ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

জাতীয় পতাকার অর্থ লোপাট ইবিতে

ইরফান রানা, ইবি
🕐 ১২:৪৩ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ১১, ২০২১

জাতীয় পতাকার অর্থ লোপাট ইবিতে

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে জাতীয় পতাকা ও বিশ্ববিদ্যালয় পতাকা ক্রয়ে অর্থ লোপাটের অভিযোগ উঠেছে। জাতীয় পতাকা তৈরিতে পূর্বের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পতাকা কিনতে প্রায় তিনগুণেরও বেশি অর্থ খরচ দেখানো হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন অফিসের সরঞ্জামাদি ক্রয়েও অর্থ নয়ছয়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযুক্ত ওই  কর্মকর্তার নাম টিপু সুলতান। তিনি বর্তমানে এসেস্ট অফিসের ভারপ্রাপ্ত প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তার অভিযোগের বিষয়ে ও দুর্নীতির প্রমাণাদি ও এ-সংক্রান্ত নথিপত্র প্রতিবেদকের হাতে আছে। জাতীয় পতাকা ও বিশ্ববিদ্যালয় পতাকা ক্রয়ে অনিয়ম, এছাড়াও ডিজিটাল ব্যানার, টেবিলের গ্লাস ক্রয়ে ইচ্ছেমতো মূল্য নির্ধারণ করার অভিযোগ রয়েছে।

সূত্র জানায়, জাতীয় শোক দিবস ও ২১ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর গ্রেনেড হামলা দিবস পালনের জন্য এ বছরে জাতীয় পতাকা, বিশ্ববিদ্যালয় পতাকা ও ডিজিটাল ব্যানার ক্রয় করা হয়। দিবস উপলক্ষে ক্রয় করা হয়েছিল দুটি জাতীয় পতাকা, দুটি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের পতাকা ও দুটি ডিজিটাল ব্যানার বানানো হয়। এতে একটি জাতীয় পতাকা ক্রয়ে ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৭০ টাকা। সে হিসেবে দুটি পতাকা ক্রয়ে ব্যয় দেখানো হয়েছে ১ হাজার ৩৪০ টাকা। এছাড়া একটি বিশ্ববিদ্যালয় পতাকা ক্রয়ে ২ হাজার ১৩৫ টাকা ব্যয় দেখানো হয়েছে। এই দুটি পতাকায় ব্যয় দেখানো হয়েছে ৪ হাজার ২৭০ টাকা। এদিকে দুটি ডিজিটাল ব্যানার বাবদ ক্রয় দেখানো হয়েছে ৫ হাজার ৫০০ টাকা। যার একটি ক্রয় করা হয়েছে ২ হাজার ৭৫০ টাকা দামে। এ বছর একই ধরনের জাতীয় পতাকা ও বিশ^বিদ্যালয় পতাকা ক্রয় করা হয়েছে দ্বিগুণ দামে। অথচ গত বছর একই ধরনের পতাকা ক্রয় করা হয়েছিল অপেক্ষাকৃত দ্বিগুণ কম মূল্যে।

এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দোকানের মালিকের সঙ্গে কথা বললে তিনি অভিযোগের সত্যতা আছে এবং কেনাকাটায় মূল্য নির্ধারণে অনিয়ম হয়েছে বলে প্রতিবেদককে জানিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট দোকান মালিক বলেন, ‘জাতীয় পতাকার জন্য যে কাপড় প্রয়োজন তাতে এত খরচ হয় না। একটি জাতীয় পতাকা কিনতে সর্বোচ্চ ৪০০ টাকা লাগে। আর বিশ্ববিদ্যালয় একটি পতাকা তৈরিতে ৬০০ টাকা খরচ হয়। এর বেশি হয় না। এর আগে আমার দোকান থেকে এই দামে জাতীয় পতাকা ও বিশ্ববিদ্যালয় পতাকা ক্রয় করা হয়েছিল।’

এদিকে উপ-উপাচার্য কক্ষের টেবিলের গ্লাস ক্রয়েও প্রয়োজনের তুলনায় বেশি বিল ধরা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই টেবিলের উপরের গ্লাসটি ক্রয় করা হয়েছে গত ১৮ আগস্ট। গ্লাস ক্রয়ে মূল্য ধরা হয়েছে ৯ হাজার ৪০০ টাকা। এছাড়াও ওজি টেবিল গ্লাসের চারিধার ডিজাইন বাবদ খরচ দেখানো হয়েছে ২ হাজার টাকা। কুষ্টিয়া থেকে ক্যাম্পাস যাতায়াত বাবদ ভাড়া ধরা হয়েছে ১ হাজার ৬০০ টাকা। আবারো মজুরি বাবদ খরচ দেখানো হয়েছে ২ হাজার টাকা। সর্বমোট ১৫ হাজার টাকার রশিদ দেখিয়েছেন এস্টেট অফিসের ভারপ্রাপ্ত প্রধান টিপু সুলতান।

এ বিষয়ে কুষ্টিয়ার এক দোকানদার বলেন, ‘সবচেয়ে ভালো ক্রিশটাল টেবিলের গ্লাস ও ওজির দাম ৭ হাজার ৫৬০ টাকা হয়ে থাকে। আর ভাড়া বাবদ লাগে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা।’ খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভাউচার রশিদে সঠিক গ্লাসের মাপের (কত ইঞ্চি বাই কত ফুট) বিষয়টি কৌশলে উল্লেখ করা হয়নি। ইতোমধ্যে এসব ক্রয়ের বিবরণী দেখিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে টাকা উত্তোলন করেছেন বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে এস্টেট অফিসের ভারপ্রাপ্ত প্রধান টিপু সুলতান বলেন, ‘এসব ছোটখাটো বিষয় নিয়ে তো কিছু করার নেই। পতাকার বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি প্রতিবেদকের সঙ্গে দেখা করে কথা বলতে চান। টেবিল গ্লাসের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘না না এটা হয় না, আমি প্রমাণসহ দিতে পারব।’ এ বিষয়ে কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আলমগীর হোসেন ভূইয়া বলেন, ‘ইভিডেন্স পেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি প্রফেসর ড. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার কাছে কোনো তথ্য নেই।’ তবে তিনি ঘটনা জানার পর ‘ভেরিফাই করা হবে’ বলে জানান।

 
Electronic Paper