ডাকসু পুনর্ভোট দাবিতে অনশন চতুর্থ দিন
অসুস্থ পাঁচ শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে ভুখা মিছিল
নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ১০:২২ অপরাহ্ণ, মার্চ ১৫, ২০১৯
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) পুনঃনির্বাচন দাবিতে ডাকা অনশন কর্মসূচি গতকাল চতুর্থ দিনেও অব্যাহত ছিল। অনশনকারী আরও তিন শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এ নিয়ে পাঁচ শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়লেন। তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তবে অনশনকারীরা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন। শুক্রবার বিকালে ক্যাম্পাসে অনশনকারীরা অসুস্থ হয়ে পড়েন।
নতুন করে অসুস্থ হওয়া শিক্ষার্থীরা হলেন- শোয়েব মাহমুদ, সিইসির মাস্টার্সের শিক্ষার্থী মিম আরাফাত মানব ও ভূ-তত্ত্ব বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আল মাহমুদ।
ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীরা জানান, শুক্রবার বিকালে ভিসি ভবনের সামনে অনশনকারী শোয়েব মাহমুদ অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে মীম আরাফাত মানব ও আল মাহমুদ ত্বাহাও অসুস্থ হয়ে পড়েন। এ সময় তাদের সহপাঠীরা অসুস্থ সতীর্থদের রিকশাযোগে হাসপাতালে নিয়ে যান।
এর আগে অনশনকারী অনিন্দ্য মণ্ডল অসুস্থ হয়ে পড়েন। অনিন্দ্য চিকিৎসা নিয়ে আবাসিক হলে ফিরে আসেন। পরে শুক্রবার সকালে অসুস্থ হয়ে পড়েন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী রবিউল ইসলাম। তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালের বিছানায় শুয়েও তিনি অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন।
ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের ভুখা মিছিল
এদিকে গতকাল পুনঃনির্বাচনের দাবিতে ভুখা মিছিল করেছেন শিক্ষার্থীরা। এদিন বিকাল সোয়া ৪টার দিকে রাজু ভাস্কর্যের সামনে থেকে অনশনরত ছয় শিক্ষার্থী ভুখা মিছিল শুরু করেন। এ সময় ঢাবির বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরাও মিছিলে যোগ দেন। মিছিলটি ঢাবির বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে একই স্থানে এসে শেষ হয়।
এ সময় শিক্ষার্থীরা পুনঃতফসিল ঘোষণার পাশাপাশি নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ মেনে কর্তৃপক্ষের পদত্যাগ দাবি করেন।
এ বিষয়ে অনশনরত শিক্ষার্থী শোয়েব মাহমুদ বলেন, ‘আমরা এই তথাকথিত নির্বাচন মানি না। সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে। আমাদের দাবি দুটি। প্রথমত, ডাকসুর পুনঃনির্বাচন দিতে হবে। দ্বিতীয়ত, নির্বাচনের সঙ্গে জড়িত কর্তৃপক্ষকে এই প্রহসনের নির্বাচনের জন্য প্রকাশ্যে ক্ষমা চেয়ে পদত্যাগ করতে হবে।’
এর আগে গত ১২ মার্চ সন্ধ্যা থেকে ডাকসুর পুনঃনির্বাচনের জন্য অনশন শুরু করেন চার ঢাবি শিক্ষার্থী। তারা হলেন- পদার্থ বিজ্ঞানের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী শোয়েব মাহমুদ, পপুলেশন্স সায়েন্সের দ্বিতীয় বর্র্ষের মাইন উদ্দিন, দর্শন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র অনিন্দ্য মণ্ডল ও সিইসির চতুর্থ বর্ষের তাওহীদ তানজিম। ১৩ মার্চ তাদের সঙ্গে যোগ দেন জার্নালিজম বিভাগের তৃতীয় বর্র্ষের শিক্ষার্থী রাফিয়া তামান্না, সিইসির মাস্টার্সের শিক্ষার্থী মিম আরাফাত মানব, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী রবিউল ইসলাম ও ভূ-তত্ত্ব বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র আল মাহমুদ।
গত ১১ মার্চ ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে সহ-সভাপতি (ভিপি) ও সমাজসেবা সম্পাদক পদ ছাড়া ডাকসুর ২৫টি পদের মধ্যে ২৩ টিতেই জয় পায় ছাত্রলীগ। ডাকসু নির্বাচনের ইতিহাসে এই প্রথম ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠন অধিকাংশ পদে নির্বাচিত হলো।
এই নির্বাচনে ভিপি নির্বাচিত হন কোটা সংস্কার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া সংগঠন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের প্রার্থী নুরুল হক। তিনি পেয়েছেন ১১ হাজার ৬২ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি মো. রেজোয়ানুল হক চৌধুরী (শোভন) পেয়েছেন ৯ হাজার ১২৯ ভোট।
তবে ব্যাপক কারচুপি ও অনিয়মের অভিযোগে পুনঃনির্বাচন দাবি করে আসছে ছাত্রলীগ ছাড়া অন্য সব প্যানেলের প্রার্থীরা। তাদের মধ্যে রয়েছেন ভিপি নুরুল হক নুর। পুনঃনির্বাচন, রোকেয়া হলের প্রভোস্টের পদত্যাগসহ চার দফার দাবিতে রোকেয়া হলের ছয় শিক্ষার্থী বুধবার রাত থেকে অনশনে বসেন। তবে তারা দাবি পূরণে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় অনশন স্থগিত করেন। এদিকে দীর্ঘ ২৮ বছর পর অনুষ্ঠিত ডাকসু নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি দাবি করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন সরকার ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের তীব্র সমালোচনা করছে। তবে বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসন সাফ জানিয়েছে, আর পুনঃনির্বাচন সম্ভব নয়।