ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪ | ৩ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

পাঁচদিন ধরে অচল জাবি

জাবি প্রতিনিধি
🕐 ১১:০৪ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ০১, ২০১৯

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) উপাচার্য ফারজানা ইসলামের অপসারণ দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের লাগাতার অবরোধ-ধর্মঘটে স্থবির হয়ে পড়েছে শিক্ষার পরিবেশ। তবে উপাচার্য সমর্থক শিক্ষকদের দাবি, প্রশাসনিক ভবন বন্ধ থাকলেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ক্লাস-পরীক্ষা হচ্ছে। গত রোববার থেকে শুরু হওয়া এই ধর্মঘটে গতকাল বৃহস্পতিবার পঞ্চম দিনেও অচল ছিল জাবি। এ ছাড়াও আগামীকাল শনিবারও সান্ধ্যকালীন ক্লাস বন্ধ থাকবে বলে জানান আন্দোলনকারীরা।

অন্যদিকে, সহকারী প্রক্টরের ওপর আন্দোলনকারীরা ‘হামলা’র দাবি করে মানববন্ধন করেছে উপাচার্যপন্থি শিক্ষকরা। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ও পুরনো প্রশাসনিক ভবন অবরোধ করেন ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ ব্যানারে আন্দোলনরত ‘বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদ’।

এদিকে গতকালের অবরোধের ফলে জাবির দফতরগুলোতে প্রবেশ করতে পারেননি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তবে সকাল ১০টার পরে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন-ভাতা উত্তোলনের সুবিধার্থে পুরোনো প্রশাসনিক ভবনের হিসাব শাখা ধর্মঘটের আওতামুক্ত রাখা হয়।

গতকাল সকালে সরেজমিন দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই প্রশাসনিক ভবনই কার্যত বন্ধ রয়েছে। আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা দুই প্রশাসনিক ভবন, বিভিন্ন একাডেমিক ভবন ও পুরাতন প্রশাসনিক ভবনের সামনে স্থাপন করা ‘দুর্নীতি বিরোধী মঞ্চে’ অবস্থান করছেন। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনের কাজ করতে আজ স্বল্প সময়ের জন্য হিসাব বিভাগের কাজ করতে দিচ্ছেন আন্দোলনকারীরা। এ ছাড়া প্রশাসনিক ভবনের অন্য কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা কেউ ভবনে প্রবেশ করতে পারেননি। তারা দুই প্রশাসনিক ভবনের বাইরে ঘোরাফেরা করছেন। উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ, নিবন্ধকসহ শীর্ষ কর্মকর্তারাও কেউ কার্যালয়ে যাননি। অন্যদিকে উপাচার্য সমর্থক শিক্ষকরা তাদের ক্লাস-পরীক্ষা নিলেও অনেক বিভাগেই নিয়মিত ক্লাস-পরীক্ষা হতে দেখা যায়নি। পূর্ব নির্ধারিত ক্লাস-পরীক্ষা বাতিলও করা হয়েছে কয়েকটি বিভাগে।

এদিকে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে সহকারী প্রক্টর মহিবুর রৌফের ওপর ‘হামলার’ অভিযোগ এনে এর প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছেন উপাচার্যের সমর্থক শিক্ষকদের সংগঠন ‘বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদ’। বেলা সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার সংলগ্ন সড়কে এ মানববন্ধন হয়।

এর আগে গত চার দিনেও প্রায় একই ধরনের অবস্থা দেখা গিয়েছে। দুর্নীতির অভিযোগে জাবি উপাচার্য ফারজানা ইসলামের অপসারণ দাবিতে আন্দোলনকারীরা ক্যাম্পাসে ক্যানভাস প্রদর্শনীও করেছেন।

