ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

ডাকসুতেও জোয়ার এলো না ছাত্রদলে

আহমেদ ইসমাম
🕐 ১০:১৬ অপরাহ্ণ, মার্চ ১৫, ২০১৯

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন ঘিরে ফের চাঙ্গা হয়ে ওঠার সুযোগ ছিল বিএনপির ছাত্র সংগঠন ছাত্রদলের। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা আশা করেছিলেন, জাতীয় নির্বাচনের বিপর্যয়কর অবস্থা কাটাতে ডাকসু নির্বাচন সহায়তা করবে। ডাকসুর হাত ধরে চাঙ্গা হয়ে উঠবে ছাত্রলীগ তথা বিএনপির হতাশ নেতাকর্মীরা।

দীর্ঘদিন ক্যাম্পাসের বাইরে থাকা ছাত্রদলও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) প্রকাশ্যে রাজনীতির সুযোগও পেয়েছিল। কিন্তু ভোটের মাঠে শক্ত অবস্থান নিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি সংগঠনটি। নির্বাচনে কোনো পদে জিততে পারেনি ছাত্রদলের প্রার্থীরা। যদিও ওই নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ এনেছে ছাত্রলীগ ছাড়া অন্য সংগঠনগুলো।

বিশ্লেষকরা বলছেন, সাংগঠনিক ব্যর্থতা, ক্যাম্পাসে টিকে থাকতে মরিয়া মনোভাবের অভাব, সাধারণ ছাত্রদের দাবি দাওয়ার পাশে না থাকাসহ নানা কারণে ছাত্রদলের এই ভরাডুবি হয়েছে। তারা বলছেন, ছাত্রদলের অবস্থা এতই শোচনীয় যে, ভরাডুবির পর অন্য সংগঠনগুলোর সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা ছাড়া তেমন কোনো পৃথক কর্মসূচিও দিতে পারেনি তারা। তবে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন হলো, ঢাবিতে কমিটি গঠনে ব্যর্থতা, অছাত্রদের প্রাধান্য, সঠিক কর্মপরিকল্পনা না থাকা ও অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে সার্বিকভাবে গো-হারা হেরেছে।

জানা গেছে, সর্বশেষ ১৯৯০-৯১ শিক্ষাবর্ষে ডাকসু নির্বাচনে কেন্দ্রীয় ও হল সংসদের ১৮৮ পদের মধ্যে ১৫১টি পদ পেয়েছিল ছাত্রদল। কিন্তু সংগঠনটি এবার বাম জোটের চেয়েও কম ভোট পেয়েছে। তবে নেতারা বলছেন, সংগঠনে কিছু পরিবর্তন আসছে। এ জন্য বিএনপির হাই কমান্ড কাজ করছে। ছাত্রত্ব আছে এমন নেতাদের দিয়ে কমিটি করে ক্যাম্পাস রাজনীতিতে সক্রিয় হতে চায় সংগঠনটি।
ছাত্রদলের নেতাদের ভাষ্য, নির্বাচনে ছাত্রদল অংশগ্রহণ করলেও পূর্ব থেকে তাদের কোনো প্রস্তুতি ছিল না। এছাড়া নতুন করে কমিটি না দেওয়ায় নেতৃত্ব সংকট ছিল। যে কমিটি দেওয়া হয়েছিল নির্বাচনে ভূমিকা রাখতে পারেনি। এছাড়া অনেকের ছাত্রত্ব না থাকায় এই নির্বাচনে সরাসরি অংশগ্রহণ থেকেও বিরত ছিল।

এ বিষয়ে ঢাবি শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আবুল বাশার সিদ্দিকী খোলা কাগজকে বলেন, যেখানে আগের রাতেই সব বাক্স ব্যালট পেপারে ভর্তি ছিল সেখানে ছাত্রদলের কী ব্যর্থতা থাকতে পারে? এখানে প্রশাসনের ব্যর্থতা আছে। তারা ভোট চুরি ঠেকাতে পারেনি। হল থেকে প্রার্থীদের বের করে দেওয়া হয়েছে এ ব্যাপারে প্রশাসন কোনো ব্যবস্থাই নেয়নি। পুনঃনির্বাচনের দাবিতে সব সংগঠন একসঙ্গে দাবি তুলেছে। আমরা আশা করি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এই দাবি মেনে নেবে।

তবে ছাত্রদলের একটি সূত্র জানিয়েছে, নির্বাচনে লজ্জাজনকভাবে হারার পর ছাত্রদল আরও বেশি সংকটে পড়েছে। নির্বাচন ঘিরে তাদের সংগঠনটি কিছুটা চাঙ্গা হলেও ফের নিস্তেজ হয়ে পড়ছে। এই ব্যর্থতার পেছনে নেতারা দায়ী করছেন ঢাবিতে অছাত্রদের নিয়ে গড়া কমিটিকে। তাদের দাবি, যারা কমিটিতে আছেন তাদের একটা বড় অংশ এই নির্বাচনে ভোটার হতে পারেননি। ফলে তারা ক্যাম্পাসে অবাধে প্রবেশও করতে পারেনি। নির্বাচনে ছাত্রদল মধুর ক্যান্টিনকেন্দ্রিক চলাফেরা করেছে। কিন্তু তারা নিজেদের শক্তি নিয়ে হলগুলোতে প্রবেশ করতে পারেনি। এখনো ছাত্রদলের কর্মীরা নিজেদের পরিচয় দিয়ে হলগুলোতে থাকতে পারছেন না। দলের নেতারা মনে করছেন, নির্বাচনের আগে নিজেদের সাংগঠনিক শক্তি প্রয়োগের অবাধ সুযোগ থাকলে সংগঠনটি কোনো উদ্যোগ নিতে ব্যর্থ হয়েছে। সিনিয়র নেতারা ক্যাম্পাসে প্রবেশ করলেও সেটা আড্ডা পর্যন্তই ছিল এর বাইরে আর কোনো তৎপরতা চোখে পড়েনি।

এ ছাড়া নির্বাচন ঘিরে সিনিয়র-জুনিয়র নেতাদের দ্বন্দ্ব ছিল প্রকট। এই দ্বন্দ্ব মেটাতে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে কয়েক দফায় আলোচনা হয় স্কাইপিতে। তবু সমস্যার জট কাটেনি বলে জানিয়েছেন একাধিক নেতা।

কবি জসীমউদদীন হলের এক নেতা খোলা কাগজকে বলেন, যারা ডাকসু নির্বাচনে যাওয়ার বিরোধিতা করেছিলেন তারা ছিলেন অছাত্র ও বয়স্ক নেতা। যারা এবার ডাকসু নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন তাদের মধ্যে থেকেই হয়তো ভবিষ্যতে ছাত্রদলের কমিটিতে শীর্ষ পদে নেওয়া হবে, এমন আশঙ্কা থেকে তারা বিরোধিতা করেছিলেন।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এমাজউদ্দীন খোলা কাগজকে বলেন, ছাত্রদলের এই নির্বাচনে হারার অন্যতম কারণ নিয়মিত ছাত্রদের হাতে নেতৃত্ব নেই। যার ফলে হলে খুব একটা প্রচারণা হয়নি। এখন যারা ছাত্রদলের নেতৃত্ব দিচ্ছে তারা অধিকাংশই অছাত্র। সংগঠনটির নেতৃত্ব হলকেন্দ্রিক না হওয়ায় এই পরাজয়ের কারণ।

 
Electronic Paper