ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

করোনায় শিক্ষাপঞ্জি এলোমেলো

নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ৯:৩৬ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ২৬, ২০২০

করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে আগামী বছরের (২০২১) এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষাও নির্ধারিত সময়ে নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তবে তিন মাসের সংক্ষিপ্ত সিলেবাস করা হয়েছে। ‘সংক্ষিপ্ত’ সিলেবাস করার কারণেই এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা দুই থেকে এক মাস পিছিয়ে যেতে পারে। ওই সিলেবাসের আলোকেই তিন মাস ক্লাস করতে পারবে শিক্ষার্থীরা।

গতকাল বুধবার স্কুলে ভর্তি নিয়ে আয়োজিত এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি এসব কথা জানিয়েছেন। প্রেস ব্রিফিংয়ে সংযুক্ত ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী। এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য তিন মাসের সংক্ষিপ্ত সিলেবাস করা হয়েছে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের আলোকে আমরা তাদের তিন মাস ক্লাস করাতে চাই। সে কারণে হয়তো এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা দু-এক মাস পিছিয়ে যাবে।’ সাধারণত প্রতি বছর ফেব্রুয়ারির শুরুতে এসএসসি ও এপ্রিলের শুরুতে এইচএসসি পরীক্ষা হয়। কিন্তু এবার করোনাভাইরাসের কারণে পুরো শিক্ষাপঞ্জি এলোমেলো হয়ে গেছে। গত ১৭ মার্চ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি চলছে। এই ছুটি সর্বশেষ ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত বহাল থাকবে।

সব শ্রেণিতেই ভর্তি লটারিতে
২০২১ শিক্ষাবর্ষে সরকারি ও বেসরকারি স্কুলে ভর্তি হতে কোনো পরীক্ষা নেওয়া হবে না। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন স্কুলগুলোতে প্রথম শ্রেণির মতো সব শ্রেণিতেই লটারির মাধ্যমে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে। আগামী ৭ ডিসেম্বরের মধ্যে ভর্তির বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। তিনি বলেন, বর্তমানে শুধু প্রথম শ্রেণিতে লটারি এবং অন্য ক্লাসগুলোর জন্য ভর্তি পরীক্ষা হয়। এবার স্বাস্থ্য ঝুঁকি এড়াবার জন্য আমরা প্রতি শ্রেণিতেই লটারির মাধ্যমে ভর্তি সম্পন্ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এতে আপাতদৃষ্টিতে বিষয়টিকে হয়তো অযৌক্তিক মনে হবে, তা হলো যোগ্যতার চাইতে ভাগ্যকে গুরুত্ব দেওয়া। ডা. দীপু মনি আরও বলেন, ‘ভাগ্যের উপরে নির্ভর করতে হবে বলেই এবার ভর্তির ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর যোগ্যতার বিষয়টি অনেকেই ভাববেন অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু একটু ভালো করে লক্ষ্য করলে বোঝা যাবে, প্রক্রিয়াটি যোগ্যতাভিত্তিক না হয়ে ভাগ্যভিত্তিক হলেও আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় একটা বড় ও ইতিবাচক পরিবর্তনের সুযোগ তৈরি হবে।

দীপু মনি বলেন, ঢাকা মহানগরীতে ক্যাচেমেন্ট এরিয়ায় (বিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকা) কোটা বিদ্যমান ৪০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে এবার ৫০ শতাংশ করা হবে। ক্লাস্টারভিত্তিক লটারিতে বিদ্যমান একটি স্কুল পছন্দের পরিবর্তে পাঁচটি স্কুল পছন্দের সুযোগ দেওয়া হবে। লটারিতে পূর্ণ স্বচ্ছতার মাধ্যমেই ভর্তি করানো হবে। ডিসেম্বরের মধ্যেই ২০২০ সালের এইচএসসির ফল প্রকাশ করা হবে বলেও অনলাইন ব্রিফিংয়ে জানান শিক্ষামন্ত্রী। তিনি বলেন, কবে থেকে আবার ক্লাস শুরু হবে তা নির্ভর করছে করোনা পরিস্থিতির ওপর। তবে যখনই ক্লাস শুরু হবে শুরুর দিকে বেশ কিছু স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করতে হবে সবাইকে। সেক্ষেত্রে হয়তো সবার সব দিন ক্লাস নাও হতে পারে। তবে এসএসসি ও এইচএসসি শিক্ষার্থীদের ক্লাসে জোর দেওয়া হবে বেশি। তাদের হয়তো একদিন বাদে বাকি সব দিনই ক্লাস নেওয়া হবে।

ভর্তি ফি ছাড়া অন্য কোনো ফি নেওয়া যাবে না
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি জানিয়েছেন, করোনার কারণে এ বছর সরকারি-বেসরকারি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলে প্রথম থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত লটারির মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এই ভর্তির সময় ভর্তি ফি ছাড়া অন্য কোনো ফি নেওয়া যাবে না। তবে টিউশন ফি ও অত্যাবশ্যকীয় বেসরকারি কর্মচারী এবং কম্পিউটার ফি নেওয়া যাবে। ভর্তির সময় কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অতিরিক্ত ফি নিলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ভর্তি কার্যক্রম ১০ থেকে ১৫ জানুয়ারির মধ্যে শেষ করা হবে। তবে চলমান করোনা পরিস্থিতির কারণে লটারি অনুষ্ঠানের সময় আগের মতো অভিভাবক শারীরিকভাবে উপস্থিত থাকতে পারবেন না। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, যারা নতুন করে ভর্তি হবে, তাদের ভর্তি ফি নেওয়া যাবে। তবে ভর্তির সঙ্গে বার্ষিকসহ অন্যান্য ফি নেওয়া যাবে না। আর নতুন ক্লাসে যারা উত্তীর্ণ হচ্ছে তাদের ক্ষেত্রেও বার্ষিক চার্জসহ অন্য ফি নেওয়া যাবে না। তবে করোনা পরিস্থিতি ঠিক হলে তখন যেসব কার্যক্রম করা যাবে, সেই সাপেক্ষে ওইসব কার্যক্রমের ফি নেওয়া যাবে।

করোনার সংক্রমণের কারণে এ বছরের প্রায় সব পরীক্ষাই বাতিল বা ভিন্ন উপায়ে মূল্যায়ন করা হচ্ছে। বাতিল করা হয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী ও ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা, অষ্টম শ্রেণির জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষাও বাতিল করা হয়েছে। সর্বশেষ এ বছরের এইচএসসি পরীক্ষাও বাতিল করা হয়েছে। জেএসসি-জেডিসি এবং এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফলের আলোকে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হবে। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর লটারিসহ একাধিক প্রস্তাব দিয়েছিল। একটি প্রস্তাব ছিল অনলাইনে ভর্তি পরীক্ষা, আরেকটি ছিল বেশি দিনে পরীক্ষা নেওয়া। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের এসব প্রস্তাবের মধ্যে লটারির মাধ্যমে ভর্তির প্রস্তাব গ্রহণ করল শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

 

 
Electronic Paper