ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

ঢাবিতে শিবির সন্দেহে ৪ ছাত্রকে রাতভর নির্যাতন

ঢাবি প্রতিনিধি
🕐 ১০:২৫ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২২, ২০২০

বুয়েট ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যার চার মাস না পেরুতেই শিবির সন্দেহে একই কায়দায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) চার ছাত্রকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে।

গত মঙ্গলবার রাত ১১টা থেকে ২টা পর্যন্ত স্ট্যাম্প, রড ও হাতুড়ি দিয়ে শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের গেস্টরুমে ওই ছাত্রদের মারধর করা হয়। পরে শাহবাগ থানায় সোপর্দ করা হয় তাদের। বুধবার (২২ জানুয়ারি) বেলা দেড়টার দিকে ছেড়ে দেয় পুলিশ।

জানা গেছে, মারধরের শিকার ওই চার ছাত্র হলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের সানওয়ার হোসেন, ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের মো. মুকিম চৌধুরী, একই বর্ষের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের মিনহাজ উদ্দীন ও আরবি বিভাগের আফসার উদ্দীন। মঙ্গলবার রাতেই নির্যাতনে আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এদিকে ওই ঘটনার প্রতিবাদে গতকাল বিকাল ৪টায় শাহবাগে বিক্ষোভ মিছিল করে ডাকসু ভিপি নুরুল হকের নেতৃত্বাধীন ১২ ছাত্রসংগঠনের জোট সন্ত্রাসবিরোধী ছাত্রঐক্য।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাত ১১টার দিকে হলের গেস্টরুমে ছাত্রলীগের তথাকথিত ‘গেস্টরুম কর্মসূচি’ চলাকালে মো. মুকিম চৌধুরীকে শিবির সন্দেহে ডেকে আনা হয়। সেখানে হল ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি আনোয়ার হোসেন ও যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আমির হামজা তাদের অনুসারীদের নিয়ে মুকিমকে মানসিক নির্যাতন করেন। জানা গেছে, নির্যাতনকারী আনোয়ার হোসেন ও আমির হামজা কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়ের অনুসারী। ঘটনার সময়ে সেখানে ছিলেন হল শাখা ছাত্রলীগ ও হল সংসদের ভিপি সাইফুল্লাহ আব্বাসী অনন্তসহ বেশ কয়েকজন নেতা। শিবির সংশ্লিষ্টতা স্বীকার না করায় মুকিম চৌধুরীকে লাঠি, স্ট্যাম্প ও রড দিয়ে মারধর করা হয়। পরে তার কল লিস্ট চেক করে সানওয়ার হোসেনকে ডেকে আনেন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। পরে মিনহাজ উদ্দীন এবং আফসার উদ্দীনকেও ডেকে এনে রাত আড়াইটা পর্যন্ত নির্যাতন করা হয়।

পরে রাত ২টার দিকে হল প্রশাসন ও প্রক্টরিয়াল টিমের মাধ্যমে চার ছাত্রকে শাহবাগ থানায় সোপর্দ করেন নেতাকর্মীরা। জহুরুল হক হল সংসদের ভিপি সাইফুল্লাহ আব্বাসী অনন্ত, ছাত্রলীগ নেতা আনোয়ার হোসাইন ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমির হামজা সাংবাদিকদের জানান, চার ছাত্রের শিবির সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পেয়েছিলেন বলেই তাদের থানায় দেওয়া হয়।

নির্যাতনের বিষয়ে আমির হামজা বলেন, আমরা তাদের মারধর করিনি। শুধু জিজ্ঞাসা করেছি। তাদের কাছ থেকে শিবিরের দুটি বই পাওয়া গেছে। তবে বইয়ের ছবি ও নামের বিষয়ে কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেননি তিনি।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রব্বানী বলেন, ওই চার ছাত্র কোনো শৃঙ্খলাপরিপন্থী কাজে জড়িত কি না, তা খতিয়ে দেখতে থানায় দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল হাসান জানান, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ না পাওয়ায় ওই চার ছাত্রকে জিজ্ঞাসাবাদের পর ছেড়ে দেওয়া হয়। শিবির সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি। এ বিষয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান বলেন, ঘটনাটি শুনেছি। তবে তাদের মারধরের বিষয়ে জানি না। কারও ওপর শারীরিক আঘাত কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

 
Electronic Paper