জবিতে নিয়ম ভেঙে চলছে অনলাইনে পরীক্ষা
মুজাহিদ বিল্লাহ, জবি
🕐 ৬:২৪ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ০৬, ২০২১
করোনায় বন্ধ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। ক্লাস চলছে অনলাইনে। তবে ক্লাস চললেও অনলাইনে পরীক্ষা নিতে আছে প্রশাসনিক নিষেধ। কিন্তু সেই স্পষ্ট নির্দেশনা না মেনেই এক প্রকার জোরপূর্বক চলছে অনলাইনে পরীক্ষা। কিছু বিভাগ এরই মধ্যে জারি করেছে অনলাইনে মিডটার্মের নোটিশও। সব কিছুই যখন খোলামেলা তখনও উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলছেন, ‘অনলাইনে কেউ পরীক্ষা নিচ্ছে না’।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মহামারীর কারণে গত মার্চ মাস থেকে বন্ধ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) ক্যাম্পাস। শিক্ষা কার্যক্রম চালু রাখতে গত জুলাই থেকে অনলাইনে ক্লাস নিচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। তবে অনলাইনে মিডটার্ম অথবা কোনো পরীক্ষা নেওয়া যাবে না প্রশাসন থেকে রয়েছে স্পষ্ট নির্দেশনা। আজও জানা যায়, গত ২ জুলাই উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমানের সভাপতিত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার, সকল অনুষদের ডিন, ইনস্টিটিউটের পরিচালক, রেজিস্ট্রার, বিভাগীয় চেয়ারম্যানদের নিয়ে অনলাইন বৈঠকে কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর মধ্যে ছিল- জুলাই থেকে অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর কথা। সেই অনুযায়ী গত জুলাই থেকে চলছে অনলাইনের ক্লাস।
ইন্টারনেট গোলযোগ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও মফস্বলে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কথা চিন্তা করে জানানো হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের সব বিভাগ ও ইনস্টিটিউটকে অনলাইন ক্লাসের ভিডিও ইউটিউব ও ফেসবুকে আপলোড করতে হবে, যেন শিক্ষার্থী যেকোনো সময় তা দেখতে পারে। আরও বলা হয়, মিডটার্ম বা কোনো পরীক্ষা অনলাইনে নেওয়া যাবে না। তবে অ্যাসাইনমেন্ট অনলাইনে নেওয়া যাবে।
জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্দেশনা না মেনে মার্কেটিং ও জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে দেওয়া হয়েছে মিডটার্মের রুটিন। রুটিন অনুযায়ী মার্কেটিংয়ে আজ বুধবার (৬ জানুয়ারি) এবং জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ২ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হবে এ পরীক্ষা। অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্তে বিপাকে পড়েছেন বিভাগগুলোর শিক্ষার্থীরা।
তাদের অনেকে মুঠোফোনে জানিয়েছেন, ‘দুর্বল ইন্টারনেট গতি, ডিভাইস স্বল্পতার কারণে যেখানে অনলাইন ক্লাসেই অংশ নিতে পারছেন না, সেখানে পরীক্ষা কীভাবে দেবে’ তাছাড়া গ্রামে থাকায় অনেক শিক্ষার্থী সংগ্রহ করতে পারেননি কোর্স সম্পর্কিত বই এবং নোট। এ ছাড়া অনলাইনে ক্লাস টেস্ট নিচ্ছে পরিসংখ্যান, ল্যান্ড ল’, আইইআরসহ বেশকিছু বিভাগের শিক্ষকরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মার্কেটিং বিভাগের এক শিক্ষার্থী খোলা কাগজকে জানান, এভাবে হঠাৎ করে পরীক্ষা নেওয়া আমাদের কাছে হঠাৎ কোভিড ১৯ আসার মতোই ভয়াবহ। আমরা গ্রামের অনেক ছেলেমেয়েই নিয়মিত ক্লাস করতে পারিনি। কারও ডিভাইস প্রবলেম, কারও ডেটা প্রবলেম তো কারও ফাইনান্সিয়াল প্রবলেম। আমাদের অনেক সহপাঠী আছে যারা বাসা থেকে মাইলখানেক দূরে এসে গাছে উঠে পর্যন্ত ক্লাস করেছে। হাতের কাছে নেই বই। আমাদের নোটিশে রেকর্ডেড ক্লাস দেওয়ার কথা থাকলেও তা দেওয়া হয় নি। বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা সব বন্ধুরা গ্রুপ স্টাডি করে প্রায় সব সমস্যার সমাধান করে ফেলতাম, কিন্তু এখন সেই সুযোগও নেই।
এ বিষয়ে মার্কেটিং বিভাগের বিভাগীয় প্রধান শেখ রফিকুল ইসলাম বলেন, আসলে এটা কন্টিনিউয়াস অ্যাসেসমেন্টের অংশ। আসলে জমে থাকা পরীক্ষাগুলো যাতে ক্যাম্পাস খুললে শিক্ষার্থীদের বোঝা হয়ে না দাঁড়ায় তাই বিভাগের একাডেমিক কাউন্সিল এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্দেশনা না মানা প্রসঙ্গে তিনি খোলা কাগজকে বলেন, যেহেতু এটা বিভাগের একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত, তাই কাউন্সিলই এ বিষয়ে বক্তব্য দিতে পারবে।
জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. দিলারা ইসলাম শরীফ বলেন, আমরা রুটিন দিলেও পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছাইনি। আগামী সপ্তাহের মধ্যে একাডেমিক কাউন্সিলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলেন, অনলাইনে কেউ পরীক্ষা নিচ্ছে না, যাদের চাপ হয়ে গেছে তারা স্বশরীরে ক্যাম্পাসে এসে পরীক্ষা দিবে। অনলাইনে শুধু অ্যাসাইনমেন্ট নেওয়া যাবে।