ঢাকা, সোমবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৩ | ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩০

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

শেরেবাংলা বালিকা মহাবিদ্যালয়

সাবেক সভাপতি রিয়াজের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের প্রমাণ পায়নি তদন্ত কমিটি

নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ৪:২৫ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২৩

সাবেক সভাপতি রিয়াজের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের প্রমাণ পায়নি তদন্ত কমিটি

রাজধানীর টিকাটুলীতে অবস্থিত শেরেবাংলা বালিকা মহাবিদ্যালয়ের গভর্নিং বডির সদ্য সাবেক সভাপতি মো. রিয়াজ উদ্দিনের বিরুদ্ধে আনা দুর্নীতি ও যৌন হয়রানিসহ কোনো অভিযোগেরই প্রমাণ পায়নি তদন্ত কমিটি। বরং তাকে সম্পূর্ণ নির্দোষ বলেছে কমিটি।

একইসঙ্গে সরকারি তদন্ত কাজে বাধা প্রদান করায় প্রতিষ্ঠানের সিনিয়র শিক্ষক হামিদা খাতুন, খন্ডকালীন সিনিয়র শিক্ষক আকলিমা আক্তার ও সৈয়দা মেহনাজ নাইয়ারা, সহকারি শিক্ষক রাজিয়া সুলতানা, সিনিয়র শিক্ষক রেখা মন্ডল দীনা ও শরীর চর্চা শিক্ষক মো: সবুজ মিয়ার বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নিতে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকে সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি।

গতকাল মঙ্গলবার ২৬ সেপ্টেম্বর মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড গঠিত তদন্ত কমিটির এ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

তদন্ত কমিটির আহবায়ক ও বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর মো: আবুল বাশার, সদস্য সচিব ও বোর্ডের উপ পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (গোপনীয়) জাকির হোসেন এবং উপ পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (সনদ) হেলাল উদ্দিন এর যৌথ স্বাক্ষরে এ প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে।

তদন্ত কমিটির রিপোর্টের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, গভর্নিং বডির সদ্য সাবেক সভাপতি মো: রিয়াজ উদ্দিন এর বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির কোনো প্রমাণ কমিটির কাছে উপস্থাপিত হয়নি। এছাড়া কলেজের ফান্ড লটুপাটেরও কোনো সত্যতা মিলেনি। তার সময়ে কলেজের ফান্ড বৃদ্ধি পেয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়। বিষয়টি গভর্নিং বডির সদ্য সাবেক সভাপতি মো: রিয়াজ উদ্দিনকে সম্পূর্ণভাবে সামাজিক, রাজনৈতিক, মানসিক ও পারিবারিকভাবে হেয় করার লক্ষ্যে স্বার্থান্বেষী কতিপয় শিক্ষক ও কোনো কুচক্রী মহলের চক্রান্তের বহি:প্রকাশ বলে তদন্ত দলের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক মো: রিয়াজ উদ্দিন রাজধানীর টিকাটুলির শেরে বাংলা বালিকা মহাবিদ্যালয় গভর্নিং বডির সভাপতি হিসেবে দায়িত্বপালনকালে কলেজের ফান্ড তছরুপ করেছেন বলে বিভিন্ন স্থানে অভিযোগ দেয় কলেজের কিছু শিক্ষক। তিনি শিক্ষকদের যৌন হয়রানি করেছেন বলেও অভিযোগ দেয় তারা। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে রিয়াজ উদ্দিন গভর্নিং বডির সভাপতির পদ থেকে অব্যাহতি নেন। পরে বিষয়টি নিয়ে কিছু গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলে রিয়াজকে আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদকের পদ থেকে অব্যাহতি দিয়ে ১৫ দিনের মধ্যে শোকজের জবাব দিতে বলা হয়। তবে রিয়াজ উদ্দিন বরাবরই এসব অস্বীকার করে আসছিলেন। অবেশেষে তদন্ত রিপোর্টেও তাকে নির্দোষ বলা হয়েছে।

এদিকে আর্থিক অনিয়ম ও যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠলে রিয়াজ উদ্দিন গত ১৫ সেপ্টেম্বর শেরে বাংলা বালিকা মহাবিদ্যালয়ের গভর্নিং বডির সভাপতির পদ থেকে নিজ থেকে অব্যহতি নেন রিয়াজ উদ্দিন। পরে তিনি তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত চেয়ে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে আবেদন করেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রিয়াজ উদ্দিনের পদত্যাগের পরে ঢাকা জেলার অতিরিক্তি জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটিকে) গভর্নিং বডির সভাপতির দায়িত্ব দেয় শিক্ষা বোর্ড। এর আগে রিয়াজ উদ্দিনের বিরুদ্ধে ১৩ কোটি টাকার এফিডিআর আত্মসাৎ, যৌন হয়রানিসহ কয়েকটি অভিযোগ এনে স্থানীয় সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদের কাছে লিখিত আবেদন করেন প্রতিষ্ঠানটির ৬জন শিক্ষক।

