সাপের ছোবলে মৃত্যু : চিকিৎসায় আধুনিকায়ন কাম্য
সম্পাদকীয়
🕐 ১২:৩৩ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২১, ২০২১
সাপের ছোবলে মৃত্যুর পরিমাণ বাড়ছে আশঙ্কাজনক হারে। অন্যদিকে দেশের সাধারণ মানুষ এখন তন্ত্রমন্ত্র ও ঝাড়ফুঁক বিশ্বাস থেকে বেরিয়ে আসতে পারেননি। এধরনের চিকিৎসাকে সহজ মনে করে নিজেদের সর্বনাশ ডেকে আনছেন লাখ লাখ অসচেতন মানুষ। এ বিষয়ে গতকাল প্রতিবেদন প্রকাশ করে খোলা কাগজ। ন্যাশনাল গাইড লাইনের ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের সূত্র মতে, বাংলাদেশে বর্তমানে প্রতি বছর তিন লাখ মানুষ সাপের ছোবলের শিকার হন। এতে মারা যান প্রায় ছয় হাজার মানুষ। কারণ হিসেবে স্বাস্থ্য অধিদফতরের ভাষ্য, ওঝার অজ্ঞতা ও সাধারণ মানুষের অসচেতনতা। ২০১৮ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এর সহযোগী সংগঠন ট্যাক্সিকোলজি সোসাইটি অব বাংলাদেশ ‘বিশ্ব সর্প দংশন ও চিকিৎসা দিবস’ পালন করে আসছে।
এই ট্যাক্সিকোলজি সোসাইটি অব বাংলাদেশের অন্যতম সদস্য বোরহান উদ্দিন রোমন বিশ্বাস জানান, ‘এখনো অধিকাংশ মানুষের বদ্ধমূল ধারণা, হাসপাতালে সাপের কামড়ে চিকিৎসা হয় না। এ কারণে তারা সাপের কামড়ের পর ওঝার দ্বারস্থ হন। কিন্তু বিষধর সাপগুলো যদি বিষযুক্ত কামড় দেয়, তবে ওঝারা কিছুই করতে পারেন না। তারা শুধু রোগীকে সুস্থ করার লো দেখানো নাটক করে থাকেন।’ ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার (আইইউসিএন)-এর তথ্যমতে বাংলাদেশে রয়েছে ৯২টি প্রজাতির বিষধর সাপ। অন্যদিকে রাজশাহীর স্নেক রেসকিউ অ্যান্ড কনজারভেশন সেন্টারের তথ্য মতে, বাংলাদেশে ১০২ প্রজাতির সাপ রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ২৮টি প্রজাতির সাপ বিষধর। এই ২৮ প্রজাতির বিষধর সাপের মধ্যে ১৩টি থাকে সমুদ্রে এবং বাকি ১৫টি থাকে স্থলে বা ডাঙ্গায়।
সাপে মৃত্যুর বিষয়ে রামেকের চিকিৎসক আবু শাহিন জানান, বাংলাদেশে সাপের ছোবল চিকিৎসা এখনো উন্নত নয়। সাপের ছোবলে রোগী মেডিকেলে পৌঁছানোর পর তাকে পর্যবেক্ষণে রেখে দেখা হয়, বিষক্রিয়ার লক্ষণগুলো রোগীর আসছে কিনা? যদি বিষক্রিয়ার লক্ষণ দেখা দেয় তখন রোগীকে এক ডোজ অ্যান্টিভেনম দেওয়া হয়। এরপর আবার পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। কিন্তু উন্নত বিশ্বে সাপে কামড় দেওয়া ব্যক্তিকে মেডিকেলে প্রবেশ মাত্রই তার কিছু গুরুত্বপূর্ণ টেস্ট করা হয়। তার শরীরে কতটুকু বিষক্রিয়া হয়েছে; বর্তমান শারীরিক অবস্থা কী; কতটুকু পরিমাণ অ্যান্টিভেনম দেওয়া প্রয়োজন- এসব দেখা হয়। তারপর প্রয়োজনমতো চিকিৎসা হয়ে থাকে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ডা. আবু রেজা তুহিন জানান, মূলত সাপের দুর্ঘটনাগুলো ঘটে থাকে গ্রামীণ জনপদের তৃণমূল পর্যায়ে। এমনিতেই বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ কুসংস্কারাচ্ছন্ন। উপরন্তু শিক্ষা ও চিকিৎসা ব্যবস্থা উন্নত না হওয়ায় চিন্তাধারাও সেকেলে। বেশিরভাগ মানুষ জানেই না, সাপের ছোবলের প্রাথমিক চিকিৎসার বিষয়টি। তাদের ধারণা মেডিকেলে এর চিকিৎসা হয় না। এই অজ্ঞতার বশবর্তী হয়ে তারা ‘ট্রেডিশনাল পদ্ধতি’ প্রয়োগ করে অর্থাৎ ওঝার দ্বারস্থ হয়। আর এতেই মৃত্যু হয় সাপে কামড়ানো ব্যক্তির। আমরা মনে করি, অজ্ঞতার অন্ধকার থেকে মানুষকে বের করে আনতে পারলেই সমাধান মিলবে। অন্যথায় অচিকিৎসা-কুচিকিৎসা রোধ করা যাবে না। সংশ্লিষ্টরা এ বিষয়ে উদ্যোগী হবেন বলেই প্রত্যাশা।
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228