বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চিত্র
স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসার শিক্ষকরা ভালো নেই
ওয়ালিয়ার রহমান
🕐 ১০:০৪ পূর্বাহ্ণ, জুন ২৬, ২০২০
মহামারি করোনায় চরম অর্থকষ্ট ও সংকটে আছেন স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসার প্রায় ২২ হাজার শিক্ষক। পরিস্থিতি যতই লম্বা হচ্ছে, তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে দুঃখ-দুরবস্থা, আর্থিক কষ্ট ও টানাপোড়েন। লজ্জায় কারও কাছে হাত বাড়াতেও পাচ্ছেন না। সবমিলিয়ে ভালো নেই এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা। অনেক মাদ্রাসা আছে যেগুলো ছাত্র-ছাত্রীদের মাসিক বেতন, টিউশন ফি সংগ্রহ করেই শিক্ষকদের বেতন-ভাতা দিত। এখন মাদ্রাসা বন্ধ থাকায় টিউশন ফিও নিতে পারছে না তারা। করোনা পরিস্থিতি উন্নতি না হলে এবং আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বন্ধ থাকলে এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা আরো বেশি দুঃখ-কষ্টের মধ্যে পড়বে।
বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য মতে, চার হাজার ৩১২টি স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসায় ২১ হাজার শিক্ষক থাকলেও বাস্তবে মাদ্রাসা ও শিক্ষকের সংখ্যা আরো বেশি। এসব মাদ্রাসার মধ্যে এক হাজার ৫১৯টি এমপিওভুক্ত।
জানা গেছে, এমপিওভুক্ত মাদ্রাসাগুলোর শিক্ষকরা ২০১৩ সালের আগ পর্যন্ত ৫০০ টাকা, পরবর্তী সময়ে এক হাজার, বর্তমানে প্রধান শিক্ষক দুই হাজার ৫০০ এবং সহকারী শিক্ষকরা দুই হাজার তিনশ’ টাকা করে ভাতা পাচ্ছেন। বাকি প্রায় ৩ হাজার মাদ্রাসার শিক্ষকরা দীর্ঘদিন ধরে বেতন-ভাতা থেকে বঞ্চিত। বেতন-ভাতা না পাওয়ায় অনেক ইবতেদায়ি মাদ্রাসার অস্তিত্ব বিলীন হয়ে গেছে এরই মধ্যে। হাজার হাজার শিক্ষক কোনো বেতন-ভাতা না পেয়েই অবসর গ্রহণ করেছেন। যুগের পর যুগ অতিবাহিত হলেও কেউ যেন ইবতেদায়ি শিক্ষকদের করুণ আর্তনাদ শুনছে না। দৃষ্টি দিচ্ছে না তাদের মানবেতর জীবনযাপনের দিকে।
যদিও চলতি অর্থবছরে এসব প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তিতে প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি ও বরাদ্দ থাকলেও কাজ শেষ করতে পারেনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
বাংলাদেশ স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা শিক্ষক পরিষদ সভাপতি এস এম জয়নাল আবেদিন জিহাদী বলেন, চলতি অর্থবছরে আমাদের মাদরাসা এমপিওভুক্তির বরাদ্দ থাকলেও তা আটকে আছে। করোনার মধ্যে আমাদের শিক্ষকরা চরম কষ্টে জীবনযাপন করছেন। আর কত দিন বেতন ছাড়া চাকরি করব আমরা? চলতি অর্থবছরের মধ্যেই ইবতেদায়ি মাদরাসা এমপিওভুক্তি ঘোষণার দাবি জানাচ্ছি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন শিক্ষক বলেছেন, কোনো রকম পরিবারের খরচ সামাল দিচ্ছি। সরকারের আর্থিক অনুদানও নেই। চক্ষু লজ্জার ভয়ে কাউকে বলতেও পারছি না আবার সইতেও পারছি না। তারা বাঁচার তাগিদে প্রণোদনা ও এমপিওভুক্তির দাবি করেন।
এদিকে চলতি বাজেটে মাদরাসাগুলো জাতীয়করণের ঘোষণা না আসলে করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যেই আগামী ১ জুলাই থেকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছেন স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা শিক্ষক সমিতির নেতারা। যদিও গত ২৮ মে জারি করা প্রজ্ঞাপনে সবপ্রকার সভা-সমাবেশ ও জনসভার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
বাংলাদেশ স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা শিক্ষক সমিতির মহাসচিব কাজী মোখলেছুর রহমান বলেন, করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে মানবেতর জীবনযাপন করছেন শিক্ষকরা। এই অবস্থায় আমাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। তাই জাতীয়করণের দাবি জানিয়ে শারীরিক দূরত্ব মেনেই ২১ জুন মানববন্ধন করেছি। আগামী ১ জুলাইয়ের মধ্যে জাতীয়করণের ঘোষণা না এলে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করেছি।
তিনি আরও বলেন, সরকার ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে তথ্য সংগ্রহ করছে। যাচাই-বাছাই করে প্রকৃত প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষকদের কথা বিবেচনায় নিয়ে সরকারিকরণের দাবি জানাচ্ছি। ১ জুলাইয়ের মধ্যে সরকারিকরণের ঘোষণা না আসলে শারীরিক দূরত্ব মেনেই লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালন করবো।
উল্লেখ্য, ইসলামী প্রাথমিক শিক্ষার প্রয়োজন পূরণ করতে চালু হয় স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা। দেশে তিন ধরণের মাদ্রাসা শিক্ষা রয়েছে। আলিয়া, কওমি ও ফোরকানিয়া। আলিয়া মাদ্রাসার প্রাথমিক স্তরকে ইবতেদায়ি বলা হয়। এ স্তরটি কোনো কোনো ক্ষেত্রে উচ্চ শ্রেণির আলিয়া মাদ্রাসার সঙ্গে সংযুক্ত। আবার কিছু আছে স্বতন্ত্র।