জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
৪ শিক্ষার্থীকে শোকজ, তদন্ত নিয়ে গড়িমসি
শাহরিয়ার আলম, জাবি
🕐 ৬:৫৯ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২২, ২০২২

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সুফিয়া কামাল হলের গণরুমে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের র্যাগিংয়ের অভিযোগে ৪ জন শিক্ষার্থীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দেয়া হয়েছে। বেগম সুফিয়া কামাল হলের ১ম বর্ষের (৫০ তম ব্যাচ) ছাত্রীদের ২৯ আগস্ট করা এক অভিযোগের প্রেক্ষিতে এই কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, ২৭ আগস্ট বেগম সুফিয়া কামাল হলের ৪৯ তম ব্যাচের কয়েকজন ছাত্রী রাত ১১টায় গণরুমে এসে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের সাথে অশোভন ভাষায় কথা বলেন ও তাদের কয়েকজনের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ এনে মানসিক নির্যাতন করেন। পরদিন তাদের অনেকের টিউটোরিয়াল পরীক্ষা আছে বলা সত্ত্বেও রাত প্রায় ১টা পর্যন্ত তাদের র্যাগ দেয়া হয়। এছাড়া ৪৯ ব্যাচ (২য় বর্ষ) ব্যতীত অন্য কোনো সিনিয়র শিক্ষার্থীর সাথে কথাবার্তা না বলার নির্দেশনা দেওয়া হয়।
অভিযোগপত্রে ঘটনার সাথে মুখ্যভাবে যুক্ত হিসেবে ৪৯ ব্যাচের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের আশা, পরিসংখ্যান বিভাগের লাভলী, দর্শন বিভাগের রিফা, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শাহরিন সহ আরও কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন বলে উল্লেখ করা হয়।
র্যাগিংয়ের সময় অভিযুক্তরা “প্রশাসনের কাছে এগুলো বলে কিছুই হবেনা, আমরাই প্রশাসন চালাই” বলে ভুক্তভোগীদের হুমকি দেয় বলে জানা যায়। পরবর্তীতে আইআইটি ৩য় বর্ষের (৪৮তম ব্যাচ) সাবরিনা সিদ্দিকী অদিতি গণরুমে যেয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের র্যাগিংয়ের বিষয়টা বাইরে না জানানোর পুনরায় হুমকি দিয়ে যায় বলে উল্লেখ করা হয় অভিযোগপত্রে।
র্যাগিংয়ের বিষয়ে অভিযুক্ত ৪৯ ব্যাচের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের আশার বলেন, ‘‘আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা হয়েছে। আর এটার জবাবদিহিতা আপনার কাছে করতে বাধ্য নয়। আমি অথরিটির কাছে জবাবদিহি করবো। এরপর আপনি নিউজ করার থাকলে কইরেন।’’
৪৮ ব্যাচের সাবরিনা সিদ্দিকী অদিতি বলেন, ৫০ তম ব্যাচের গণরুমে গিয়েছিলাম কারণ হচ্ছে আমাদের হলের ৪৪, ৪৫ ও ৪৭ ব্যাচের আপুরা আমাদেরকে বলে ৪৯ ব্যাচের ওরা যেনো কিছু বিষয় ৫০ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে বলে। এজন্য আমরা ৪৯ ব্যাচকে গণরুমে যেতে বলি। পরবর্তীতে একটা গ্রুপ প্রভোস্ট স্যারের কাছে সাজিয়ে বিচার দিবে জানতে পেরে আমি গণরুমে যেয়ে তাদের বিষয়গুলো জিজ্ঞাসা করি।’
বুধবার (১৪ সেপ্টেম্বর) হল প্রশাসনের নিকট অভিযোগ দেয়ার কারণে রসায়ন বিভাগে অধ্যয়নরত বেগম সুফিয়া কামাল হলের ৪৪তম ব্যাচের নাহিদা আলম তন্নী ও মাহিয়া মতিন গণরুমে যেয়ে ৫০তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের অভিযোগপত্রের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন এবং ৫০ তম আবর্তনের একজন শিক্ষার্থীকে রুমে নিয়ে অভিযোগপত্র তুলে নেয়ার ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ লিখিয়ে নেন বলে জানা যায়। এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে মাহিয়া মতিন বলেন, ‘আমি গিয়েছিলাম গণরুমে কথা বলতে, আমাদের হল প্রশাসনই আমাদের পাঠিয়েছিল। ওদের সাথে কথা বলতে গেছি, হুমকি দিই নি।’
নাহিদা আলম তন্নী বলেন,‘ ওদেরকে কোন র্যাগ দেয়া হয় নাই কিছু বিষয়ে কথা বলা হয়েছে। ৪৮, ৪৯ আমাদের কথাতেই ওদের কাছে গেছে, আমরাই বলছি ওদের যেয়ে কিছু বিষয়ে বলে আসতে। ওখানে তো ৭—৮ জন গিয়েছিল কিন্তু অভিযোগপত্রে শুধু ৪ জনের নাম কেন আসলো? আমরা যেয়ে ওদেরকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম অভিযোগপত্রের ব্যাপারে গণরুমের অধিকাংশ মেয়ে বলেছে তারা অভিযোগপত্র জমা দেয়া হয়েছে এ বিষয়ে তারা জানে না।’
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বেগম সুফিয়া কামাল হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক মো. মোতাহার হোসেন বলেন, ‘এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি করে দেয়া হয়েছে, তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করে দিয়েছে। আপনি তদন্ত কমিটির কোন সদস্যের সাথে কথা বলেন।’
তদন্ত কমিটির সদস্য বেগম সুফিয়া কামাল হলের হাউজ টিউটর সহকারী অধ্যাপক তাজউদ্দীন বলেন, ‘তদন্ত চলমান আছে। কিছু প্রক্রিয়াগত সমস্যা রয়েছে যার কারণে দেরী হচ্ছে। তদন্ত শেষ হলে শীঘ্রই রিপোর্ট জমা দেওয়া হবে।’
নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও তদন্ত শেষ না হওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যেদিন মিটিংয়ে বসার কথা ছিল ঐদিন আমাদের দুইজন সহকর্মী ব্যাস্ত থাকায় মিটিংটা পোস্টপন করা হয়।’
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