রিয়াজ উদ্দিনের আবেদনের প্রেক্ষিতে শিক্ষা বোর্ডের গঠিত তদন্ত কমিটি সরেজমিনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. তোফায়েল আহমেদ ভূইয়াসহ ১৮ জন শিক্ষকের লিখিত ও মৌখিক বক্তব্য গ্রহণ করেন।
তের কোটি টাকা এফডিআর আত্মসাতের বিষয়ে তদন্ত কলেজের অধ্যক্ষ, একাধিক শিক্ষক ও অভিযুক্ত রিয়াজ উদ্দিনের সাথে কথা বলেন। কমিটি নিশ্চিত হন সভাপতির দায়িত্ব নেয়ার সময় প্রতিষ্ঠানটির স্থিতি ছিলো ৭ কোটি ৯৯ লাখ ৬৬ হাজার ৫০৯ টাকা এবং রিয়াজ উদ্দিন দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নেয়ার সময় স্থিতি ছিলো ৮ কোটি ২৭ লাখ ১৩ হাজার ১৭৬ টাকা। অর্থ আত্মসাতের বিষয়টি তদন্ত দলের কাছে প্রমাণিত হয়নি বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। এমনকি
সাবেক সভাপতি জনাব মো. রিয়াজ উদ্দিনের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগটি প্রমাণিত হয়নি বলে তদন্ত কমিটি তার প্রতিবেদনে জানিয়েছে। রিয়াজের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়েরকারীদের মধ্যে ১ নম্বর স্বাক্ষরকারী হামিদা খাতুনসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী তদন্ত কমিটির কাছে মৌখিকভাবে জানিয়েছেন যৌন হয়রানি সংক্রান্ত কোন প্রকার লিখিত বা মৌখিক বক্তব্য কোন শিক্ষার্থী বা অভিভাবকের কাছ থেকে পাওয়া যায়নি।

লিখিত বক্তব্যে কলেজের অধ্যক্ষও জানিয়েছেন, প্রতিষ্ঠানের কোন শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মচারী এবং অভিভাবকবৃন্দ সাবেক সভাপতির বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির বিষয়ে মৌখিক কিংবা লিখিত কোন ধরনের অভিযোগ করেননি। রিয়াজ উদ্দিনকে সামাজিক, পারিবারিক ও মানসিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার লক্ষ্যে স্বার্থান্বেষি কতিপয় শিক্ষক ও কোন কুচক্রি মহলের চক্রান্তের বহিঃপ্রকাশ বলে তদন্ত দলের নিকট প্রতীয়মান হয় বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

শিক্ষক নিয়োগে অনিয়মের বিষয়ে বোর্ডের তদন্ত কমিটি তার পর্যবেক্ষণে বলেছে- প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীর মধ্যে কিছু প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ বিষয়সহ স্থানীয় রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ততা রয়েছে এবং বিভিন্ন সময়ে প্রাক্তন সভাপতিগণের মাধ্যমে শিক্ষকগণ নিয়োগপ্রাপ্ত হন। রিয়াজ উদ্দিন বিধি সম্মতভাবে প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় উদ্যোগী হলে প্রতিষ্ঠানের কতিপয় শিক্ষক এবং স্থানীয় কিছুব্যক্তির প্রতিহিংসার শিকার হন বলে তদন্ত দল মনে করে।

এদিকে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক হামিদা খাতুন, আকলিমা আক্তার, সৈয়দা মেহনাজ নাইয়ারা, রাজিয়া সুলতানা, রেখা মণ্ডল দীনা ও মোঃ সবুজ মিয়া তদন্ত কমিটির চাহিদামত নিয়োগ সংক্রান্ত তথ্য প্রদানে বাধা দিয়েছেন বলে তদন্ত কমিটির কাছে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ লিখিতভাবে জানিয়েছেন। তদন্তি কমিটি এ বাধা প্রদান করার বিষয়টি সুস্পষ্টভাবেই সরকারি কাজে বাধা প্রদানের সামিল উল্লেখ করার পাশাপাশি তাদের নিয়োগ বিধিসম্মত হয়নি বলে প্রাথমিকভাবে তাদের কাছে মনে হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন। কমিটি তার সুপারিশে এ ৬জন শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মহাপরিচালক, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর, বাংলাদেশ, ঢাকাকে অনুরোধ করেছে।

 
Electronic Paper