ঢাকা, মঙ্গলবার, ৬ জুন ২০২৩ | ২২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থবির ‘বিএনসিসি’ কার্যক্রম

রোকনুজ্জামান বাপ্পি, নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়
🕐 ৫:৩৫ অপরাহ্ণ, মার্চ ২৮, ২০২৩

নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থবির ‘বিএনসিসি’ কার্যক্রম

সৎ, দক্ষ, দেশ প্রেমিক ও যোগ্য নেতৃত্ব তৈরি করার মহান উদ্দেশ্য নিয়ে যতগুলো সংগঠন কাজ করে বিএনসিসি তার মধ্যে একটি খ্যাতনামা নাম। ‘জ্ঞান ও শৃঙ্খলা’ এই মূলমন্ত্র নিয়ে সেনা, নৌ ও বিমান শাখার ক্যাডেটদের সমন্বয়ে গঠিত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর দ্বিতীয় সারির, আধাসামরিক, সেচ্ছাসেবী বাহিনী হলো বিএনসিসি। বিএনসিসির এই মহান উদ্দেশ্যকে জনসাধারণের মাঝে ছড়িয়ে দিতেই স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের বিভিন্ন আগ্রহী শিক্ষার্থীদের করা হয় বিএনসিসি তালিকাভুক্ত।

 

অথচ জ্ঞান ও শৃঙ্খলার চারণভূমি বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই সংগঠনটির কোনো কার্যক্রম। কিন্তু শিক্ষার্থীদের থেকে নির্ধারিত হারে টাকা নেওয়া হচ্ছে সংগঠনটির নামে।

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর পেরিয়ে গেছে প্রায় দুই দশক। কিন্তু এতো বছর পেরিয়ে গেলেও সংগঠনটির দৃশ্যমান কোনো কার্যক্রম দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে প্রশাসন। প্রশাসনকে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলেও তাদের কাছে নেয় এটির কোনো সুনির্দিষ্ট উত্তর বরং একের দায় অন্যের ঘাড়ে চাপাতেই ব্যতিব্যস্ত তারা।

প্রসঙ্গতই উল্লেখ্য যে, গত ২০১৬ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএনসিসি প্লাটুন খোলার একটি তোড়জোড় পূর্ণ উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও পথিমধ্যেই তা ঝিমিয়ে পড়ে।

এ ব্যাপারে দায়িত্বরত শিক্ষকদেরই দায়ী করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার কৃষিবিদ ড. হুমায়ুন কবীর বলেন, চিঠিপত্র, তথ্য প্রেরণসহ এবং বিএনসিসির জন্য শিক্ষকদের একটি টিম ইতোমধ্যেই বিএনসিসি হেড কোয়ার্টারে যোগাযোগ করলেও তা থেকে আশান্বিত কোনো ফলাফল তারা প্রদান করতে পারেননি। এ অপারগতার কারণে তাদের কমিটিটিও বাতিল করা হয়েছে। প্লাটুন স্থাপনের জন্য শিক্ষকদের ভেতর থেকে আবারও নতুনভাবে দায়িত্ব দেওয়া হবে।

এ ব্যাপারে প্লাটুনের ভারপ্রাপ্ত পিইউও এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা ও পরিবেশনা বিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আল জাবিরকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হলে পাওয়া যায় নতুন তথ্য।

তিনি জানান, একাডেমিক কাউন্সিল অনুমোদন, সিণ্ডিকেট অনুমোদনসহ সকল ধরণের পদ্ধতিগত ক্রাইটেরিয়া সম্পন্ন করার পরেও ২০১৬ সালের পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে কোনো ধরণের প্লাটুন খোলার অনুমোদন বন্ধ রেখেছে বিএনসিসি কতৃপক্ষ। এ ব্যাপারে তাদের কোনো ত্রুটি বা গাফিলতি নেয়, দাবি করেই তিনি জানান, বিএনসিসি রেজিমেন্ট তাদের পলিসিগত কারণেই তারা এটা বন্ধ রেখেছে।

তবে বিএনসিসি কতৃপক্ষ তাদের এ দাবি মানতে নারাজ। তাদের থেকে পাওয়া তথ্য ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন ও বিপরীতধর্মী। বিএনসিসি রেজিমেন্ট থেকে নিজ উদ্যোগে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়েগুলোতে বিএনসিসি প্লাটুন খোলানোর চিঠি প্রদান করে প্রয়াস চালালেও এ ব্যাপারে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আন্তরিকতার ঘাটতি পান তারা।

