অবশেষে ভিসি নাসিরের বিদায়
ছাইফুল ইসলাম মাছুম
🕐 ১০:৫২ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ৩০, ২০১৯
শিক্ষার্থীদের হার না-মানা আন্দোলনে অবশেষে বিদায় নিতে বাধ্য হলেন গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) উপাচার্য অধ্যাপক খোন্দকার নাসিরউদ্দিন। সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পদত্যাগপত্র জমা দেন তিনি। শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি গণমাধ্যমে বলেন, উপাচার্যের (খোন্দকার নাসিরউদ্দিন) পদত্যাগপত্র আমরা পেয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) তদন্ত কমিটির একটি প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে আলোচনা শেষে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, আমরা তদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করছি। তবে তিনি (খন্দকার নাসির উদ্দিন) আর উপাচার্য থাকতে চান না।
এর আগে রোববার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে বশেমুরবিপ্রবি উপাচার্যের অপসারণের সুপারিশ করে তদন্ত প্রতিবেদন দেয় ইউজিসি। এতে মনোবল ভেঙে যায় ভিসি খোন্দকার নাসিরউদ্দিনের। ফলে রাতের আঁধারে পুলিশ পাহারায় ক্যাম্পাস ছাড়েন তিনি। আর আজ দুপুরে তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে যান।
এদিকে একটানা ১২ দিন আন্দোলন করার পর গতকাল ভিসির পদত্যাগের খবর শোনার পর বিজয় মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। যার বহিষ্কারকে কেন্দ্র করে আন্দোলনের সূত্রপাত, আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ও একটি জাতীয় দৈনিকের ক্যাম্পাস প্রতিনিধি, সেই ফাতেমা-তুজ-জিনিয়া ভিসির পদত্যাগের খবরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। জিনিয়া খোলা কাগজকে বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন স্বৈরাচারী ভিসির অধীনে ছিলাম। উনার অনিয়ম, দুর্নীতির কারণে বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার মান তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। আন্দোলনের মুখে তিনি পদত্যাগ করায় আমরা খুশি হয়েছি। এটা সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিজয়, অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়ের বিজয়। তিনি বলেন, বিশ^বিদ্যালয়ে ভিসিসহ অনিয়ম দুর্নীতির সঙ্গে যারা যুক্ত ছিলেন, তাদের প্রত্যেককে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।
প্রসঙ্গত, গত ১১ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ও একটি জাতীয় দৈনিকের ক্যাম্পাস প্রতিনিধি ফাতেমা-তুজ-জিনিয়াকে ফেসবুকের স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে অন্যায়ভাবে সাময়িক বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। জিনিয়ার বহিষ্কারের ঘটনা নিয়ে ১৪ সেপ্টেম্বর ‘সমালোচনা মাত্রই বহিষ্কার’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করে দৈনিক খোলা কাগজ। ফেসবুক ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন ভিসি। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে জিনিয়ার বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহার দাবিতে মানববন্ধন, ভিসির কুশপুত্তলিকা দাহ, মশাল মিছিল, ঝাড়ুমিছিলসহ কর্মসূচি পালন করা হয়। ১৮ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জিনিয়ার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে নেয় এবং শিক্ষার্থীদের সব দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেন। ওই দিন রাতেই চার শিক্ষার্থী (জাহাঙ্গীর আলম, আবু তাহের, শেখ তারেক, বাবুল শিকদার) ফেসবুক লাইভে এসে ভিসির বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম তুলে ধরে ভিসির পদত্যাগ দাবি করেন।
অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, কেলেঙ্কারিসহ ১৬টি কারণ দেখিয়ে ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে ভিসি খোন্দকার নাসির উদ্দিনের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। ওই দিন অনশন শুরু করেন কয়েকজন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দমাতে ২১ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায় ভিসির অনুগত বহিরাগতরা। এতে ৫০ জনের বেশি শিক্ষার্থী আহত হন। এ হামলায় আন্দোলনের গতি আরও বাড়ে। শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় একজন সহকারী প্রক্টর পদত্যাগ করেন। ২৪ সেপ্টেম্বর ভিসির পদত্যাগের একদফা দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা সংবাদ সম্মেলন করেন। ২৫ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে যান ইউজিসির তদন্ত দল। ২৯ সেপ্টেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে বশেমুরবিপ্রবি উপাচার্যের অপসারণের সুপারিশ করে তদন্ত প্রতিবেদন দেয় ইউজিসি। অবশেষে গতকাল উপাচার্য পদ থেকে পদত্যাগ করেন খোন্দকার নাসির।