ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে পরীক্ষকের কেন্দ্র বণ্টন হবে লটারিতে

বিশেষ প্রতিবেদক
🕐 ৯:৩৯ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ০৫, ২০২১

প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে পরীক্ষকের কেন্দ্র বণ্টন হবে লটারিতে

সারাদেশে প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচির (পিইডিপি-৪) আওতায় প্রাক-প্রাথমিকে মোট ৩২ হাজার ৫৭৭ জন নিয়োগ দেবে সরকার। এর বিপরীতে ১৩ লাখের বেশি আবেদন পড়েছে। বিশাল এ সংখ্যক প্রার্থীর পরীক্ষা নিতে হিমশিম খেতে হয় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরকে (ডিপিই)। সর্বশেষ ২০১৮ সালের নিয়োগে প্রশ্নফাঁস ঠেকানো গেলেও কেন্দ্র ভিত্তিক অনিয়ম বন্ধ করা যায়নি। ওই সময় পাঁচটি জেলায় বিভিন্ন কেন্দ্রের মধ্যে পরীক্ষার্থীদের বলে দেওয়া, প্রশ্ন সমাধানে বাইরে থেকে লোক ডেকে এনে কেন্দ্রের ভেতরে ঢোকানোর ঘটনা ঘটে। আসন্ন পরীক্ষায় এসব অনিয়ম বন্ধে পরীক্ষকদের ব্যাপারে নতুন সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে ডিপিই। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, পরীক্ষকদের নজরদারিতে রাখার পাশাপাশি পরীক্ষক কোন কেন্দ্রে ডিউটি করবেন তা লটারির মাধ্যমে নির্ধারণ হবে এবং পরীক্ষা শুরুর এক থেকে দেড় ঘণ্টা আগে তাকে জানানো হবে।

এতে পরীক্ষা হলের মধ্যে পছন্দের পরীক্ষার্থীকে বলে দেওয়া বা আগে থেকে কেন্দ্র চুক্তি নেওয়ার সুযোগ থাকবে না। জানা গেছে, গত জানুয়ারি বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মধ্যে এ সংক্রান্ত একটি বৈঠক হয়। যেখানে পরীক্ষার্থীদের মতো পরীক্ষকদের ডিউটি লটারির মাধ্যমে নির্ধারণ করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়।

বৈঠকে বুয়েটের প্রতিনিধি জানান, এখন থেকে দুই বা তিন দিন আগে শিক্ষক কোথায় ডিউটি করবেন তা না জানানো হবে না। তিনি পরীক্ষার ডিউটিতে থাকবেন- সেটা জানবেন কিন্তু কোন কেন্দ্রে দায়িত্বে থাকবেন তা জানবেন না। সেটি জানবেন পরীক্ষা শুরুর এক ঘণ্টা আগে। এতে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ও প্রভাবশালীদের চাপ এবং কেন্দ্রভিত্তিক চুক্তি করে নকল করার সুযোগ আর থাকবে না।

সংশ্লিষ্টরা জানান, পরীক্ষার দিন পরীক্ষকরা জেলার নির্দিষ্ট একটি জায়গায় অবস্থান করবেন। এক ঘণ্টা আগে লটারির মাধ্যমে তার কেন্দ্র জানিয়ে দেওয়ার পর তিনি সেখানে যাবেন। জেলা শিক্ষা অফিস ছাড়াও স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে এটা করা হবে।

এর আগে জেলা শিক্ষা অফিসের মাধ্যমে একদিন আগেই পরীক্ষককে তার কেন্দ্র জানিয়ে দেওয়া হতো। এতে স্থানীয় প্রভাবশালী ও রাজনৈতিক চাপ আসত তার উপর। কেন্দ্রভিত্তিক চুক্তি হতো পরীক্ষার্থীদের নকলের সুযোগ বা হলে বলে দেওয়ার জন্য।

এ বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক আলমগীর মোহাম্মদ মনসুরুল আলম বলেন, এবার সহকারী শিক্ষক নিয়োগের আরও স্বচ্ছতা আনতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো পরীক্ষার হলে দায়িত্বরত পরীক্ষককে নজরদারির মধ্যে রাখা এবং তাদের ডিউটি লটারির মাধ্যমে ঠিক করা। কারণ সর্বশেষ ২০১৮ সালে নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁসসহ যেসব অনিয়ম হয়েছে তার বেশিরভাগ হয়েছে পরীক্ষার কেন্দ্র থেকে। তিনি জানান সেজন্য দুইদিন আগে নয় এবার পরীক্ষকের কেন্দ্র এক ঘণ্টা আগে জানানো হবে। সেজন্য বুয়েট ও ডিপিই টেকনিক্যাল কমিটি এ সংক্রান্ত কাজ প্রায় শেষ করেছে।

ডিপিই কর্মকর্তারা জানান, গত পরীক্ষায় ৮ সেট প্রশ্ন করা হয়েছিল। এবার প্রশ্নের সেট বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে কত সেট হবে সেটা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। এ ছাড়াও আগে পরীক্ষায় যেসব জেলায় প্রশ্নফাঁস ও পরীক্ষার হলে ঝামেলা হয়েছে সেসব জেলা থাকবে অতিরিক্ত পর্যবেক্ষণে। প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচির (পিইডিপি-৪) আওতায় প্রাক-প্রাথমিকে ২৫ হাজার ৬৩০ জন এবং বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিকে সহকারী শিক্ষকের শূন্য পদে রাজস্ব খাতে ৬ হাজার ৯৪৭ জন অর্থাৎ মোট ৩২ হাজার ৫৭৭ জন নিয়োগ দেওয়া হবে। তিন পার্বত্য জেলা (রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান) ছাড়া বাকি সব জেলা থেকে প্রায় ১৩ লাখ আবেদন পড়েছে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে, বর্তমান সরকার ক্ষমতার আসার পর ২০০৯ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মোট ১ লাখ ৯৭ হাজার ৮৬৪ জন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)। পরীক্ষার প্রশ্ন প্রণয়ন, চাকরিপ্রার্থী ও পরিদর্শককের সিট বণ্টন, খাতা মূল্যায়নসহ সব কিছুই বুয়েট করে। আর প্রধান শিক্ষকের পদটি দ্বিতীয় শ্রেণির হওয়ায় পিএসসির মাধ্যমে বিসিএস চূড়ান্ত পরীক্ষা উত্তীর্ণদের মধ্য থেকে এ পদে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে।
তবে সহকারী শিক্ষক নিয়োগের দায়িত্ব বুয়েটকে দেওয়ার পর শিক্ষক নিয়োগে তেমন কোনো বিতর্ক নেই।

বুয়েটের তত্ত্বাবধানে হওয়া প্রায় সবকটি নিয়োগ প্রায় স্বচ্ছভাবে হয়েছে। ডিপিই কর্মকর্তারা জানান, এক সময় প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস,পরীক্ষার হলে উত্তর লিখে দেওয়া থেকে চাকরি নিশ্চিত করার কন্ট্রাক নিত দালাল চক্র।

বুয়েটকে দায়িত্ব দেওয়ার পর সে ঘটনা আর ঘটছে না। তবে বুয়েটের মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া দীর্ঘমেয়াদি সমাধান নয়। যে কারণে প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রণালয়ের নীতি-নির্ধারকরা কমিশন গঠনের পক্ষে।

 
Electronic Paper