ঢাবিতে বহিরাগত প্রশ্নে ‘অলিখিত নিষেধাজ্ঞা’
নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ১১:০৫ অপরাহ্ণ, জুলাই ১২, ২০১৮
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে অস্থিরতার মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের অনুমতি ছাড়া ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়য়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও সাবেক শিক্ষার্থীদের মাঝে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনা ও প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। এর প্রতিক্রিয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ‘বহিরাগত প্রবেশ নিষেধাজ্ঞা’ ইস্যুতে অনেকটাই ইউটার্ন নেয়।
তারা জানায়, গণমাধ্যমের খণ্ডিত বক্তব্যে এ ধরনের সমালোচনা সৃষ্টি হয়েছে। কর্তৃপক্ষের দ্বিমুখী এ বক্তব্যের মাঝেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বহিরাগত প্রশ্নে ‘অলিখিত নিষেধাজ্ঞা’ জারি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক পাঠচক্র সংগঠন বাংলাদেশ স্টাডি ফোরামের সংগঠকরা অভিযোগ করেন, ডাকসু ভবনের দ্বিতীয়তলায় তারা নিয়মিত পাঠচক্র করেন। আগামীকাল শনিবার ডাকসু ক্যাফেটরিয়ায় এ ধরনের একটা পাঠচক্র আয়োজন করেছিলেন তারা। এ জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে এক সপ্তাহ আগেই অনুমতি নেওয়া হয়েছিল। সব প্রস্তুতি নেওয়ার পরও তারা তাদের পূর্বঘোষিত পাঠচক্র বাতিল করতে বাধ্য হয়েছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী ও বাংলাদেশ স্টাডি ফোরামের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক মিল্লাত মাফি বলেন, আগামীকাল বিকালে ‘বিশ্বকাপ ফুটবল ও আমাদের সংস্কৃতি’ নিয়ে একটি পাঠচক্র আয়োজন করেছিলাম আমরা। এ জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল। অতিথি বক্তা করা হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ও বর্তমানে একটি সরকারি কলেজের শিক্ষকতা করেন এমন একজনকে। গতকাল প্রোগ্রামের বিষয়ে ডাকসু ক্যাফেটরিয়া কর্তৃপক্ষের কাছে গেলে তিনি জানান, আপনারা অনুষ্ঠান করতে পারবেন, কিন্তু বহিরাগত কেউ থাকলে সে দায়দায়িত্ব আপনাদের নিতে হবে। এ পরিস্থিতিতে আমরা আমাদের অনুষ্ঠান বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছি।
তিনি জানান, ডাকসুর দোতালার রুমগুলোতে বর্তমানে শুক্র ও শনিবার রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর বাইরে কাউকে অনুষ্ঠান করতে দেওয়া হচ্ছে না। এ ছাড়া বিকাল ৫টার মধ্যে অনুষ্ঠান শেষ করার জন্য বলা হচ্ছে। তার অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ে এক ধরনের পরিস্থিতি তৈরি করা হচ্ছে, যেখানে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড সংকুচিত হচ্ছে।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাম্প্রতিক সময়ে সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে নজরদারি ছাত্রলীগের নজরদারি রয়েছে বলে অভিযোগ করেন বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল মাহমুদ। গত সপ্তাহে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের সামনে বটতলায় সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠান চলাকালে কয়েক দফায় দলবেঁধে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এসে তাদের অনুষ্ঠানের বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে যায় বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী খোলা কাগজকে বলেন, ‘অভিযোগগুলো আদৌ সত্য নয়। প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিষয়টি পরিষ্কার করেছে। এ প্রশাসনিক ব্যবস্থার (নিষেধাজ্ঞা) সঙ্গে কোনো ছাত্র, ব্যক্তি, অন্য কোনো সংগঠনের সংশ্লিষ্টতা নেই। এটা একান্তই বিশ^বিদ্যালয়ের নিজস্ব বিষয়। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে নিরাপত্তা এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্মকাণ্ড গতিশীল করা এবং সবার জন্য সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি করা। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে ছাত্রলীগের নজরদারির বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে, এ বিষয়ে অবগত নন বলে জানান ঢাবি প্রক্টর।
গত ৯ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া বহিরাগতদের ক্যাম্পাসে প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ বিভাগের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস শুধু এর শিক্ষার্থীদের। কোনো বহিরাগতকে এখানে ঘুরে বেড়ানোর অনুমতি দেওয়া হবে না। এ ছাড়াও, কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া ক্যাম্পাসে কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজন করা যাবে না।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ঘটে যাওয়া অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার’ প্রেক্ষাপটে গত ৫ জুলাই অনুষ্ঠিত প্রভোস্ট কমিটির এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ক্যাম্পাস এবং আবাসিক হলগুলো থেকে বহিরাগতদের চিহ্নিত ও বিতাড়িত করার কাজে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সহযোগিতা নেওয়ার বিষয়েও বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।
বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের প্রধান ক্ষেত্র হিসেবে পরিচিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এ সিদ্ধান্তে সমালোচনা ও প্রতিবাদের মুখে দুই দিনের মাথায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের বক্তব্য কিছুটা পাল্টায়। প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কাউকে প্রবেশে বা গমনাগমনে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয় নাই। বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য-প্রচারের মাধ্যমে অশুভ শক্তিকে উৎসাহিত না করার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ জানানো যাচ্ছে। প্রভোস্ট কমিটির সিদ্ধান্তের বিষয়ে দেশের কিছু গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে খণ্ডিতভাবে তথ্য প্রচার করার ফলে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে।