ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

একুশে বইমেলা কড়া নাড়ছে

কে এম জাহেদ
🕐 ৯:৪৬ পূর্বাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২১

একুশে বইমেলা কড়া নাড়ছে

সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এবং বাংলা একাডেমিতে শ্রমিকের কাজের গতিই বলে দিচ্ছে দরজায় কড়া নাড়ছে বাঙালির প্রাণের অমর একুশে বইমেলা। আর মাত্র ১৮ দিন পর শুরু হচ্ছে প্রাণের মেলা। এ লক্ষ্যে প্রায় ৩ লাখ বর্গফুট জায়গায় এখন চলছে হাতুড়ি-পেরেকের ঠোকাঠুকি, রঙ-ব্রাশের মাখামাখি। নির্মাণ, সাজগোজের কর্মযজ্ঞ। উদ্যানে শ্রমিকদের কাজের গতি দেখেও সেটাই বোঝা যায়। এবারের বইমেলায় সর্বোচ্চ নিরাপত্তা প্রদানের পরিকল্পনা করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। করোনার মধ্যেই বইমেলা অনুষ্ঠিত হবে বলে স্বাস্থ্যবিধি মানায় কড়াকড়ি থাকবে। প্রথমবারের মতো প্রবেশদ্বার হিসেবে যুক্ত হচ্ছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন সংলগ্ন গেট। অন্য বছরের তুলনায় এবার বাড়ানো হয়েছে মেলার পরিসর। বাড়ছে স্টল ও প্রকাশনীর সংখ্যাও। এমনটাই জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এবং বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা যায়, এক মাসের আয়োজন সফল করতে প্রস্তুতি শুরু করেছে বাংলা একাডেমি। রাত-দিন শ্রমিকরা ব্যস্ত স্টল তৈরির কাজে। কেউ মাটিতে গর্ত করছেন, আবার কেউ পুঁতছেন বাঁশ। কেউ আবার সেগুলো সাজিয়ে বাঁধছেন। আবার মাথায় রয়েছে অনাকাক্সিক্ষত বৃষ্টির ক্ষতি এড়ানোর প্রস্তুতিও। গত বছর বৃষ্টিতে ভিজে যায় কয়েকটি প্রকাশনার স্টলের বই। তাই এবার বৃষ্টিতে ক্ষতির মোকাবিলায় বাড়তি প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।

জানা গেছে, এবারের বইমেলায় দর্শনার্থী, লেখক, প্রকাশকসহ দেশের বিশিষ্টজনদের নিরাপত্তা দিতে সর্বকালের সেরা নিরাপত্তা ব্যবস্থার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। বিশেষ নিরাপত্তার আওতায় থাকবে বাংলা একাডেমির বইমেলা প্রাঙ্গণ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়-টিএসসি, দোয়েল চত্বর, শাহবাগ, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। বিভিন্ন পয়েন্টে থাকবে র‌্যাব ও পুলিশের চেকপোস্ট।

বাংলা একাডেমি সূত্রে জানা গেছে, গতবারের মতো এবারও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে থাকছে মেলার অন্যতম আকর্ষণ। তাই এবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গতবারের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণের বেশি জায়গা নিয়ে মেলার আয়োজন করা হয়েছে। অন্য বছরের তুলনায় এবার বাড়ানো হয়েছে মেলার পরিসর। বাড়ছে স্টল ও প্রকাশনীর সংখ্যাও। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ আর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রায় তিন লাখ বর্গফুট জায়গাজুড়ে হবে এবারের বইমেলা। এ ছাড়া জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে এবারের বইমেলার আকর্ষণ একটু বেশি। মেলার আনুষ্ঠানিকতাও হবে বঙ্গবন্ধুকে কেন্দ্র করে। আয়োজনেও আনা হবে বৈচিত্র্য। মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে থাকবে বিভিন্ন আসর ও সাহিত্যালোচনা। করোনাভাইরাসের শঙ্কার মধ্যেই বইমেলা অনুষ্ঠিত হবে বলে স্বাস্থ্যবিধি মানায় কড়াকড়ি থাকবে।

বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ জানায়, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে এবারের বইমেলা সাজবে ‘হে স্বাধীনতা’ থিমে। একুশের চেতনাকে ধারণ করে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং মুজিব জন্মশতবর্ষ- সবকিছুই উঠে আসবে এ বইমেলায়। মেলা শুরু হবে ১৮ মার্চ এবং শেষ হবে ১৪ এপ্রিল অর্থাৎ বাংলা নববর্ষ ১৪২৮ বরণের মধ্য দিয়ে। সে সময়ে ঝড়-বৃষ্টির আশঙ্কা বিবেচনায় রেখে এবারের মেলায় আগতদের জন্য নিরাপদ আশ্রয়ের ব্যবস্থাও থাকবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী বলেন, আমরা মুজিববর্ষকে ধারণ করে এবারের বইমেলায় স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীকে প্রাধান্য দেব। এ ছাড়া এবারের মেলায় কয়েকটি দৃশ্যগত পরিবর্তন আসবে।

তিনি জানান, এবার মেলায় প্রথমবারের মতো প্রবেশদ্বার হিসেবে যুক্ত হচ্ছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন সংলগ্ন গেটটি। মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশের বাকি দুই প্রবেশপথ হবে টিএসসি এবং বাংলা একাডেমির উল্টোদিকের মন্দির সংলগ্ন গেট।

বইমেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ও বাংলা একাডেমির পরিচালক ড. জালাল আহমেদ বলেন, মেলার আগে টিএসসি থেকে দোয়েল চত্বর পর্যন্ত সড়কটি পরিচ্ছন্ন করে দেওয়ার জন্য মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা চলছে। মার্চ মাসে মেলা হওয়ায় ঝড়-বৃষ্টির বিষয়টিও বিশেষ বিবেচনায় নিতে হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, ১৯৭৪ সালে বাংলা একাডেমির উদ্যোগে একটি বিশাল জাতীয় সাহিত্য সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ সম্মেলনের উদ্বোধন করেন। সে উপলক্ষে সাত-আটজন প্রকাশক একাডেমির ভেতরে পূর্ব দিকের দেয়াল ঘেঁষে বই সাজিয়ে বসে যান। সে বছরই প্রথম বাংলা একাডেমির বিক্রয়কেন্দ্রের বাইরে অন্য প্রকাশকদের বই বিক্রির ব্যবস্থা করা হয়। ১৯৮৩ সালে মনজুরে মওলা যখন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক, তখন তিনি বাংলা একাডেমিতে প্রথম ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’র আয়োজন করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বইমেলা করা সম্ভব হয়নি। ১৯৮৪ সালে সাড়ম্বরে বর্তমানের অমর একুশে গ্রন্থমেলার সূচনা হয়।

 
Electronic Paper