পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের প্রস্তুতি
বাংলা
লুৎফা বেগম
🕐 ৩:০৫ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ০৬, ২০১৯
রচনা : একুশে ফেব্রুয়ারি/আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস
ভূমিকা : ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেরুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি’
(একুশের গান : আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী)
বাঙালির জাতীয় জীবনের এক ঐতিহ্যবাহী দিন একুশে ফেব্রুয়ারি। এটি এখন সারা বিশ্বে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে স্বীকৃত। এ দিবসের সঙ্গে বাঙালির জীবনের অনেক ত্যাগ, মহিমা, আবেগ ও আনন্দ জড়িত। এদিন আমাদের জাতীয় জীবনে অন্যায়ের বিরুদ্ধে মাথা তোলা, বন্দি অবস্থা থেকে মুক্তির প্রেরণা জোগায়।
ঐতিহাসিক পটভূমি : মাগো, ওরা বলে, সবার কথা কেড়ে নেবে,
তোমার কোলে শুয়ে গল্প শুনতে দেবে না।
বলো মা, তাই কী হয়?
(মাগো ওরা বলে : আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ্)
১৯৪৭ সালের দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্ম হয়। তার পর থেকেই পশ্চিম পাকিস্তানিরা এ দেশের নিরীহ মানুষের ওপর নানা রকম অন্যায়, নিপীড়ন ও অত্যাচার চালায়।
তারা বাঙালি জাতিকে পঙ্গু করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। এ জন্য তারা প্রথমেই বাঙালির মুখের ভাষার ওপর আঘাত হানে। তারা উর্দুকে এ দেশের রাষ্ট্রভাষা করার অপচেষ্টায় মেতে ওঠে। কিন্তু বাঙালি দমে যাওয়ার জাতি নয়। ফলে সারা দেশে ব্যাপক প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে পাক সরকার ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি সারা দেশে ১৪৪ ধারা জারি করে। সেদিন প্রাণশক্তিতে পরিপূর্ণ ছাত্রসমাজ ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ স্লোগান নিয়ে রাজপথে বেরিয়ে পড়ে। বর্বর পাক সরকার এ মিছিলের ওপর নির্বিচারে গুলি চালালে শহীদ হন রফিক, সালাম, জব্বার, বরকতসহ আরো অনেকে।
শহীদ মিনার : বর্তমান ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের সামনে ভাষাশহীদদের স্মৃতি রক্ষার্থে ১৯৬২ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি তৈরি হয়েছে শহীদ মিনার। এখানেই শহীদ হয়েছিলেন আবুল বরকত। প্রতিবছর একুশে শহীদ মিনারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের মাধ্যমে ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়। তা ছাড়া দিনব্যাপী চলে নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
একুশে ফেব্রুয়ারির চেতনা : ১৯৫২ সালে ভাষাকে কেন্দ্র করেই বাঙালি অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছে। একুশে চেতনা সেদিক থেকে একটি মূল্যবোধ, জীবনাদর্শ, যা আমাদের প্রতিবাদী করে তোলে এবং সর্বপ্রকার নিপীড়ন ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হয়ে স্বকীয় সত্তাস্বরূপে প্রতিষ্ঠিত ও বিকশিত হওয়ার আহ্বান জানায়।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস : বর্তমানে একুশে ফেব্রুয়ারি শুধু বাঙালির একার নয়। ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেসকো একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। সেই থেকে সারা বিশ্বে এই দিনটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে।
উপসংহার : বাংলাই পৃথিবীর একমাত্র ভাষা যা এসেছে রক্তের বিনিময়ে। মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষায় একুশে ফেব্রুয়ারি তাঁরা জীবন দিয়েছিলেন বলেই আজ আমরা প্রাণের ভাষা বাংলায় কথা বলতে পারছি। তাই একুশের চেতনা আমাদের প্রত্যেকের অন্তরে লালন করতে হবে এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে নিজের জীবনকে বিলিয়ে দেওয়ার জন্য সদা প্রস্তুত থাকতে হবে।
লুৎফা বেগম, সিনিয়র শিক্ষক
বিএএফ শাহীন কলেজ, কুর্মিটোলা, ঢাকা।
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228