মেডিকেলে পড়ার সুযোগ পেলো দরিদ্র কৃষকের ছেলে আরিফুল
এইচ এম আলমগীর কবির, সিরাজগঞ্জ
🕐 ২:৪০ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ০৭, ২০২১
২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের এমবিবিএস কোর্সের প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় মেধাক্রমে ২৩৩৩তম হয়ে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের কৃষকের ছেলে মো. আরিফুল ইসলাম।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ কেন্দ্র থেকে পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ১০০ নম্বরের মধ্যে তিনি পেয়েছেন ৭১.২৫ নম্বর। এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণের ফলাফল ঘোষণার পর আরিফুলের পরিবার ও আগনুকালী গ্রাম জুড়ে আনন্দের অশ্রু বইছে। অদম্য ইচ্ছাশক্তিই তাদের সফলতার পথ দেখিয়েছে আরিফুল। শিক্ষা জীবনজুড়েই আর্থিক দুশ্চিন্তা ছিল আরিফুলের নিত্যসঙ্গী। মেধার জোরে সব বাঁধা জয় করে মেডিকেলে পড়ার সুযোগ পেয়েছেন।
আরিফুল সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার বেলতৈল ইউনিয়নের আগনুকালী গ্রামের মো. আবুল কাশেম ও রেনু বেগমের ছেলে। ৪ সন্তানের মধ্যে আরিফুল সবার ছোট। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি আরিফুলের পিতা একজন কৃষক।বাড়িতে রয়েছে একটি টিনের ঘর। সেই একটি ঘরেই থাকেন পরিবারের সবাই। বোন দুইটা বিয়ে হয়েছে, আরিফুলের বড় ভাই আবু রায়হান পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজে ম্যানেজমেন্ট এর উপর মাস্টার্স করছেন।
আরিফুল ছোটবেলা থেকেই অত্যন্ত মেধাবী, সে আগনুকালী পশ্চিম পাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পি এস সি পরীক্ষায় জিপিএ ৪.৮৩, খাষসাতবাড়ীয়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জি এস সি পরীক্ষায় জিপিএ ৫ ও ট্যানেলপুলে বৃত্তি পান। এসএসসিতে জিপিএ ৫ ও রাজশাহী নিউ গভর্নমেন্ট ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন।
আরিফুল ছোট থেকেই তার ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন ছিল। স্বপ্ন পূরণের জন্য তিনি অধিকাংশ সময়ই লেখাপড়ার পিছনে ব্যয় করেছেন।
আরিফুল জানান, স্কুল-কলেজে পড়াশুনার সময় মন চাইলে একটা ভালো পোশাক কিনতে পারতাম না। কারণ আমার জন্ম গরিবের ঘরে। মা-বাবা খুশি হয়ে যা কিনে দিতেন, আমি তাতেই খুশি থাকতাম। স্কুল ও কলেজে পড়াশুনা করা অবস্থায় বিভিন্ন দিক দিয়ে সহযোগিতা করেছেন স্থানীয় সকল স্যার। আর এজন্য সকল স্যারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।
এ বিষয়ে ফেসবুকের মাধ্যমে মানবসেবাকারী মামুন বিশ্বাস জানান, আরিফুল আমার গ্রামের ছেলে, খুবই ভাল একজন ছেলে। ছোটবেলা থেকে দেখেছি খুব ভদ্র। আরিফুলের বাবা অনেক কষ্ট করে ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছেন৷ আরিফুল পড়াশুনা সম্পন্ন করে ভালো একজন চিকিৎসক হয়ে দেশ ও দেশের পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য সারাজীবন কাজ করবে বলে আমি আশাবাদী।
আগনুকালী পশ্চিম পাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় (অবসর প্রাপ্ত) প্রধান শিক্ষক আলহাজ্ব মাহবুবুল হোসেন জোস্না বলেন, আরিফুল অত্যন্ত মেধাবী ছেলে সে সুযোগ পাওয়ায় আমরা গর্বিত। সে আমাদের বিদ্যালয়সহ ইউনিয়নবাসীর মুখ উজ্জ্বল করেছে।
আরিফুল ও তার পরিবার দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন। পড়াশুনা সম্পন্ন করে ভালো একজন চিকিৎসক হয়ে দেশ ও দেশের পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য সারাজীবন যেন কাজ করতে পারেন।
০৭.০৪.২০২১