ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪ | ৩ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

গবেষণাশূন্য জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

মুজাহিদ বিল্লাহ, জবি
🕐 ১১:১৩ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ১৮, ২০২১

গবেষণাশূন্য জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) গবেষণা সংখ্যা শূন্য, বলছে ইউজিসির বার্ষিক প্রতিবেদন ২০১৯। অথচ ইউজিসি প্রতিবেদনের সঙ্গে মিল নেই বিশ্ববিদ্যালয় তথ্যে। বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাবে গবেষণা প্রকল্প সংখ্যা প্রায় দেড়শ। আর এ খাতে বরাদ্দও ছিল সোয়া কোটি টাকা। জবি ছাড়াও সম্প্রতি প্রকাশিত ইউজিসির বার্ষিক প্রতিবেদন ২০১৯-এ আরও ১৯ বিশ্ববিদ্যালয়কে গবেষণাশূন্য দেখানো হয়েছে। ইউজিসির এমন তথ্যে বিব্রত বোধ করছেন জবির শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। যদিও তথ্যের অসামঞ্জস্যতা প্রসঙ্গে জবির অসহযোগিতাকে দায়ী করেছেন ইউজিসির সদস্য ও প্রতিবেদন সম্পাদনা পরিষদের অধ্যাপক ড. সাজ্জাদ হোসেন। যদিও ‘তথ্য না পেয়ে থাকলে তাদের লেখা উচিত ছিল তথ্য পাওয়া যায়নি’ বলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান।

২০১৯ সালে বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষে প্রকাশিত বিশেষ জার্নালে দেখা যায়, ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে জবির গবেষণা খাতে বরাদ্দ ছিল ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা। একই শিক্ষাবর্ষে মোট বাস্তবায়ন হওয়া প্রকল্প ছিল ১৪৩ টি। এ ছাড়া গবেষণাধর্মী গ্রন্থ প্রকাশ পেয়েছে ১০টি। এর মধ্যে আন্তর্জাতিক প্রকাশনা আছে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সুরঞ্জন কুমার দাসের ১টি, একই বিভাগের অধ্যাপক ড. নূরে আলম আবদুল্লাহর ২টি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. অরুণ কুমার গোস্বামীর ১টি, রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. আবুল কালাম মো. লুৎফুর রহমানের ২টি, একই বিভাগের ড. মো. শাহাজানের ৩টি গ্রন্থ।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, অধ্যাপকের সংখ্যা ৯৬ জন। যার মধ্যে পিএইসডি শেষ করেছেন ৯৪ জন। বাকি ২ জন পিএইচডি অধ্যায়নরত। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে এমফিল ও পিএইচডি শিক্ষার্থী সংখ্যা যথাক্রমে ৩৫ ও ২৮।

গবেষণা দফতরের পরিচালক অধ্যাপক ড. নূর আলম আবদুল্লাহ বলেন, ‘২০১৯ সালে আমাদের ১৪৩টি গবেষণা বাস্তবায়িত হয়েছে। অধ্যাপকদের মধ্যে ২ জন ছাড়া সবার পিএইচডি শেষ। তবে তথ্যের গরমিলের বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারবো না। সে সময় আমি গবেষণা দফতরের দায়িত্বে ছিলাম না।’

এ বিষয়ে ইউজিসির সদস্য ও প্রতিবেদন সম্পাদনা পরিষদের অধ্যাপক ড. সাজ্জাদ হোসেন বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অসহযোগিতায় এর জন্য দায়ী। তিনি বলেন, ‘জগন্নাথের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ে অবশ্যই গবেষণা থাকবে। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে চিঠি দিয়ে তথ্য আহ্বান করি। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে বারবার যোগাযোগ করা হলেও সাড়া মেলে না। আমাদের চেষ্টা থাকে জুন-জুলাইয়ের মধ্যে প্রতিবেদন প্রকাশ করা। কিন্তু এ ধরনের সীমাবদ্ধতার কারণে সম্ভব হয় না। আগামীতে অনলাইনে অটোমেশনের চিন্তাভাবনা আছে আমাদের, যাতে এ ধরনের তথ্য বিভ্রাট মুক্ত থাকা যায়।’

অসহযোগিতার প্রসঙ্গ টেনে জানতে চাওয়া হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান খোলা কাগজকে বলেন, ‘তাদের লেখা উচিত ছিল তথ্য পাওয়া যায়নি। আমাদের গবেষণা চালু ছিল না আগে, এমফিল-পিএইসডি প্রোগ্রাম চালুর পর থেকে আমাদের গবেষণা শুরু হয়। ইউজিসি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থায়নে শিক্ষকদের গবেষণা প্রকল্প দেওয়া হয়েছে, অনেক পাবলিকেশন হয়েছে। তবে ১৯ সালের পর আমাদের গবেষণা, প্রকাশনা আরও বেড়েছে। যেটা হয়েছে ইউজিসির সাথে তথ্য গ্যাপ হয়েছে।’

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও আরও নয়টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়ে ইউজিসি ৪৬তম বার্ষিক প্রতিবেদন তথ্য আলোড়ন সৃষ্টিকারী তথ্য দিয়েছে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শিক্ষার্থী রয়েছে এমন ৯ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৯ সালে গবেষণার পেছনে এক টাকাও ব্যয় করেনি। সেসব বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হলো- দি পিপল’স ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয়, ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড ইউনিভার্সিটি, নর্থ বেঙ্গল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, আনোয়ার খান মডার্ন ইউনিভার্সিটি, রবীন্দ্র মৈত্রী বিশ্ববিদ্যালয়, ফার্স্ট ক্যাপিটাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ এবং জেড এইচ সিকদার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। বেসরকারি এসব বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের মোট ১৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা নেই বলে ওই প্রতিবেদনে প্রকাশ।

এ বিষয়ে ইউজিসি সদস্য (বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়) অধ্যাপক বিশ্বজিৎ চন্দ গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘গবেষণা একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম অনুষঙ্গ। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার জন্য একটি নির্দিষ্ট বাজেট থাকে। যে সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয় কোনো গবেষণা করেনি তাদের বিষয়টি খতিয়ে দেখা উচিত। বিষয়টি নেতিবাচক।’

 
Electronic Paper