্ছে আগামীকাল। ফলে দীর্ঘদিন পর শিক্ষার্থীদের পদচারণায় প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে পুরো ক্যাম্পাস।
ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা গেছে, দীর্ঘদিন পরে ক্যাম্পাসে এসে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে নিজেকে ফ্রেমবন্দী করছেন শিক্ষার্থীরা। অনেকে আবার কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের ধার ঘেঁষে বই নিয়ে বসে পড়াশোনায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো পূর্বের ন্যায় রাকসু ভবনে অনুশীলন শুরু করে দিয়েছেন। রোজ সন্ধ্যায় শহীদ স্মৃতি সংগ্রহশালা মুক্তমঞ্চ এবং কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে বসাচ্ছেন গানের পসরা। চারুকলায় চারু-শিক্ষার্থীদের রঙ-তুলির ছোঁয়ায় আবারও রঙিন হচ্ছে ক্যানভাস। তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন চিত্রকর্ম। গত ১৭ অক্টোবর খুলে দেওয়ায় শিক্ষার্থীশূন্য আবাসিক হলগুলোও এখন মুখর হয়ে উঠেছে।
দীর্ঘদিন পরে হলেও ক্লাসে ফেরা নিয়ে আনন্দিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী এম কামিল আহমেদ। তিনি বলেন, করোনার দীর্ঘ বিরতির পর প্রথম ক্লাস! ভাবতেই আনন্দে ভেসে ওঠছে মন। বহু প্রতীক্ষার পর অবশেষে সবার সাথে দেখা হচ্ছে। লম্বা বিরতি শেষে সশরীরে শিক্ষকদের ক্লাস করব, ক্লাস শেষে বন্ধুদের সাথে চায়ের কাপে জম্পেশ আড্ডা জমবে। অনির্বচনীয় এক অনু্ভূতি। চেনা পরিবেশে ফেরার জন্যই তো এতদিন মুখিয়ে ছিলাম। অবশেষে সে সুযোগ হল। কর্তৃপক্ষের প্রতি কৃতজ্ঞতা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থী আছিয়া খাতুন বলেন, যখন শুনলাম ২১ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয় খোলা হবে। তখন ভেবেছিলাম এবারেও হয়ত খোলা হবে না। দিন যাচ্ছিল ঠিকই, কিন্তু আমার ছুটি বাড়ানোর হতাশা কাটছিল না। তবে এবারে অপেক্ষার অবসান ঘটেছে। ছুটি আর বাড়েনি। আবার আগের মতো ক্লাসে যাবো বিষয়টি ভাবতেই নিজের কাছে এক অন্যরকম ভাললাগা কাজ করছে। আজ ক্যাম্পাসকে সেই দিনের মতো লাগছে, যেদিন আমি ক্লাসের উদ্দেশ্যে প্রথম প্রাণের প্রাঙ্গণে এসেছিলাম।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা তারেক নূর বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্লাসে আসার নির্দেশ দিয়েছি। সকল শিক্ষার্থীকে অবশ্যই অন্তত এক ডোজ টিকা নিয়ে মাস্ক পরিধান করে ক্লাসে প্রবেশ করতে হবে। ক্লাসরুমে শিক্ষার্থীদের জন্য স্যানিটাইজেশনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
ছাত্র উপদেষ্টা আরও বলেন, ক্লাসরুমে প্রবেশের পূর্বে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর শারীরিক তাপমাত্রা পরিমাপ করা হবে। কারও তাপমাত্রা বেশি থাকলে তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল সেন্টারে পাঠানোর জন্য বিভাগের সভাপতিদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে শিক্ষার্থীদের চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী আইসোলেশনে রাখা হবে।