বৃহস্পতিবার বুয়েটের আন্দোলনরত শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের সঙ্গে টানা চার ঘণ্টার রুদ্ধদ্বার বৈঠক শেষে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে বুয়েট ক্যাম্পাসে উপস্থিত সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন মন্ত্রী। এ সময় তিনি আরও বলেন, আন্দোলন স্থগিতে সম্মতি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। শনিবার থেকে তারা আন্দোলন ছেড়ে ক্লাসে ফিরবেন। 

বুয়েটের সাত হলের তিনজন করে প্রতিনিধির সঙ্গে আমাদের ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। তাদের সব দাবিই যৌক্তিক। কিছু দাবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বাস্তবায়ন করতে পারবে। আবার কিছু দাবি মন্ত্রণালয়ের অধীন। সেগুলো দ্রুত আমরা বাস্তবায়নের চেষ্টা করা হবে বলে উল্লেখ করেন ডা. দীপু মনি।

গত শনিবার থেকে ১৬ দাবি নিয়ে আন্দোলনে নামেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা। দাবি আদায়ের লক্ষ্যে ক্লাস-পরীক্ষা বাদ দিয়ে রাস্তায় নামেন তারা। ভিসি ও প্রশাসনবিরোধী স্লোগানে সরগরম হয়ে ওঠে বুয়েট ক্যাম্পাস। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়া শুনতে গতকাল বুয়েট ক্যাম্পাসে যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।

এজন্য গতকাল সকাল থেকে বুয়েট ক্যাফেটেরিয়ার সামনে জড়ো হয়ে মন্ত্রীর অপেক্ষায় থাকেন আন্দোলনকারীরা। শিক্ষামন্ত্রীর বেলা ১১টার দিকে আসার কথা থাকলেও বেলা ১টা পর্যন্ত যখন তিনি আসেননি এক ধরনের ‘বিভ্রান্তি’ সৃষ্টি হয় আন্দোলনকারীদের মধ্যে। দেড়িতে হলেও বিকাল সাড়ে ৩টায় উপস্থিত হন ড. দীপু মনি। এ সময় তিনি সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেন। শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়া ও অভিযোগ শোনেন।

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৈঠক শেষে শিক্ষামন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, শিক্ষার্থীদের যেসব দাবি একাডেমিক কাউন্সিল বাস্তবায়ন করতে পারবে, সেগুলো আমরা লিখিতভাবে দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছি। আমরা ভিসি মহোদয়কে অনুরোধ করব, সেগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করতে। যেসব দাবি মন্ত্রণালয়ের অধীন অর্থাৎ খেলার মাঠ, ভবন উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ সেগুলো দ্রুতগতিতে করে দেওয়ার চেষ্টা করব। পাশাপাশি ফলাফল, র‌্যাংকিং, বৃক্ষ রোপণ যেগুলো বুয়েট প্রশাসনের অধীন সেগুলোও দ্রুত মেনে নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছি। ভিসি মহোদয় আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন। আশা করি, দ্রুত সময়ের মধ্যে এসব দাবি বাস্তবায়ন হবে।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের তাদের সব দাবি লিখিতভাবে দিতে বলেছি। তারা আগামীকাল (আজ শুক্রবার) সেগুলো লিখিতভাবে দেবেন বলে জানিয়েছেন।

শিক্ষার্থীরা তাদের দাবিগুলো বুয়েটের নোটিশ বোর্ডে টাঙানোর দাবি জানান। আমরা তাদের প্রস্তাব মেনে নিয়েছি। সেগুলো নোটিস বোর্ডে টাঙিয়ে দেওয়া হবে। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের লিখিত দাবিগুলো পাওয়ার পর কাল (আজ) থেকে সেগুলো পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়নের চেষ্টা করা হবে।

ডা. দীপু মনি বলেন, বুয়েট আমাদের সবার গর্বের একটি প্রতিষ্ঠান। যেহেতু সব দাবি মেনে নিয়েছি সেহেতু আমরা আশা করি শিক্ষার্থীরা শনিবার থেকে আবারও ক্লাসে ফিরবেন এবং সচল হবে বুয়েটের স্বাভাবিক পরিবেশ।

গতকাল বিকাল সাড়ে ৩টায় শিক্ষামন্ত্রী বুয়েট ক্যাম্পাসে উপস্থিত হন। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, বুয়েট আমাদের গর্বের একটি প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠান নিয়ে সবাই গর্ব করি। যারা এখানে পড়াশোনা করেন তাদের অভিভাবকরাও সন্তানদের জন্য গর্ববোধ করেন।

এ সময় দীপু মনি বলেন, শিক্ষার্থীদের যেসব দাবি তার সবই যৌক্তিক। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এসব বিষয় নিয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন হয়। তবে উপাচার্য চাইলেই শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে তার সমাধান করতে পারতেন।

উপস্থিত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, শিক্ষার্থী ও উপাচার্যের সঙ্গে এক ধরনের ফারাক সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে কয়েক দিন ধরে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছেন। আমরা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সব সমস্যার সমাধান করব।

বৈঠক শেষে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বলেন, বৈঠক ফলপ্রসূ হয়েছে। আমরা পজিটিভ।

শিক্ষামন্ত্রী ছাড়াও এ বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, বুয়েট উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. সাইফুল ইসলাম, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের (ইইডি) প্রধান প্রকৌশলী দেওয়ান মোহাম্মদ হামজালা, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, বুয়েট ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।