শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে হলছাড়া করল ছাত্রলীগ
আরিফ জাওয়াদ, ঢাবি
🕐 ৭:২১ অপরাহ্ণ, জুন ২৩, ২০২২
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) জগন্নাথ হলের স্নাতক চতুর্থ বর্ষের এক আবাসিক শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে হল থেকে বের করে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে ওই হলের ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে। ভবিষ্যতে হলে উঠলে মেরে ফেলারও হুমকি দেন পালি অ্যান্ড বুদ্ধিস্ট স্টাডিজ বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক চতুর্থ বর্ষ ও হলটির আবাসিক শিক্ষার্থী উৎসব রায়কে।
এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও জগন্নাথ হলের প্রাধ্যক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন উৎসব। অভিযোগপত্রে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী উল্লেখ করেন, ২৫ থেকে ৩০ জন তার ওপর হামলায় অংশগ্রহণ করে। এর মধ্যে ১৯ জনের নাম উল্লেখ করেছেন তিনি।
গত মঙ্গলবার (২১ জুন) বিকালে জগন্নাথ হলের সন্তোষ চন্দ্র ভট্টাচার্য ভবনের ৭০১২ নম্বর কক্ষে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর থেকে এই শিক্ষার্থী হলের বাইরে আছেন এবং বর্তমানে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টার থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
ভুক্তভোগী উৎসব রায় বলেন, দুপুরে খাওয়ার পর আমি আমার কক্ষে বিশ্রাম নিতে আসি। বিকালের দিকে আমি কিছু বুঝে ওঠার আগেই তার (সত্যজিৎ) নেতৃত্বে ২৫-৩০ জন আমার কক্ষের দরজার ছিটকিনি ভেঙে ঢুকে পড়ে। কক্ষে ঢুকেই তারা আমার ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। আমাকে স্ট্যাম্প ও রড দিয়ে বেধড়ক মারপিট করে। সত্যজিৎ আমার মাথায় আঘাত করে। এরপর আমি নিজের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলি। মারার পর আমাকে হল থেকে বের করে দেয়। সে বলে দিয়েছে যদি আমি হলে আসি তাহলে আমাকে সে জীবন্ত মেরে ফেলবে। আমি এখনো পর্যন্ত হলে যেতে পারিনি। আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।
অভিযোগপত্রে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী হামলায় অংশ নেয়া ১৯ জনের নাম উল্লেখ করেন। তারা হলেন, ভূতত্ত্ব বিভাগের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের সত্যজিৎ দেবনাথ, একই শিক্ষাবর্ষের বাঁধন (বিভাগ জানা যায়নি), ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের সবুজ কুমার, ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের ব্যাংকিং অ্যান্ড ইনস্যুরেন্স বিভাগের শুভ সাহা, ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের রাজিব বিশ্বাস, একই শিক্ষাবর্ষের যোগাযোগ বৈকল্য বিভাগের গণেশ ঘোষ, মৎস্য বিজ্ঞান বিভাগের অমিত দে ও ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের রিভু রিদম।
এছাড়াও লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের স্বাগতম বাড়ৈ, অর্থনীতি বিভাগের দীপ্ত রায়, উর্দু বিভাগের সবুজ শীল, যোগাযোগ বৈকল্য বিভাগের অভিষেক ভাদুরী, পাপন বর্মন (বিভাগ জানা যায়নি), ইতিহাস বিভাগের সৌরভ সাহা, একই বিভাগের জয় দাস। ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অপূর্ব দাস, একই বিভাগের পুষ্পেন্দু মণ্ডল, ব্যাংকিং অ্যান্ড ইনস্যুরেন্স বিভাগের অমৃত মণ্ডল ও ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের প্রিতম আনন্দ। তারা সবাই জগন্নাথ হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক অতণু বর্মণের অনুসারী। অতনু কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের অনুসারী।
এদিকে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা সত্যজিৎ দেবনাথ জানান, এর সঙ্গে আমার সম্পৃক্ততা নেই। ঘটনার সময় আমি আমার কক্ষে ছিলাম। একটা ফোন চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে হলের ১০০-২০০ ছেলে তাকে হল থেকে বের করে দিয়েছে। তার বিরুদ্ধে মোবাইল ছিনতাই, মাদক সেবনসহ অনেক অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে জগন্নাথ হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক অতনু বর্মণ বলেন, আমি এই বিষয়ে কিছুই জানি না। ঘটনার দিন আমি সুনামগঞ্জ ছিলাম। গতকাল হলে আসছি।
বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রক্টর অধ্যাপক ড. একেএম গোলাম রব্বানী বলেন, আমরা অভিযোগ পেয়েছি। যেহেতু ঘটনাটি হলের অভ্যন্তরে ঘটেছে, সেজন্য আমরা হল প্রশাসনকে বিষয়টির প্রবিধান করতে বলেছি। আশা করছি হল প্রশাসন এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করবে। প্রয়োজনে আমরা হল প্রশাসনকে সহযোগিতা করব।
এদিকে জগন্নাথ হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মিহির লাল সাহা বলেন, বিষয়টা আমি আজই জেনেছি। ভুক্তভোগীর উচিত ছিল বিষয়টা আমাকে তাৎক্ষণিক জানানো। আমি দায়িত্বপ্রাপ্ত আবাসিক শিক্ষককে বিষয়টি জরুরি ভিত্তিতে অনুসন্ধান করার জন্য বলেছি। তারপর জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।