জনপথে কাঁটাতারের বেড়া কেন!
সম্পাদকীয়
🕐 ২:১৭ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২০, ২০২১
পথের বাধা সরিয়ে নিলে এগোতে পারে মানুষ। কিন্তু উল্টো যদি পথ রুদ্ধ করে দেওয়া হয়, মানুষের বিকাশের স্বাভাবিকতা হারিয়ে যায়। পড়তে হয় নানামুখী প্রতিবন্ধকতায়। সড়কে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির একটি দৃশ্যের দেখা মিলেছে সম্প্রতি। গতকাল খোলা কাগজে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, বছরের পর বছর যে রাস্তা দিয়ে লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার শৌলমারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা চলাফেরা করতেন সেই রাস্তাসহ শৌলমারী চরাঞ্চল কাঁটাতার দিয়ে ঘিরে ফেলেছে ‘ইন্ট্রাকো সোলার পাওয়ার লিমিটেড’। ফলে শৌলমারী চরের মানুষদের আড়াই কিলোমিটার ঘুরে চলাচল করতে হয়। এতে ওই এলাকাবাসী চরম বিপাকে পড়েছেন। স্থানীয়রা বলছেন, এ নিয়ে তারা সরকারি বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ করেও কোনো ফল পাচ্ছেন না।
সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল ৯টায় শিক্ষকরা দাঁড়িয়ে রয়েছেন শৌলমারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যাবেন। কিন্তু নৌকা না পাওয়ায় সেখানে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় অনেক সময়। উপায় না পেয়ে তারা হাঁটু পানিতে পথ পার হয়ে যান বিদ্যালয়ে। একসময় মূলত এই পথই ছিল উপজেলার মূল ভূখ-ের সঙ্গে চরবাসীর যোগাযোগের রাস্তা। কিন্তু সেই রাস্তাটি বন্ধ করে দেয় ‘ইন্ট্রাকো সোলার পাওয়ার লিমিটেড’। সেই রাস্তাটিও সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের নামে ‘ইন্ট্রাকো সোলার পাওয়ার লিমিটেড’-এর সাইনবোর্ড লাগিয়ে কাঁটাতারে ঘিরে দখলে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ফলে যেসব লোকজন বাপ-দাদার আমল থেকে ওই রাস্তা দিয়ে কালীগঞ্জ উপজেলা সদরে যাতায়াত করছিলেন তাদের যেন দুর্ভোগের শেষ নেই। এতে চরের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি শিক্ষকরাও পড়েছেন চরম বিপাকে।
শৌলমারী চরে শিক্ষার আলো জ¦ালানোর দায়িত্বে যেসব শিক্ষক রয়েছেন তাদের প্রায় সবার বাড়ি কালীগঞ্জ উপজেলা সদরের আশপাশে। প্রতিদিন স্কুলে যেতে প্রথমে নৌকাযোগে পরে দীর্ঘপথ হেঁটে শৌলমারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পৌঁছতে হয় তাদের। কিন্তু নদীর ঘাট থেকে যে রাস্তাটা সরাসরি গিয়ে স্কুলে ঠেকেছে, সেটি যে কাঁটাতারে ঘিরে ফেলবে বেসরকারি কোনো কোম্পানি তা জানা ছিল না তাদের। তাই বাধ্য হয়ে কাঁটাতারের ফাঁক দিয়ে পথ পেরিয়ে স্কুলে যাতায়াত করতে হচ্ছে তাদের। শৌলমারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ইতি মনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ওই রাস্তা দিয়েই স্কুলে যাওয়া আসা করছি। এখন সেই রাস্তাটি বন্ধ হওয়ায় বাধ্য হয়েই কাঁটাতারের ফাঁক দিয়ে বেশ ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে। অনেক সময় কাঁটাতারের ফাঁকে কাপড় ছিঁড়ে যায়।
ভোটমারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আহাদুল হোসেন চৌধুরী কাঁটাতারে রাস্তা বন্ধের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ওই রাস্তাটি সরকারি বরাদ্দে আমি নিজেও কয়েকবার মেরামত করেছি। এখন সেটি বন্ধ থাকায় স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ এলাকার মানুষজন খুবই সমস্যায় পড়েছে। এ নিয়ে অভিযোগ জানিয়েও প্রশাসন কিছুই করছে না বলে উল্লেখ করেন তিনি। তবে ওই সোলার কোম্পানির কালীগঞ্জ অফিসের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা উত্তম রায় দাবি করে বলেন, ‘আমরা পাশ দিয়ে আর একটা রাস্তা করে দিয়েছি।’ সড়ক বন্ধ করে কোনো প্রকল্প বাস্তবায়ন কতটুকু শোভন! জনপথ বেড়ামুক্ত করতে সংশ্লিষ্টরা উদ্যোগী হবেন বলেই প্রত্যাশা।
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228