ঢাকা, বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪ | ৩ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

রাবির তিন উন্নয়ন প্রকল্পে রি-টেন্ডার

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
🕐 ১২:১৯ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১৮, ২০২১

রাবির তিন উন্নয়ন প্রকল্পে রি-টেন্ডার

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) তিনটি উন্নয়ন প্রকল্পে রি-টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। আগেরবার পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ দিতে না পারায় ‘নতুন নাটক’ বলছেন অনেকেই। প্রায় ২৫ কোটি টাকা ব্যয় সাপেক্ষ এ তিন উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ রি-টেন্ডার করার অভিযোগ উঠেছে প্রকৌশল শাখা ও পরিকল্পনা উন্নয়ন দফতরের প্রকৌশলীদের বিরুদ্ধে। টেন্ডারের সকল শর্ত পূরণ করার পরও নিয়ম বহির্ভূতভাবে এ রি-টেন্ডার আহ্বান করা হলো, বলছেন অনেকেই। টেন্ডারবাণিজ্যের সঙ্গে রাবি প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন প্রকৌশলী-কর্মকর্তা ও কর্মচারী সরাসরি যুক্ত বলেও রয়েছে অভিযোগ।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাবির প্রকৌশল শাখার একটি সূত্র জানায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী (ডিপ্লোমা) মো. আবুল কালাম আজাদ. অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. আবুল কাশেম, পরিকল্পনা উন্নয়ন দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক খন্দকার শাহারিয়ার রহমান, একই দপ্তরের উপ-পরিচালক মো. মশিউর রহমানসহ কতিপয় কর্মকর্তা ঠিকাদারের সঙ্গে বিশেষ সখ্য গড়ে তুলেছেন। তাদেরকে কাজ পাইয়ে দিতে এসব কর্মকর্তা সরকারি নিয়মনীতি লঙ্ঘন করে একের পর এক টেন্ডার সংক্রান্ত অনিয়ম করে চলেছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে রাবি শিক্ষক কোয়ার্টারের জন্য ১০তলা ভবন নির্মাণকাজটি সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে মেসার্স শিকদার কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড বিল্ডার্সের পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তাকে না দিয়ে কাজটি রি-টেন্ডার করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রায় ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তন সংস্কার ফেজ-১ এর কাজটির সর্বনিম্ন দরদাতা পিইএল অ্যান্ড জিজিইএল জেভি এবং প্রায় ৬ কোটি টাকার কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তন সংস্কার ফেজ-২ এর সর্বনিম্ন দরদাতা এইচসিপিএল-সিটিএল সিটিআইজেভিও পায়নি কাজ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বোটানি বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার গোলাম কাউসার চাকরিতে যোগদানের পর থেকেই কোটি কোটি টাকার ঠিকাদারি কাজ করে আসছেন। ঠিকাদারি কাজে জড়িত প্রকৌশল শাখার সহকারী স্টোর কিপার রাতুল। তিনি অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. আবুল কাশেমের অধীনে স্টোরের দায়িত্ব পালন করেন। তারা বর্তমানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বড় বড় কাজের ঠিকাদারি করেন বেনামে। এছাড়া কোটেশনের কাজগুলো রাতুলকে দিয়ে করান প্রকৌশলী মো. আবুল কাশেম। তিনি পানি সরবরাহ শাখার দায়িত্বেও আছেন। অভিযোগ উঠেছে নিজস্ব মিস্ত্রি দ্বারা রাবি স্টোরের মালামাল দিয়ে কাজ করান ও কোটেশনের বিল বিভিন্ন নামে তুলেন এই কর্মকর্তা। এছাড়া বারী, বাদশা, আল-আমিন, মতিহার ট্রেডার্স আমজাদ হোসেনসহ বিভিন্ন লাইসেন্সে ঠিকাদারি কাজ করান বলেও অভিযোগ রয়েছে। এ নিয়ে রাবিতে প্রকৌশলীদের মাঝে ক্ষোভ ও অসন্তোষ রয়েছে।

একাধিক ঠিকাদারের অভিযোগ, টেন্ডার ডন, রাতুল, মামুনসহ পছন্দের ঠিকাদারদের মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে ঠিকাদারি কাজ পাইয়ে দেন নূরে আলম মামুন। তিনি প্রকৌশল শাখার নিম্নমান সহকারী সমমান (চেইনম্যান)। অথচ তার মাধ্যমে ‘পাঁচ শতাংশ টাকা’র বিনিময়ে কাজ বিনিময় হয় বলে দাবি অভিযোগকারীদের।

এ ব্যাপারে বোটানি বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার গোলাম কাউসার বলেন, আগে ঠিকাদারি কাজ করেছি। বর্তমানে আমার লাইসেন্স বাতিল হয়েছে। তাই আর কাজ করি না। এরপরই ফোন কেটে দেন তিনি।

প্রকৌশল শাখার সহকারী স্টোর কিপার রাতুল বলেন, আমি কোন ঠিকাদারি কাজ করি না। জড়িতও ছিলাম না।

এ ব্যাপারে ঠিকাদার মমতাজুর রহমান ডন বলেন, রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ে আমি নিয়মিত ঠিকাদারি কাজে অংশ গ্রহণ করি এবং ইজিপির মাধ্যমে ব্রাইট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্সে পাওয়া কাজগুলো ক্রয় করে কাজ করে থাকি। ইজিপির সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে গোপন সখ্যের বিষয় অস্বীকার করে তিনি বলেন, নিয়ম অনুযায়ী আর অন্য সব ঠিকাদারদের মতোই আমি কাজ করে থাকি। তবে আমি কোন অনিয়মের সাথে জড়িত নই।

প্রধান প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ বলেন, ইজিপির মাধ্যমে যে টেন্ডারগুলো হয়, সেগুলো আমরা শুধুই দেখভাল করি। কোটেশনের কাজগুলো নিয়ম অনুযায়ী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হয়। এছাড়া অন্য সব অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি।

এ ব্যাপারে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আবুল কাশেম বলেন, এসব ব্যাপারে আমার কোনো কিছু জানা নেই। তিনি প্রধান প্রকৌশলীর সাথে কথা বলার পরামর্শ দিয়েই কল কেটে দেন।

এ বিষয়ে জানতে পরিকল্পনা উন্নয়ন দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক খন্দকার শাহারিয়ার রহমানের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি কল রিসিভ করে কোন কথা না বলেই কেটে দেন। পরে বারবার চেষ্টা করেও যোগাযোগ সম্ভব হয়নি।

 
Electronic Paper