ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

উত্তাল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

ভিসি ফারজানার বরখাস্ত দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ১০:১২ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ০৬, ২০১৯

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) উপাচার্য ফারজানা ইসলামকে অপসারণ নয়, বরখাস্ত চান আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। ছাত্রলীগের হামলার পর বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের সিদ্ধান্ত অমান্য করে সংহতি সমাবেশে আচার্যের কাছে এ দাবি জানান তারা।

পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী গতকাল সকাল ৯টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুরাদ চত্বরে সমবেত থাকেন আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। সকাল সাড়ে ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মুরাদ চত্বর থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন তারা। মিছিলটি মেয়েদের হলের দিকে গেলে হলের গেটের তালা খুলে শিক্ষার্থীরা সেই মিছিলে যোগ দেন। এরপর মিছিলটি পুরনো প্রশাসনিক ভবনের সামনের ‘উপাচার্য অপসারণ মঞ্চে’ গিয়ে শেষ হয়। দুপুর ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরনো প্রশাসনিক ভবনের সামনে উপাচার্যের অপসারণ দাবি, ছাত্রলীগের মারধর ও বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সংহতি সমাবেশ শুরু হয়। সমাবেশে অংশ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ও মানবিকী অনুষদের ডিন অধ্যাপক মোজাম্মেল হক আন্দোলনকারীদের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করেন।

সংহতি সমাবেশে অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, জাবি উপাচার্য হল খালি করে সরকারকে বোঝাতে চেয়েছেন উদ্ভূত সমস্যার সমাধান করতে এটা করা হয়েছে। কিন্তু যে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে তার সমাধান হল খালি করা না। এটার সমাধান উপাচার্যের গদি ছাড়া। তিনি বলেন, সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে শিক্ষার্থীকে পেটানোতে উপাচার্যের নৈতিকতার পূর্ণ অবক্ষয় হয়েছে।

অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক শরমিন্দ নীলোর্মী বলেন, ‘যে ক্ষমতা সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীর মনোভাব বুঝতে ব্যর্থ হয়, সেই ক্ষমতা টিকে থাকতে পারে না। বলপ্রয়োগ করে যারা ক্ষমতায় থাকতে চায়, তারা নিকৃষ্ট। বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগ দিয়ে যেভাবে হামলা চালানো হয়েছে, এরপর এই উপাচার্যকে বরখাস্ত করা উচিত।’

দর্শন বিভাগের অধ্যাপক কামরুল আহসান বলেন, ‘প্রথমদিকে উপাচার্যের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগের তদন্তের দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়েছিল। কিন্তু ভীত উপাচার্য তদন্ত কমিটির মুখোমুখি হতে চাননি। উল্টো তারিখ পাল্টানোর সঙ্গে তিনি তাল মিলিয়ে মিথ্যাচার করেছেন। উপাচার্য পদে থেকে এ ধরনের নির্লজ্জ মিথ্যাচার করার পর ফারজানা ইসলাম শুধু উপাচার্য পদ থেকেই নয়, বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে থাকার যোগ্যতাও রাখেন না।’

প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটি কালো অধ্যায় রচনা করেছেন উপাচার্য। আমার সামনে আমার ছাত্রদের শিবির তকমা দিয়ে অবরোধ কর্মসূচি থেকে তুলে নিয়ে মারধর করেছে। আমার লজ্জা, আমার শিক্ষকতার লজ্জা, এই ছাত্রলীগের ছেলে মেয়েদেরও আমি পড়াই।’

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের এই সংহতি সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক রায়হান রাইন, অধ্যাপক তপন কুমার সাহা, অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস, অধ্যাপক মির্জা তাসলিমা সুলতানা, অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক, অধ্যাপক খবির উদ্দিন, অধ্যাপক কবিরুল বাশার, অধ্যাপক শরমিন্দ নীলোর্মি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক তানজীম উদ্দিন খান প্রমুখ।

সংহতি সমাবেশ শেষে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে একটি বিক্ষোভ মিছিল উপাচার্যের বাসভবনের সামনে এসে অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা। হল ছাড়ার নির্দেশ প্রত্যাখ্যান করে স্লোগান দেন তারা। পুলিশ উপাচার্যের বাসভবন ঘিরে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি করে।

এদিকে সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত মেনে বিকেল সাড়ে ৩টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের বাড়ি ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর (ভারপ্রাপ্ত) আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, ‘অধিকাংশ হল খালি হয়ে গেছে। হলগুলোতে তালা লাগিয়ে দেওয়া হবে। এরপরও সিন্ডিকেটের নির্দেশ অমান্য করে যদি কেউ হলে অবস্থান করে তবে এর জন্য অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হলে তার দায় বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসন নেবে না।’

তিনি বলেন, ‘কারও সঙ্গে খারাপ আচরণ হোক আমরা তা চাই না। আমরা চাই বিশ্ববিদ্যালয়ে সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ বজায় থাকুক। আজীবনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকবে না। পরিবেশ স্বাভাবিক হলে তারা ফিরে আসুক। সিন্ডিকেটের নির্দেশ অমান্য করলে প্রয়োজনে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে।’

অন্যদিকে ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’-এর মুখপাত্র দর্শন বিভাগের অধ্যাপক রায়হান রাইন জানান, বিকেল সাড়ে ৩টার মধ্যে সব হল ছেড়ে শিক্ষার্থীদের চলে যাওয়ার নির্দেশ প্রত্যাখ্যান করেছেন আন্দোলনকারীরা। তারা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন। তিনি বলেন, ‘কোনো শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে শিক্ষকরা আক্রমণ করেছেন এমন নজির নেই। গতকাল প্রক্টর ছিলেন। পুলিশ ছিল। শিক্ষকরাও ছিলেন। সবার চোখের সামনে এই ঘটনা ঘটেছে। তারা নীরব ভূমিকা পালন করেছে। তারা উল্টো উসকানি দিয়েছে। শিক্ষক সমিতির সভাপতিও সেখানে ছিলেন। উপাচার্য নিরাপত্তার অজুহাত দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করেছেন। কিন্তু এই নিরাপত্তাহীনতা কে তৈরি করেছে? দুর্নীতিবাজ উপাচার্য ফারজানা করেছে। তাকে এই ক্যাম্পাসে কোনোভাবেই রাখা যাবে না। তাকে অপসারিত হতে হবে।’

সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা : নওফেল
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনকারীদের কাছ থেকে কোনো ধরনের অনিয়মের সুনির্দিষ্ট তথ্যপ্রমাণসহ অভিযোগ পেলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।

আন্দোলনকারীদের ওপর হামলায় ছাত্রলীগের কারও জড়িত থাকার প্রমাণ পেলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল বিকেলে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে এক সংবাদ সম্মেলনে নওফেল বলেন, ‘কেউ যদি মনে করে কোনো পক্ষ দোষ করেছে, কোনো অনিয়ম হয়েছে, সেই দোষ বা অনিয়মের প্রমাণাদিসহ আপনারা আমাদের কাছে আসুন। আমরা ইতোমধ্যেই প্রতিশ্রুতি দিয়েছি লিখিত অভিযোগ দিলে অবশ্যই আমরা তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেব। কিন্তু সেই ধরনের অভিযোগ আনার আগেই যদি আমরা এমন অচলাবস্থা তৈরি করে ফেলি যেখানে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয় এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়।’

 
Electronic Paper