ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

করোনার মিশ্র টিকা

এন্টিবডি অনুসন্ধানে জাবির একদল গবেষক

ওয়াজহাতুল ইসলাম, জাবি
🕐 ৬:৩৫ অপরাহ্ণ, আগস্ট ০৫, ২০২২

এন্টিবডি অনুসন্ধানে জাবির একদল গবেষক

করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে সবচেয়ে কার্যকরী টিকার মিশ্রণ বা ‘মিক্স এন্ড ম্যাচ’-র সন্ধান করছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) একদল গবেষক। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের ১৪ জন শিক্ষকের এই গবেষণায় ভ্যাক্সিন নেয়ার পর রক্তে উৎপন্ন এন্টিবডির পরিমাণের ওপর ভিত্তি করে মানব শরীরে এর কার্যকারিতা কতটুকু তা গবেষণা করা হচ্ছে।

এই লক্ষ্যে, চলতি বছরের ২৬ জুন থেকে ৩০ জুন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) বিভিন্ন বয়সের টিকাগ্রহীতার এন্টিবডির পরিমাণ নির্ণয়ের জন্য রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এতে পাঁচ দিনে বিভিন্ন বয়সের প্রায় ৬১০টি নমুনা সংগ্রহ করেন তারা। এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় কমিউনিটিকে বেছে নেয়ার কারণ হিসেবে গবেষকদল বলেন, এই কমিউনিটিতে বিভিন্ন বয়সের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা রয়েছেন। শারীরিক গঠন, বয়স ও লিঙ্গ বিবেচনায় অল্প জায়গাতেই সবচেয়ে বিস্তীর্ণ নমুনা সংগ্রহের সুযোগ অন্য কোথাও সম্ভব নয়। এছাড়াও, একই কমিউনিটির যারা মহামারীর সময় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অবস্থান করেছেন, তাদের এন্টিবডির উপর গবেষণা করলে পুরো দেশের সামগ্রিক অবস্থা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে।

গবেষণা দলের পরিচালক বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. নিহাদ আদনান বলেন, ‘বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গবেষণায় ভ্যাক্সিনগুলোর কার্যকারিতায় ভিন্নতা দেখা গেছে। উন্নত দেশগুলো একটি বা দুইটি ভ্যাক্সিনের বাইরে যায় নি ৷ দ্রুততম সময়ে ভ্যাক্সিন প্রাপ্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আমাদের দেশে প্রথম ডোজ অক্সফোর্ড-এস্ট্রাজেনেকা পেলেও পরবর্তীতে সিনোফার্ম, ফাইজার বা মডার্না দিতে হয়েছে। এতে করে একই ব্যক্তি একাধিক ধরনের ভ্যাক্সিন নিয়েছেন। আমরা এই ভ্যাক্সিনের মিক্স এন্ড ম্যাচের কার্যকারিতা গবেষণার মাধ্যমে তুলে আনার চেষ্টা করছি।’

এন্টিবডি নির্ণয়ের পদ্ধতি সম্পর্কে নিহাদ আদনান আরও বলেন, ‘‘Enzyme Linked Immunue Sorbent Assay (ELISA)” পদ্ধতিতে এন্টিবডির সুনির্দিষ্ট পরিমাণ নির্ণয়ের জন্য আমরা একটা প্রটোকল ডেভেলপ করেছি, যা ইতোমধ্যে একাধিক স্বনামধন্য জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। আমাদের উদ্ভাবিত কোভিড-১৯ এন্টিবডি কীটটি বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিল এবং ঔষধ প্রশাসনের অনুমতি সাপেক্ষে আইসিডিডিআরবি-তে পরীক্ষিত। এছাড়া আমেরিকার এফডিএ ও বাংলাদেশ ঔষধ প্রশাসনের নির্ধারিত মানঅর্জন করেছে। দেশীয় প্রযুক্তিতে প্রস্তুতকৃত স্বল্পমূল্যের কীটটি জাবির মাইক্রোবায়োলজি বিভাগে প্রস্তুত করে বর্তমান গবেষণাটি সম্পন্ন হচ্ছে।

