জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় শাঁখের করাত!
ফাহিয়ান হামিম
🕐 ১০:১৫ পূর্বাহ্ণ, জুন ১৭, ২০২১
মহামারী করোনাভাইরাসের মধ্যে আপাতত পরীক্ষা ছাড়াই প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের দ্বিতীয় বর্ষে প্রমোশন দিয়েছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই বসতে হবে প্রথম বর্ষের লিখিত পরীক্ষায়। আর সে সময় ওই পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ হলে কিংবা অংশ না নিলে বাতিল হবে ‘অটোপ্রমোশন’। এদিকে কবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে, আর কবে পরীক্ষা হবে তা বলতে পারছেন না সংশ্লিষ্ট দফতরগুলো। ফলে ওপরের বর্ষে বর্তমানে উত্তীর্ণ হলেও ফের পিছলে পড়ার আশঙ্কা অনেক শিক্ষার্থীর। জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের এমন সিদ্ধান্তকে ‘শাঁখের করাত’ হিসেবে দেখছেন শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন, বর্তমান শ্রেণিতে বছরের পর বছর পড়ে থেকে বিপদেই আছি, আর অটোপ্রমোশনের পর ফের পিছলে প্রথম বর্ষে পড়ে গেলে মহাবিপদে পড়তে হবে। তারা বিকল্প পদ্ধতিতে মূল্যায়নের দাবি জানান।
কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। গতকাল বুধবার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানা যায়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স ১ম বর্ষের শিক্ষার্থীদের শর্তসাপেক্ষে ২য় বর্ষে প্রমোশন দেওয়া হবে। যেসব শিক্ষার্থী ২০২০ সালে অনার্স ১ম বর্ষ পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য ফরম পূরণ করেছেন, তারাই এ অটোপ্রমোশন পাচ্ছেন। শর্তসাপেক্ষে তাদের সবাই এখন থেকে ২য় বর্ষের অনলাইন ক্লাসে অংশগ্রহণ করতে পারবেন।
এদিকে, ২০২০ সালে অনার্স ১ম বর্ষ পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য ফরম পূরণ করেছেন সর্বমোট ৪ লাখ ৬৭ হাজার ৮৩৫ জন শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে নিয়মিত শিক্ষার্থী ২ লাখ ৯৭ হাজার ৬২৬ জন আর অনিয়মিত শিক্ষার্থী ১৯ হাজার ৫০ জন। এরা সবাই অর্থাৎ ৩ লাখ ১৬ হাজার ৬৭৬ শিক্ষার্থী অটোপাস পেয়ে ২য় বর্ষে উত্তীর্ণ হচ্ছেন। এর বাইরে প্রথম বর্ষের পরীক্ষার জন্য আবেদন করা মানোন্নয়ন পরীক্ষার্থী ছিলেন ১ লাখ ৫১ হাজার ১৫৯ জন। তাদের অটোপাস প্রক্রিয়ার বাইরে রাখা হয়েছে। পরে যখন আবার প্রথম বর্ষের লিখিত পরীক্ষা হবে তখন তারা মানোন্নয়ন পরীক্ষা দেবেন। ২০১৯-২০২০ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হয়েছিল মোট ৩ লাখ ৭৩ হাজার ৮৭৬ জন শিক্ষার্থী।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ, তথ্য ও পরামর্শ দফতরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক মো. ফয়জুল করিম বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে এসব শিক্ষার্থীকে অবশ্যই প্রথম বর্ষের লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হবে। কেউ যদি এই পরীক্ষায় অংশ না নেন বা পরীক্ষায় অংশ নিয়ে রেগুলেশন অনুযায়ী ‘নট প্রমোটেড’ হয় সেক্ষেত্রে তার শর্তসাপেক্ষে দেওয়া প্রমোশন বাতিল বলে গণ্য হবে।
এদিকে শিক্ষার্থীরা বলছেন, ঠিকমতো হয়নি অনলাইন ক্লাস, যাও হয়েছে নেটওয়ার্কের সমস্যা এবং ব্যয় বহুল ইন্টারনেটের কারণে সবার ক্লাস কার হয়ে উঠেনি। পরবর্তী শিক্ষাবর্ষে গিয়ে এ শিক্ষাবর্ষের পড়া আবার পরবর্তী শিক্ষাবর্ষের পড়াশোনা হবে কষ্টসাধ্য ব্যাপার। এছাড়া, নট প্রমোটেড হয়ে প্রমোশন বাতিল হলে আবার প্রথম বর্ষে ফিরে আসার শঙ্কা তো রয়েছেই।
টঙ্গী সরকারি কলেজের প্রথম বর্ষের এক শিক্ষার্থী বলেন, এখনই পড়াশোনা ভুলতে বসেছি। দ্বিতীয় বর্ষে গিয়ে তার পড়াশোনা করে আবার প্রথম বর্ষে ফিরে আসতে হলে তিন বছরই বৃথা যাবে।
শিক্ষার্থীরা আরও বলছেন, এভাবে প্রমোশন না দিয়ে সিলেবাস শর্ট করে পরীক্ষা নেওয়া হলে অথবা বিকল্প পদ্ধতিতে মূল্যায়নের ব্যবস্থা করলে আমরা বেশি উপকৃত হতাম। সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী রিমন বলেন, বর্তমান শ্রেণিতে থেকে ইয়ার লস হচ্ছে এটা এক বিপদ অন্যদিকে দ্বিতীয় বর্ষে গিয়ে দুই বর্ষের পড়াশোনা ও পরীক্ষা দেওয়া আরেক বিপদ।
নন-এমপিও শিক্ষকদের বেতন দেওয়ার নির্দেশ
অধিভুক্ত বেসরকারি অনার্স কলেজগুলোয় কর্মরত নন-এমপিও শিক্ষকদের বেতন দিতে সংশ্লিষ্ট কলেজগুলোর প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলেছে, শিক্ষকদের বেতন না দেওয়া হলে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অনার্সের অধিভুক্তি বাতিল করা হবে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এ নির্দেশনা দিয়ে কলেজগুলোয় চিঠি পাঠানো হয়েছে। গত মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দফতর থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ বিষয়টি জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত বেসরকারি অনার্স কলেজগুলোকে জানানো যাচ্ছে যে, অনার্স অধিভুক্তি প্রদানের আগে ওই কোর্সের নিয়োগ করা শিক্ষকদের বিষয়ে কলেজ থেকে দেওয়া অঙ্গীকারনামা মোতাবেক তাদের বেতন-ভাতাদি নিয়মিত দেওয়ার জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হলো। এ নির্দেশনা পালন করা না হলে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অধিভুক্তি বাতিলের কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে।