ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৫ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

গুরুত্বপূর্ণ কমিটির বৈঠকে অনীহা

তোফাজ্জল হোসেন
🕐 ১:০৯ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ০৭, ২০২১

গুরুত্বপূর্ণ কমিটির বৈঠকে অনীহা

বিশ্ববিদ্যালয়ে সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও নানা সমস্যা দূর করতে বছরে অন্তত একবার সভার আয়োজন করবে বোর্ড অব ট্রাস্টিজ। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০-এ এমন নির্দেশনা রয়েছে। কারণ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থায়ন, হিসাব-নিকাশ অনুমোদন, বাজেট অনুমোদনসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব বোর্ড অব ট্রাস্টিজের। কিন্তু বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একবছরে একবারও গুরুত্বপূর্ণ এই কমিটির কোনো বৈঠকই করেনি। এ ছাড়া সিন্ডিকেট, একাডেমিক কাউন্সিল, অর্থ কমিটিসহ আরও বেশ কয়েকটি কমিটির বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়নি অনেক প্রতিষ্ঠানে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) বার্ষিক প্রতিবেদন-২০১৯ এ এসব তথ্য উঠে এসেছে।

তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালে একাডেমিক কার্যক্রম চালু থাকা ৯৪ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে বোর্ড অব ট্রাস্টিজের কোনো সভা অনুষ্ঠিত হয়নি কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ব্রিটানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, আনোয়ার খান মডার্ন ইউনিভার্সিটিতে। ইউজিসি বলছে এসব বৈঠক না করার ফলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন লঙ্ঘন করছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যাবলী, প্রশাসনিক কার্যাবলী, সাধারণ ব্যবস্থাপনা, তত্ত্বাবধান ও পরিচালনার দায়িত্ব সিন্ডিকেটের। কিন্তু উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এক বছরে সিন্ডিকেট সভার কোনো বৈঠক করেনি। এ সভা না করার তালিকায় রয়েছে সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি, প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটি, জেডএইচ সিকদার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ফেনী ইউনিভার্সিটি, এনপিআই ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি, বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয়, ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড ইউনিভার্সিটি, দ্য ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব স্কলার্স।

বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি, শিক্ষাদান, পাঠ্যসূচি প্রণয়নসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পাদনের দায়িত্ব একাডেমিক কাউন্সিলের। কিন্তু বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় গত বছর গুরুত্বপূর্ণ এ কাউন্সিলের কোনো বৈঠকই করেনি। একাডেমিক কাউন্সিলের বৈঠক হয়নি এমন বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় রয়েছে- বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি, দ্য ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব স্কলার্স, ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি, সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি, আনোয়ার খান মডার্ন ইউনিভার্সিটি, ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড ইউনিভার্সিটি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক সব বিষয়ে সিন্ডিকেট ও বোর্ড অব ট্রাস্টিজকে পরামর্শ ও সুপারিশ দেবে অর্থ কমিটি। কিন্তু অনেক বিশ^বিদ্যালয়ে অর্থ কমিটির কোনো বৈঠকই অনুষ্ঠিত হয়নি। অর্থ কমিটির বৈঠক না হওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় রয়েছে-কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি, প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি, প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটি, জেডএইচ সিকদার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, নর্থ বেঙ্গল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব ইউনিভার্সিটি, রণদা প্রসাদ সাহা বিশ্ববিদ্যালয়, কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, গ্লোবাল ইউনিভার্সিটি, দ্য ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব স্কলার্স, ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি, সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, আনোয়ার খান মডার্ন ইউনিভার্সিটি ও ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড ইউনিভার্সিটি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইউজিসির এক কর্মকর্তা বলেন, গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন কমিটির বৈঠক না হওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক অনিয়ম হয়। আর অনিয়ম করতেই তারা এক বছরেও কোনো বৈঠক করেন না। বিশ্ববিদ্যালয়ের চরিত্র এমন হওয়া অনুচিত।

ইউজিসির সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান বলেন, যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে এক বছরেও গুরুত্বপূর্ণ এসব কমিটির বৈঠক হয় না তাদের লেখাপড়া নয়, ব্যবসাই মূল উদ্দেশ্য। ব্যবসা করার উদ্দেশ্যেই বিশ্ববিদ্যালয় খুলে বসেছে তারা। এই বিশ^বিদ্যালয়গুলো সরকারের আইনের কোনো তোয়াক্কাই করে না।

তিনি বলেন, যারা সরকারের আইন মানে না তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থাই নেওয়া হয় না। তাই তাদের আইন ভাঙার প্রবণতাও বেশি। যারা আইন অমান্য করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ইউজিসিকে কোনো ক্ষমতাই দেওয়া হয়নি। যাদের হাতে ক্ষমতা রয়েছে তারা ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে উদাসীন।

এ বিষয়ে ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহ বলেন, যেসব বিশ্ববিদ্যালয় গুরুত্বপূর্ণ এসব বৈঠক করেনি তাদের চিঠি দিয়ে সতর্ক করা হবে।

 

 

 

 
Electronic Paper