আন্দোলনের পক্ষে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ এর মুখপাত্র দর্শন বিভাগের অধ্যাপক রায়হান রাইন বলেন, ‘আমরা আমাদের যৌক্তিক দাবিতে এ কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী যেভাবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কাজ করছেন, আমরাও বিশ্ববিদ্যালয়কে দুর্নীতির অভিযোগ থেকে মুক্ত করতে কাজ করছি। আন্দোলনের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ে সৃষ্ট অচলাবস্থার জন্য উপাচার্য নিজেই দায়ী। দুর্নীতির দায় নিয়ে তার অপসারণের মাধ্যমেই এ অচলাবস্থার সমাধান হবে।’

তবে ‘বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদ’ ও জাবির পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে সভাপতি অধ্যাপক আবদুল মান্নান চৌধুরী বলেন, ‘মহিবুর রৌফ (কথিত মারধরের শিকার শিক্ষক) আমাদের সহকর্মী, ছাত্র এবং তিনি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এ ছাড়া একজন ভালো অভিনেতা ও নাট্যকর্মীসহ তিনি অনেক কিছুর সঙ্গে জড়িত আছেন। তার ওপর যেভাবে আক্রমণ করা হয়েছে, সেটা দেখে আমাদের কাছে ৭১ সালের কথাই মনে পড়ে যায়।’

মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের শিক্ষক ফখরুল ইসলামের সঞ্চালনায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন, ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ডিন নীলাঞ্জন কুমার সাহা, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক নুহু আলম, নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগে শিক্ষক আমিনুল ইসলাম, এ কে এম ইউসুফ হাসান ও সোমা মুমতাজ প্রমুখ।

উপাচার্য সমর্থক শিক্ষকদের দাবি, প্রশাসনিক ভবন বন্ধ থাকলেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় ক্লাস-পরীক্ষা হচ্ছে।

সাধারণ অনেক শিক্ষার্থী জানান, আন্দোলনের কারণে তাদের ক্লাস-পরীক্ষায় বিঘ্ন হলেও দুর্নীতির বিরুদ্ধে এই আন্দোলনে তাদের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে চারটি অনুষদের বিভিন্ন বিভাগের অন্তত ১৫ জন শিক্ষার্থী জানান, ‘এই আন্দোলনে তাদের সমর্থন রয়েছে। তবে উপাচার্য সমর্থক শিক্ষকরা কয়েকদিন যাবৎ তাদের ক্লাস-পরীক্ষা নিয়ে অনেক তাড়া দিচ্ছেন, যেটা আগে করতেন না। তাই তারা অনেকেই বাধ্য হচ্ছেন ক্লাসে যেতে।’

তারা আরও বলেন, ‘উপাচার্যের উচিত দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে তদন্তের ব্যবস্থা করে এবং দায়িত্বশীল জায়গা থেকে পদত্যাগ করে বিশ্ববিদ্যালয়কে গতি এনে দেওয়া।’

তবে ভিন্নমতও দিয়েছেন বেশ কিছু শিক্ষার্থী। তারাও নাম প্রকাশ না করে বলেন, ‘এই আন্দোলন অবরোধে তাদের ক্ষতিই বেশি হচ্ছে। তারা সেশনজটের মধ্যে পড়ার আশঙ্কা করছেন। দ্রুত এই অচলাবস্থার অবসান চান তারা।’

এর আগে গত বুধবার আন্দোলনকারী এক ছাত্র নেতা ও এক নারী শিক্ষার্থীকে এক সহকারী প্রক্টর কর্তৃক লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে। ‘লাঞ্ছনার শিকার’ ছাত্র ইউনিয়ন বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সভাপতি নজির আমিন চৌধুরী জয় এবং ওই নারী শিক্ষার্থী প্রক্টরের কাছে বিচার চেয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

এদিকে, সেই সহকারী প্রক্টর মহিবুর রৌফ শৈবাল শিক্ষার্থী লাঞ্ছনার অভিযোগ অস্বীকার করে উল্টো তার ওপর হামলা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন। এর প্রতিবাদে প্রশাসনপন্থি শিক্ষকরা গতকাল বেলা ১১টার দিকে ক্যাম্পাসে একটি মানববন্ধন করেন।

 
Electronic Paper