যথাসময়ে হচ্ছে না ডাকসু নির্বাচন
সিনজাত রহমান সানি, ঢাবি
🕐 ১০:০৬ অপরাহ্ণ, মার্চ ০৯, ২০২০
প্রায় তিন দশক পর নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে গত বছরের ১১ মার্চ অনুষ্ঠিত হয় দেশের দ্বিতীয় পার্লামেন্ট হিসাবে খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন। নির্বাচিত ভিপি, জিএস ও এজিএসসহ ডাকসুর ২২ জন প্রতিনিধি ২৩ মার্চ দায়িত্ব গ্রহণ করেন। সেই হিসাবে ২০১৯-২০২০ সেশনের এক বছর মেয়াদি ডাকসুর মেয়াদ বাকি আছে আর ১৩ দিন।
ভিপি নুর বলছেন, ডাকসুর সর্বশেষ কার্যনির্বাহী সভায় উপাচার্য ও ডাকসুর ২৩ জন প্রতিনিধির (ছাত্রলীগ প্যানেল থেকে বিজয়ী) কাছ থেকে যথাসময়ে নির্বাচন নিয়ে কোনো সাড়া পাইনি।
এদিকে ছাত্রলীগ প্যানেল থেকে নির্বাচিত এজিএস সাদ্দাম বলেছেন, আমরা উপাচার্যের কাছে আহ্বান জানিয়েছি যেন নির্বাচনের সব প্রস্তুতি গ্রহণ করে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়।
ডাকসুর একাধিক সদস্য বলছেন, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্বাচন না হলে ডাকসুর কার্যক্রম আরও ৯০ দিন বাড়ানোর প্রস্তাব উঠতে পারে ডাকসুর সভায়। যা গঠনতন্ত্রেও রয়েছে।
ডাকসুর গঠনতন্ত্রের (সংশোধিত) ৬ এর ‘গ’ ধারায় বলা আছে, সংসদে নির্বাচিত কার্যনির্বাহী পদাধিকারগণ ৩৬৫ দিনের জন্য কার্যালয়ের দায়িত্ব পালন করবেন। যদি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন না করা যায়, তাহলে কার্যনির্বাহী পদাধিকারগণ অতিরিক্ত ৯০ দিন অথবা নির্বাচন অনুষ্ঠানের পূর্ব পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবেন। নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া মাত্র আগের সংসদ বাতিল হয়ে যাবে।
ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুর খোলা কাগজকে বলেন, আমি এবং সমাজসেবা সম্পাদক গত ৮ ফেব্রুয়ারি ডাকসুর কার্যনির্বাহী সভায় যথাসময়ে নির্বাচনের জন্য ডাকসুর সভাপতির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে কোনো সাড়া পাইনি এবং ডাকসুর অন্যান্য সদস্যেরও কোনো প্রতিক্রিয়া পাইনি। সে দিক থেকে মনে হচ্ছে শিগগিরই ডাকসু নির্বাচনের সম্ভাবনা নেই। অন্যদিকে ডাকসুর বিষয়ে প্রশাসনও নীরব আছে। যদিও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাতন্ত্র আছে তবুও সরকারের বিবেচনায় থাকে, সেদিক থেকে সরকারের অনাগ্রহ আছে বলে মনে হচ্ছে।
যথাসময়ে ডাকসু নির্বাচন চান কি-না এমন প্রশ্নে নুর বলেন, আমরা চাই যথাসময়ে ডাকসু নির্বাচন হোক। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যদি চায় তাহলে না হওয়ার কোনো অবকাশ নেই। যে ডাকসু ২৮ বছর পর নির্বাচনের মাধ্যমে সচল অবস্থা ফিরে পেয়েছে তার ধারাবাহিকতা যেন অব্যাহত থাকে। ডাকসু হওয়ার পর ক্যাম্পাসে কিছুটা হলেও গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরে এসেছে, যার ফলে ছাত্র রাজনীতিতে একটা ইতিবাচক পরির্বতন এসেছে।
তিনি বলেন, যখন যে সরকার এসেছে তারা ডাকসুর নির্বাচন বন্ধ রাখার চেষ্টা করেছে কারণ অন্যায়-অনিয়ম ও দেশের স্বর্থ বিরোধী বিভিন্ন বিষয়ে ছাত্রদের একটা মতামত থাকে, বর্তমান সময়ে কিছুটা হলেও ছাত্রদের মাঝে আগের মত প্রতিবাদী চেতনা কাজ করছে যার কারণে সরকার চাইবে না ডাকসু নির্বাচন যথা সময়ে হোক। এ ছাড়া নির্বাচন না হওয়ার কোনো যৌক্তিক কারণ দেখছি না।
ডাকসুর এজিএস সাদ্দাম হোসেন বলেন, আমরা চাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যেন কোন ধরনের বিলম্ব না করে ডাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে। ২৮ বছর পর একটি নির্বাচন করে আত্মতৃপ্তি নিয়ে থাকার কোনো সুযোগ নেই। ডাকসু নির্বাচন প্রত্যেক মেয়াদ শেষে যথাসময়ে হতে হবে এবং এটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অধিকার।
ছাত্রলীগ থেকে নির্বাচিত ডাকসুর ২৩ জন প্রতিনিধির মতামত বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা ডাকসুর সর্বশেষ সভায় উপাচার্যের প্রতি আহ্বান জানিয়েছি এই মর্মে যে, সব প্রস্তুতি গ্রহণ করে যেন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়।
ডাকসুর সাধারণ সম্পাদক (জিএস) গোলাম রাব্বানী বলেন, যদি নির্দিষ্ট সময়ে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা না হয়, তাহলে ডাকসুর গঠনতন্ত্র অনুযায়ী আরও ৯০ দিন পর্যন্ত ডাকসু চলবে। আর যদি নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয় তাহলে তখনই আমরা সভা ডেকে ডাকসুর বডিকে বিলুপ্ত ঘোষণা করবো। তবে, ডাকসুর সময়সীমা বাড়ানোর সম্ভাবনা আছে।
এ বিষয়ে পদাধিকার বলে ডাকসুর সভাপতি ও বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, যথা সময়ে সবকিছু হবে। অনুমান করে মন্তব্য করা যাবে না। যেটা যেখানে আছে, সেটা সেখানে থাকুক। সব বিষয় দেখে যথাযথ সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।