এ ব্যাপারে বিএনসিসির অফিসিয়াল স্টাফ জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে বিএনসিসি প্লাটুন খুলতে আগ্রহী কিনা এ মর্মে চিঠি পাঠানো হয়। তার প্রত্যুত্তরে তারা পজিটিভিটি দেখালেও পাল্টা চিঠির জবাবে প্রশাসনের ছিল যথেষ্ট অবহেলা। এমনকি ২০১৬ সালের পরে বেশ কয়েকটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেশ কিছু জায়গায় বিএনসিসি প্লাটুন খোলা হয়েছে বলেও দৈনিক খোলা কাগজ সংবাদদাতাকে নিশ্চিত করেন বিএনসিসি কতৃপক্ষ। প্রশাসনের যোগাযোগ রক্ষার অভাবেই সৃষ্টি হয়েছে এমন অবস্থার।

বাংলাদেশের অধিকাংশ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতেই বিএনসিসি কার্যক্রম রয়েছে। শিক্ষার্থীদের সময় এবং শৃঙ্খলার গুরুত্ব বোঝাতে বিএনসিসি কার্যক্রমের বিকল্প নেই। বিশ্ববিদ্যালয় প্রসাশনের পাশাপাশি শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে এক অভাবনীয় অবদান রাখে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনসিসি প্লাটুন। ভর্তি পরিক্ষা থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন প্রোগ্রাম কার্যক্রম সুষ্ঠ ভাবে করার জন্য বিএনসিসি দায়িত্ব পালন করে থাকে। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন খেলাধুলা, উৎসব, পার্বণ বা বিশেষ দিনগুলোতেও হট্টগোলের মধ্যে যখন একজন আরেকজনের ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়ে, তখনও ক্যাডেটরা ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য।

একজন সৎ দক্ষ দেশ প্রেমিক, যোগ্য নেতৃত্ব তৈরি করার মহান উদ্দেশ্যে বিএনসিসি প্রতিষ্ঠা করা হয়। এছাড়া বিএনসিসির মাধ্যমে একজন ক্যাডেট নিজের আত্মবিশ্বাস ও জড়তা কাটাতে পারেন। এই সংগঠন একটি আধা সামরিক সে্চ্ছাসেবী সংগঠন, যে কোন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বৃক্ষরোপণ, স্বেচ্ছায় রক্ত দান ইত্যাদি জনকল্যানমূলক কাজ ছাড়াও যুদ্ধ কালীন সময়ে সামরিক বাহিনী কে সাহায্য করার মাধ্যমেও বিএনসিসি একটি সমাজে খুবই গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। বিনিময়ে বিএনসিসি ক্যাডেটরা সুবিধা হিসেবে পায়, পেশাগত জীবনে চাকরির নিয়োগে অতিরিক্ত সুযোগ, যে কোনো সামরিক বাহিনীতে সহজ এন্ট্রি, বিএনসিসি মেধাবৃত্তিসহ বিদেশ ভ্রমণের সুযোগ। এমনকি পড়াশোনা জন্য বিদেশি স্কলারশিপেও বিএনসিসি ক্যাডেটরা পায় অতিরিক্ত সুবিধা, যার সবকিছু থেকে বঞ্চিত হচ্ছে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অগণিত শিক্ষার্থী।

এ ব্যাপারে কলেজ পর্যায়ের এক্স ক্যাডেট এবং কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ১৬তম আবর্তনের শিক্ষার্থী সাদ বলে, বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী রয়েছেন যারা তাদের কলেজ জীবনে বিএনসিসির সাথে যুক্ত ছিলেন। তারা এই বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে বিএনসিসি না পেয়ে হতাশ। নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএনসিসি এখন সময়ের দাবি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিভাগের শিক্ষার্থী রবিন উদ্দীন জানাই, আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সময় শুরু থেকেই খুজতেছিলাম বিএনসিসি আছে কি না। আমাদের সাথে প্রতিষ্ঠিত প্রায় অনেকগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএনসিসি আছে কিন্তু আমাদের এইখানে নেই, এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত দু:খের। একজন ক্যাডেট হিসেবে অবশ্যই চাই বিশ্বিবদ্যালয়ে বিএনসিসি প্লাটুন প্রতিষ্ঠা হোক।

আরেক এক্স ক্যাডেট এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী সিফাত শাহরিয়ার প্রিয়ান জানায়, বিএনসিসির লক্ষ্য তরুণদের মধ্যে শৃঙ্খলা, নেতৃত্ব এবং দেশপ্রেম বিকশিত করা। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ এবং দেশের উন্নয়নে অবদান রাখার জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি এবং সুযোগ প্রদান করে থাকে বিএনসিসি। কিন্তু এমন সুযোগ থেকে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত।

 
Electronic Paper