ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

সমালোচনা মাত্রই বহিষ্কারে ক্ষোভ বাড়ছে

উদ্বিগ্ন জিনিয়ার পরিবার

ছাইফুল ইসলাম মাছুম
🕐 ৯:০৩ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১৯

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ও ক্যাম্পাস সাংবাদিক ফাতেমা-তুজ-জিনিয়াকে বহিষ্কারের ঘটনা সংবাদ মাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মহলে আলোচিত ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। এমন ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সারাদেশের সচেতন শিক্ষার্থী, সাংবাদিক ও সুশীল সমাজের লোকজন। প্রতিবাদ জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়সহ একাধিক ক্যাম্পাসে মানববন্ধন করেছেন শিক্ষার্থীরা। এছাড়া বহিষ্কার প্রত্যাহার দাবিতে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছে বাংলাদেশ ক্যাম্পাস জার্নালিস্টস ফেডারেশন। আর শুধু জিনিয়া নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা সংকট নিয়ে সমালোচনা করলে বহিষ্কার করা হয়। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মহলে বাড়ছে ক্ষোভ।

এদিকে উপাচার্য খোন্দকার নাসির উদ্দিনের নির্দেশে বশেমুরবিপ্রবি সাংবাদিক সমিতি থেকেও জিনিয়াকে বহিষ্কার করা হয়েছে। জিনিয়াকে নৈতিকভাবে সমর্থন করায় ক্যাম্পাস সাংবাদিকরাও ভিসির অনুগত বাহিনী দ্বারা হামলার শিকার হয়েছেন।

জিনিয়া খোলা কাগজকে জানান, তাকে একাধিকবার মুঠোফোনে হুমকি ও সরাসরি হামলার চেষ্টা করা হয়েছে। ফেসবুকে তার আইডি ক্লোন (হুবহু একই রকম) করে মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর চেষ্টা চলছে। এতে প্রচণ্ড নিরাপত্তাহীনতায় দিন কাটাচ্ছে জিনিয়া, উদ্বিগ্ন উৎকণ্ঠায় রয়েছে তার পরিবারও। এমন পরিস্থিতিতে নিরাপত্তা চেয়ে গতকাল মঙ্গলবার গোপালগঞ্জ থানায় জিডি করেছেন ভুক্তভোগী ছাত্রী।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক খোলা কাগজকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে এই ধরনের ঘটনা অপ্রত্যাশিত। সামান্য বিষয় নিয়ে কোনো শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার ও তার জীবনকে নিরাপত্তাহীনতায় ফেলা কোনোভাবেই কাম্য নয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রসাশনের উচিত ওই ছাত্রীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।’

জিডিতে ফাতেমা-তুজ-জিনিয়া লিখেছেন, ‘আমি গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী এবং ক্যাম্পাস সাংবাদিক হিসেবে কাজ করছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে রিপোর্ট করায় দীর্ঘদিন যাবৎ কিছু অজ্ঞাত ব্যক্তিদের দ্বারা হুমকির শিকার হচ্ছি। এমনকি গত পহেলা সেপ্টেম্বর রাত ১১টায় আমার নবীনবাগ মেসে হামলার চেষ্টা হয়। এছাড়া বিভিন্নভাবে আমার ফেসবুক আইডি ক্লোন করে মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর চেষ্টা চলছে। এমতাবস্থায় আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনিয়ম, ত্রুটি বিচ্যুতি নিয়ে কথা বললে কিংবা লিখলে সঙ্গে সঙ্গে বহিষ্কারের রেওয়াজ হয়ে দাঁড়িয়েছে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে। গত কয়েক বছরে যারা উপাচার্যের বিপক্ষে কথা বলেছেন, তাদেরকে বিভিন্নভাবে হেনস্তা করা হয়েছে। শারীরিক-মানসিকভাবে হয়রানির শিকার হয়েছেন অনেকেই। গত এক বছরে বিভিন্ন মেয়াদে ৩৪ জন শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। সর্বশেষ ১১ আগস্ট এই তালিকায় যুক্ত হয়েছে জিনিয়ার নাম।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, গত ১০ আগস্ট জিনিয়া তার ফেসবুকে লেখেন, ‘একটি বিশ^বিদ্যালয়ের প্রধান কাজ কী হওয়া উচিত’। এই স্ট্যাটাসে অনেকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে মন্তব্য করেন, এটাকে ইস্যু বানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। এর আগে জিনিয়া বিভিন্ন গণমাধ্যমে বশেমুরবিপ্রবি’র শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকট, উন্নয়ন ফি’র নামে অনিয়ম, কাল্পনিক প্রকল্পে বরাদ্দ বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। এতে ভিসি নিজে ও তার আশপাশের বিভিন্ন ক্ষমতাসীন শিক্ষার্থীরা এতদিন নানাভাবে হুমকি-ধমকি দিয়ে আসছেন।

ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া খোলা কাগজকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি হচ্ছে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যদি তাদের কথা বলতে না পারে, মত প্রকাশ করতে না পারে তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি বলে আসলে অন্য কিছু থাকে না। বিশ্ববিদ্যালয়ে তো প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মতো করে কেউ শিখতে যায় না।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আশিকুজ্জামান ভূঁইয়া খোলা কাগজকে বলেন, ‘জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষার্থী সালমানের সঙ্গে তাদের ম্যাসেঞ্জারে ভিসির আইডি হ্যাক করার বিষয়ে কথা বলেছে।’ তার দাবি, আইডি হ্যাক হয়নি, তবে চক্রান্তের সঙ্গে যুক্ত থাকায় তাকে (জিনিয়া) বহিষ্কার করা হয়েছে।

 
Electronic Paper