গবেষকদলের সদস্য এবং একই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সালমা আক্তার গবেষণার গুরুত্ব বোঝাতে গিয়ে বলেন, ‘আমাদের এ গবেষণাকে একটা মডেল স্টাডি বলা যেতে পারে৷ যেহেতু মহামারী বিদায় নিচ্ছে না, কাজেই জনগণকে সুরক্ষা দিতে আরও গবেষণা জরুরি। ভ্যাক্সিনের কোন কম্বিনেশন সবচেয়ে ভাল কাজ করে, সবচেয়ে শক্তিশালী এবং দীর্ঘস্থায়ী এন্টিবডি তৈরি করে এটা এ গবেষণার মাধ্যমে জানা যাবে।’

তিনি আরও জানান, ‘বর্তমান গবেষণাটি একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ। আমরা আবারো ছয় মাস পর এই মানুষগুলোর রক্তে এন্টিবডির পরিমাণ নির্ণয় করব। ছয় মাসে এন্টিবডির পরিমাণের তারতম্য হতে সুনির্দিষ্টভাবে ভ্যাক্সিনের দীর্ঘমেয়াদি প্রতিরোধ ক্ষমতা নিরূপণ সম্ভব। এই ফলাফল হতে দ্বিতীয় বুস্টার ডোজের প্রয়োজনীয়তা যেমন বুঝা যাবে, তেমনি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বুস্টার প্রদান নীতিমালা প্রণয়নে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। আমাদের এই মডেল স্টাডি চিকুনগুনিয়া, ডেঙ্গুর মত সংক্রামক রোগের এন্টিবডি গবেষণার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ।’

গবেষণা দলের আরেক সদস্য অধ্যাপক ড. সালেকুল ইসলাম জানান, ‘লকডাউন চলাকালীন সময়ে জাবির মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের ড. নিহাদ আদনান ও তার গবেষকদল করোনা শনাক্তকরণ কীট নিয়ে গবেষণা করছেন ৷ শিক্ষকরা সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত অর্থায়নে এই গবেষণার কাজকে ত্বরান্বিত করতে সহযোগিতা করেছেন। সম্পূর্ণ ইথিকাল পারমিশন নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থী-কর্মচারীদের কাছ থেকে নমুনা সংগ্রহ করেছেন।’

গবেষণার সাথে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, কোভিড-১৯ এন্টিবডি নির্ণয়ের এই গবেষণায় নমুনা প্রদানকারী শিক্ষক, কর্মকর্তা এবং ছাত্রছাত্রীরা অত্যন্ত সাগ্রহে অংশগ্রহণ করেছেন। পর্যাপ্ত পৃষ্ঠপোষকতা পেলে আরও নমুনা সংগ্রহ করে বিনামূল্যে এন্টিবডি নির্ণয় করা যেত বলে জানান তারা। তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ জাবির সাথে যৌথভাবে কোভিড-১৯ এন্টিবডি নির্ণয় বিষয়ক গবেষণা পরিচালিত করতে পারেন।

গবেষক দলের অন্য সদস্যরা হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার খসরু পারভেজ, সহযোগী অধ্যাপক ড. নাফিসা আজমুদা, ড. ফিরোজ আহমেদ, সহকারী অধ্যাপক সৈয়দা মরিয়ম লিজা ও তাসলিন জাহান মৌ, প্রভাষক ফাতেমা তুজ জোবাইদা ও জামশেদা ফেরদৌস তুলি, ফার্মেসি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোঃ ফখরুল ইসলাম, বায়োকেমিস্ট্রি ও মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. সোহেল আহমেদ, বায়োটেকনোলজি ও জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মোঃ শরিফ হোসেন ও সহযোগী অধ্যাপক ড. জিনিয়া ইসলাম।

 
Electronic Paper