ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১০ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

২৭ বছর পর জাকসুর পালে হাওয়া

সিইসি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া

সনজিৎ সরকার উজ্জ্বল
🕐 ১০:৫৫ অপরাহ্ণ, আগস্ট ১৬, ২০১৯

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (জাকসু) নির্বাচন বন্ধ রয়েছে দীর্ঘ ২৭ বছর ধরে। বিগত বছরগুলোতে শিক্ষার্থী ও ছাত্র সংগঠনগুলো জাকসুর দাবিতে আন্দোলন করলেও নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। সর্বশেষ গত ৩১ জুলাই জাকসু নির্বাচন-২০১৯ পরিচালনার জন্য পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আবদুল মান্নান চৌধুরীকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার মধ্য দিয়ে জাকসু নির্বাচনের পালে হাওয়া লাগল।

জাকসু নির্বাচন কমিশন গঠনের ব্যাপারে উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম বলেন, ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার সহকারী নির্বাচন কমিশনার বাছাই করে জাকসুর পূর্ণাঙ্গ নির্বাচন কমিশন গঠন করবে। আমরা আশা করছি, দীর্ঘদিনের অচলাবস্থা ভেঙে শিগগিরই জাকসু নির্বাচন আয়োজন করতে পারব।’

জাকসু সিইসি অধ্যাপক ড. আবদুল মান্নান খোলা কাগজকে বলেন, ‘ঈদের ছুটির পরেই পূর্ণাঙ্গ নির্বাচন কমিশন গঠিত হতে পারে। আমি যে দলেরই হই না কেন, সিইসি হিসেবে নিরপেক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনে সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।’

জাকসুর সিইসিকে নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন ক্যাম্পাসে ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা। জাকসুর প্রধান নির্বাচন কমিশনে সন্তুষ্ট ছাত্রলীগ, তবে শঙ্কিত অন্যরা। এ বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. জুয়েল রানা বলেন, ‘যোগ্য ও অভিজ্ঞ একজন শিক্ষকের হাতে নির্বাচনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। একটি সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের বিষয়ে আমরা আশাবাদী।’ অন্যদিকে নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে জাবি শাখা ছাত্রদল সভাপতি মো. সোহেল রানা। ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের সভাপতি নজির আমিন চৌধুরী জয় সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে প্রশাসনের আশ্বাসে সন্তুষ্টির কথা জানিয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থী দেবজ্যোতি ঘোষ বলেন, ‘ছাত্রদের দাবি আদায়ের বিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান হলো ছাত্র সংসদ। জাকসুর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা অধিকার আদায়ে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করার সুযোগ পাবে বলে আশা করি।’

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক শেখ মো. মনজুরুল হককে আহ্বায়ক করে ১২ সদস্যের জাকসু নির্বাচনসংক্রান্ত প্রস্তুতিমূলক কমিটিও ক্যাম্পাসের ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনগুলোর সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রেখেছে। আলোচনায় সংগঠনগুলো জাকসুর গঠনতন্ত্রে কয়েকটি বিষয়ে সংশোধনী প্রস্তাব দিয়েছে। এ নিয়ে কমিটির সদস্য সচিব আবদুস সালাম মিঞা খোলা কাগজকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত শাখা ছাত্রলীগ, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্রদল, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট (মার্কসবাদী) ও সাংস্কৃতিক জোটের সঙ্গে আলাপ হয়েছে। জাকসু গঠনতন্ত্র সংশোধনের বিষয়ে ছাত্র সংগঠনগুলোর সংশোধনী প্রস্তাব প্রায় কাছাকাছি। ঈদের পরে বাকি সংগঠনের সঙ্গে আলোচনা সম্পন্ন করে সংলাপের সারসংক্ষেপ প্রশাসনের কাছে পেশ করা হবে।’

ক্যাম্পাসে জাকসু নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, ‘ক্যাম্পাসে জাকসু নির্বাচনের ইতিবাচক পরিবেশ বিরাজমান। ছাত্র সংগঠনগুলো নির্বাচনকেন্দ্রিক তাদের প্রস্তুতি শুরু করেছে।’

গত ২৮ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৮তম বার্ষিক সিনেট অধিবেশনে শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে জাকসু নির্বাচন কমিশন গঠন করে নভেম্বরের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করার আশ্বাস দেন। ইতোমধ্যে ড. মো. আবদুল মান্নান চৌধুরীকে জাকসুর সিইসি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তিনি বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পর্ষদের সভাপতি এবং রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট প্রতিনিধি থেকে নির্বাচিত সিনেট সদস্য। এর আগে দ্য পিপলস ইউনিভার্সিটির ভিসির দায়িত্ব পালন করেছেন। এ ছাড়া জাবির সাবেক প্রক্টরের দায়িত্বে থাকা এই শিক্ষক দুই মেয়াদে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য ছিলেন।

১৯৭১ সালের ১২ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরুর পরের বছরই প্রথম জাকসু নির্বাচন হয়। এরপর বিভিন্ন মেয়াদে বিরতি দিয়ে আরও আটবার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সর্বশেষ ১৯৯২ সালে বিএনপি সরকারের সময় নির্বাচন হয়। এতে সহ-সভাপতি (ভিপি) নির্বাচিত হন মাসুদ হাসান তালুকদার এবং সাধারণ সম্পাদক (জিএস) হন শামসুল তাবরীজ। ১৯৯৩ সালের ২৯ জুলাই শিক্ষক ক্লাবে ছাত্ররা শিক্ষকদের ওপর হামলা চালান। এর জের ধরে তৎকালীন প্রশাসন কেন্দ্রীয় ও হল ছাত্র সংসদ ভেঙে দেয়। এরপর আর কোনো নির্বাচন হয়নি। জাকসু ভবনটি বর্তমানে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের বিকাশকেন্দ্র ‘আনন্দশালা’ এবং বিভিন্ন ব্যাচের শিক্ষা সমাপণী অনুষ্ঠান র‌্যাগ আয়োজনে ব্যবহৃত হচ্ছে।

 
Electronic Paper