ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪ | ৫ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বাংলা

ফাতেমা বেগম
🕐 ৫:৪৯ অপরাহ্ণ, মার্চ ২৬, ২০২০

রচনা : বর্ষাকাল
ভূমিকা :
আমি বর্ষা, আসিলাম গ্রীষ্মের প্রদাহ শেষ করি মায়ার কাজল চোখে, মমতার বর্মপুট ভরি।
- সুফিয়া কামাল।

ষড়ঋতুর এই বাংলা মায়ের ষড়রূপে কে না বিস্মিত হয়! ঋতু বৈচিত্র্যের মোহে মোহান্ধ হয় না কার মন! আমরা সবাই প্রকৃতির সন্তান। প্রকৃতি আমাদের বিমুগ্ধ করে তার আপন রূপের মমতাময়ী স্পর্শে। এক্ষেত্রে বর্ষা সবচেয়ে আবেদনময়ী ঋতু। ঘন গৌরবে ঘটে বর্ষার উন্মাদ আগমন। আকাশে আকাশে ছড়িয়ে পড়ে পুঞ্জ পুঞ্জ মেঘের ভেলা। সীমাহীন উল্লাসে অবিশ্রান্ত ধারা বর্ষণের মধ্য দিয়ে বর্ষা নেমে আসে বাংলার শ্যামল মাটিতে।

ঋতুচক্রে বর্ষা :

ঋতুচক্রে গ্রীষ্মের পরই বর্ষার স্থান। আষাঢ় ও শ্রাবণ দুই মাস নিয়ে বর্ষাকাল। অন্যভাবে বললে বৃষ্টিপাতের সময়কে বর্ষাকাল বলে। এ দিক থেকে জ্যৈষ্ঠ মাসের মাঝামাঝি থেকে আশি^ন মাসের শেষ পর্যন্ত এর অবস্থান। গ্রীষ্মের প্রচণ্ড দাবদাহ থেকে প্রকৃতিকে শীতল ও সিক্ত করতেই বর্ষার আগমন ঘটে।

বর্ষার আগমন :

গ্রীষ্মের দাবদাহে যখন অতিষ্ঠ প্রাণিকুল, চাতক জল চায় মেঘের কাছে, তখনই বর্ষা-কন্যা আসে বৃষ্টির নূপুর পায়ে, ঝুমুর ঝুমুর মল বাজিয়ে। সজল বর্ষণে রুক্ষ প্রকৃতিকে স্নান করিয়ে পূত-পবিত্র করে দেয় বর্ষা। প্রকৃতি যেন বর্ষার ছোঁয়া পেয়ে সজল হয়ে ওঠে। মেঘ-বালিকাদের অবাধ বিচরণ আকাশকে যেন মাটির কাছে টেনে আনে। বর্ষার সমাগমে খাল-বিল, নদী-নালা, পুকুর-ডোবা পানিতে থৈ থৈ করে, গ্রামগুলো দ্বীপের মতো পানির বুকে ভাসে। বনে জুঁই, কেয়া, কদম ফুলের স্নিগ্ধ সৌরভ ভাসে বাতাসে।

সূর্য লুকোচুরি খেলে মেঘের সঙ্গে। মেঘের ভৈরবী রূপের গলায় বিজলী যেন গহনা পরিয়ে দেয়। সে আনন্দে বর্ষা ঝমঝম শব্দে অবিরাম নৃত্য শুরু করে।

বর্ষার প্রকৃতি ও জনজীবন :

‘বাদল হাওয়ায় মনে পড়ে

ছেলেবেলার গান

বিষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর

নদে এলো বান।’

বর্ষার অবিরাম বৃষ্টিতে ভরে ওঠে খাল-বিল, নদী-নালা। ঘরের কোনে ব্যাঙের ঘ্যাঙরঘ্যাং ডাক। পানিতে ভিজে পাখিরা গাছের পাতার ফাঁকে চুপটি করে বসে থাকে। গ্রামের মানুষের এ দিনে কোনো কাজ থাকে না। তারা অলসভাবে ঘরে বসে সময় কাটায়। গ্রামের মেয়েরা এ সময় নকশি কাঁথা তৈরি করে। কবিরা বৃষ্টির সৌন্দর্য নিয়ে কবিতা লেখে। কর্দমাক্ত রাস্তা-ঘাট দিয়ে অল্প-স্বল্প লোকজনের আনাগোনা দেখা যায়। ছোট ছোট ছেলে- মেয়েরা বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে খেলা করে। বাড়িতে বাড়িতে খিচুড়ি রান্না হয়, অনেকেই ইলিশ মাছ দিয়ে মজা করে খিচুড়ি খায়।

বর্ষার উপকারিতা :

বৃষ্টি পানিতে দেশের সব ময়লা ধুয়ে মুছে দূর হয়ে যায়। এ সময় প্রকৃতি খুবই সতেজ হয়ে ওঠে। প্রকৃতিতে দেখা দেয় ফল-ফসলের সম্ভার। নদীপথে পরিবহন ব্যবস্থা সহজ হয়ে ওঠে।

বর্ষার অপকারিতা :

বর্ষায় মানুষের কষ্ট আর অশান্তির সীমা থাকে না। কাজের জন্য বাইরে বের হওয়ার উপায় থাকে না। কখনো কখনো অতি বৃষ্টিতে বন্যা দেখা দেয়। ডুবে যায় ফসলের মাঠ, শহরের বস্তি। জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি পায়। ময়লা আর দূষিত পানিতে ছড়িয়ে পড়ে রোগ। মানুষের সর্দি, কাশি, জ্বর, পেটের পীড়াসহ নানা ধরনের রোগ বৃদ্ধি পায়।

উপসংহার :

বর্ষা মানুষের মনকে সংবেদনশীল করে তোলে। বর্ষা যেমন দুহাত ভরে দান করে তেমনি কিছু কষ্টের স্মৃতিও রেখে যায়। তবুও প্রকৃতিতে বর্ষার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। বর্ষা যেন সারা বছরের প্রকৃতির প্রাণশক্তি জুগিয়ে দেয়।

ফাতেমা বেগম

শিক্ষক, বর্ণমালা আদর্শ স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ঢাকা।

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper