ভর্তিচ্ছুদের জন্য অনন্য উদ্যোগ গোপালের
লাবু হক, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
🕐 ১২:৫২ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ০৭, ২০২১
উত্তরবঙ্গের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। সংক্ষিপ্ত নাম রাবি। হাজারও ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীর স্বপ্নের এক নাম। প্রাণের এক ক্যাম্পাস। গত ৪ অক্টোবর শুরু হয়ে গতকাল বুধবার দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই বিশ্ববিদ্যালয়টির ২০২০-২১ সেশনের স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা শেষ হয়েছে। এবার বিশ্ববিদ্যালয়টির আবাসিক হলগুলো বন্ধ থাকায় অনেক ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী আবাসন নিয়ে বিপাকে পড়েন।
অনেকই অর্থের বিনিময়ে ভর্তিচ্ছুদের আবাসনের ব্যবস্থা করলেও ৩৮ জন শিক্ষার্থীর জন্য ফ্রি আবাসন ব্যবস্থা ও এক বেলা ভর্তিচ্ছুদের জন্য অনন্য উদ্যোগ ফ্রি খাবারের ব্যবস্থা করেন গোপাল রায়। গোপাল রায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাফিক ডিজাইন, কারুশিল্প এবং শিল্পকলার ইতিহাস বিভাগের বর্ষের শিক্ষার্থী। শুধু ফ্রি আবাসন ও খাবারই নয়, ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের অনুপ্রেরণা ও ইতিবাচক মানসিকতার জন্য ১০০ জনকে বইও উপহার দেন এই শিক্ষার্থী। সিরাজগঞ্জ থেকে আমিনুল ইসলাম নামের এক অভিভাবক তার বোনকে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছিলেন পরীক্ষা দেওয়ার জন্য। তিনি বলেন, বাস থেকে নেমে রাবি ক্যাম্পাসে এসে কোনোকিছু বুঝতে পারছিলাম না। পরে গোপালের সঙ্গে পরিচয় হলে সে খাওয়ার ব্যবস্থা করে এবং রাকসু ভবনের রুডায় থাকার ব্যবস্থা করে দেয়। পরীক্ষা শেষে ফেরার আগে দুটি গল্পের বইও উপহার দেয় গোপাল।
নীলফামারী জেলা থেকে রাবিতে ভর্তি পরীক্ষা দিতে আসা আয়েশা বেগম ও রত্মা রায় নামের দুই শিক্ষার্থী জানান, তারা দুজন মিলে দুই রাত থাকার জন্য ১২০০ টাকা দিয়ে কাজলার এক মেসে ওঠেন। একদিন থাকার পর মেস মালিক তাদের কাছে আরও টাকা চাইলে তারা দুজনে বিপাকে পড়ে যান। পরে এক বড় ভাইয়ের কাছে গোপালের নম্বর পেয়ে যোগাযোগ করলে তিনি মুন্নুজান হলে তাদের রাখেন। গোপাল রায় পড়ালেখার পাশাপাশি শিক্ষা, সেবা ও সামাজিক সেচ্ছাসেবকমূলক কাজ করেন। স্যার ও বন্ধুদের সঙ্গে গড়া ‘সবার পাঠশালা’ সংগঠনের মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রত্যেক পাড়ায় পাড়ায় লাইব্রেরি গঠনের মধ্য দিয়ে বই পড়া আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। মানুষের প্রকৃত বন্ধু বই পড়া নিয়ে কাজ করার পাশাপাশি তিনি প্রকৃতির বন্ধু বৃক্ষরোপণও করছেন সবুজের অভিযানের মধ্য দিয়ে।
গোপাল রায় বলেন, ‘আমাদের স্বপ্ন, মেধা, মনন ও প্রজ্ঞাকে শিক্ষার মাধ্যমে প্রজ্জ্বলিত করতে হবে। এতে আমাদের ব্যক্তিলগ্নের যে একটা দেয়াল আছে সেটা ভেঙে চুরমার হয়ে যাবে, আমরা সমাজ লগ্নে পরিণত হতে পারব। তখন আমাদের মানসিকতা আর্থিককেন্দ্রিকতা থেকে বের হয়ে আসবে। আর আমরা যা-ই চিন্তা করি না কেন অর্থকে নিয়েই করি। সেটাও ঠিক আছে। তবে সেই আর্থিক চিন্তা একটু হলেও সামাজিক হওয়া উচিত।’