কলিমউল্লাহকে বেরোবিতে অবাঞ্চিত ঘোষণা
নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ৭:৫৫ অপরাহ্ণ, মার্চ ০৪, ২০২১
ঢাকায় রিপোটার্স ইউনিটে সংবাদ সম্মেলন করে শিক্ষামন্ত্রী, ইউজিসি ও সরকারের বিভিন্ন উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের নিয়ে মিথ্যাচার ও বিরূপ মন্তব্য করার অভিযগে উপাচার্য (ভিসি) নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহকে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) অবাঞ্চিত ঘোষণা করেছে শিক্ষকদের সংগঠন বঙ্গবন্ধু পরিষদ। বৃহস্পতিবার (৪ মার্চ) বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে উপাচার্যের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় এ ঘোষণা দেয়া হয়।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের অনিয়ম-দুর্নীতি এবং ঢাকায় মিথ্যাচার, শিক্ষামন্ত্রীসহ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদেরকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যের প্রতিবাদে সন্ধ্যায় মশাল মিছিল ও তার কুশপুত্তলিকা দাহ করার কর্মসূচি নেয় সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতাধীন শেখ হাসিনা হল, ড. ওয়াজেদ রিসার্চ ইনস্টিটিউট এবং স্বাধীনতা স্মারকের কাজে উপাচার্যের সরাসরি দুর্নীতির প্রমাণের তদন্ত প্রতিবেদনকে প্রত্যাখ্যান করেন কলিমউল্লাহ। এসময় উপাচার্য বলেন, ‘আমি শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপুমনির ষড়যন্ত্র ও রাজনীতির শিকার। ইউজিসির রিপোর্টের দায় শিক্ষামন্ত্রীর। শিক্ষামন্ত্রীর অফিস থেকে কয়েক পৃষ্ঠার খণ্ডিত অংশ নিয়ে লিক করা হয়েছে। এটা ন্যাক্কারজনক রাজনীতির একটা অপকৌশল।’
উপাচার্যের এমন মন্তব্যের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বঙ্গবন্ধু পরিষদ। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান অভিযোগ করে বলেন, ‘উপাচার্য নিয়োগ পাওয়ার পর থেকে রাষ্ট্রপতির নির্দেশনা অমান্য করে ক্যাম্পাসে ধারাবাহিক অনুপস্থিতি, ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির ঘটনা ধামাচাপা দেয়া, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উন্নয়ন প্রকল্পের দুর্নীতি ধামাচাপা দিতে শিক্ষামন্ত্রী, ইউজিসি ও রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিয়ে মিথ্যাচার ও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেছে।’
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, উপাচার্য তার সংবাদ সম্মেলনে ইউজিসিকে দেওলিয়াপনা বলে মন্তব্য করে নিজের দুর্নীতি ঢাকতে চেষ্টা করেছেন। এজন্য বঙ্গবন্ধু পরিষদ উপাচার্য নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহকে বিশ্ববিদ্যালয়ে অবাঞ্চিত ঘোষণা করা হলো।
তিনি বলেন, উপাচার্য নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ ইউজিসির নির্দেশনা অমান্য করে জনবল নিয়োগ, শিক্ষক ও জনবল নিয়োগে দুর্নীতি ও অনিয়ম, নিয়োগ বোর্ডের সভাপতি ভিসি হয়েও অনুপস্থিতি থাকা, নিরাপত্তাহীন ক্যাম্পাস, ইচ্ছেমতো পদোন্নতি, আইন লঙ্ঘন করে একাডেমিক প্রশাসনিক পদ দখল ও ক্রয় প্রক্রিয়ায় নীতিমালা লঙ্ঘন, উপাচার্যের অননুমোদিত ও অনিয়মতান্ত্রিক ফাউন্ডেশন ট্রেইনিং, ঢাকাস্থ লিয়াজো অফিসে অতিরিক্ত খরচ, অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা, চরম শিক্ষক সংকটসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িত।
মশিউর রহমান বলেন, গত ২৫ ফেব্রুয়ারি তার বিরুদ্ধে উঠা দুর্নীতির অভিযোগ বিষয়ে ইউজিসির তদন্ত প্রতিবেদনে অভিযুক্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ায় আজ তিনি ঢাকায় বসে মিথ্যাচার করেছেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা তার দায়িত্ব নেওয়ার দুই বছর পর অভিযোগ করেছি। কিন্তু তিনি সংবাদ সম্মেলনে আগের ভিসিকে দোষ দিচ্ছেন। তাহলে দুই বছরে তিনি কী করলেন। তার সময়েই তো নকশা পরিবর্তনসহ যত দুর্নীতি হয়েছে। তার নিকটাত্মীয়দের দিয়ে ভার্সিটি ভরিয়ে ফেলেছেন। নিজের কাছের লোক দিয়ে অনিয়ম করেই চলেছেন।’
সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, ‘ভিসি সংবাদ সম্মেলনে মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীকে আক্রমণ করে কথা বলেছেন। স্পিকারসহ সরকারের কর্তাদের বিরুদ্ধে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য রেখেছেন। এমনকি ইউজিসি বিষয়েও বাজে মন্তব্য করেছেন। সরকারের উন্নয়নসহ সবকিছু বিষয়েই তিনি বিভ্রান্তিমূলক মন্তব্য করেছেন। তাই তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যাম্পাসে তাকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করা হলো। অতিসত্তর এসব মন্তব্যের জন্য ক্ষমা না চাইলে তার বিরুদ্ধে আন্দোলনসহ আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হব আমরা।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হয়ে সংগঠনের সহ-সভাপতি তারিকুল ইসলাম বলেন, ‘উপাচার্যের মদদে যে নানান অনিয়ম-দুর্নীতি হয়েছে এবং উপাচার্য নিজেও আইন অমান্য করে চলছেন, যার ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নসহ পড়াশোনার পরিবেশ স্থবির হয়ে পড়েছে। আমরা চাই দুর্নীতিবাজ উপাচার্যের শাস্তি এবং তাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রত্যাহার করা হোক।’
এ সময় রসায়ন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. আব্দুল লতিফসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।