নিজের পায়ে কুড়াল মারবেন না
সম্পাদকীয়
🕐 ১:১৭ অপরাহ্ণ, মে ০৮, ২০২১
রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গাছকাটা নিয়ে যখন ক্ষোভে-প্রতিবাদে উত্তপ্ত হয়ে আছে পরিবেশ ও প্রকৃতিবাদীরা সে সময়েই এল আরেকটি ‘সর্বনাশের’ খবর! কক্সবাজারে বনভূমি দখল করে নির্মিত হচ্ছে আলীশান অট্টালিকা। গতকাল খোলা কাগজে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, বনবিভাগের জায়গায় গড়ে উঠছে অবৈধ বিলাসবহুল দালান-কোঠা। আর বনবিভাগের অভিযান যাতে না হয় সেই তদবির করে চলেছেন ঘরমালিক ফিরোজ। বিভাগীয় বন কর্মকর্তার কাছে কক্সবাজারের শীর্ষনেতাদের দিয়ে ফোনে তদবির চলছে বলে জানা গেছে। কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের ফুলছড়ি রেঞ্জ। এর বিভিন্ন বনবিট এলাকায় থেমে থেমে চলছে বনভূমি দখল উচ্ছেদ। এসব অভিযানে প্রকৃতিপ্রেমীদের মাঝে খুশি বিরাজ করলেও ক্ষোভে ফুঁসছে ভাঙনের কবলে পড়া দখলকারীরা। কারও ঝুপড়ি, কারও কাঁচা বাড়ি বা কারও বনের সমতল এলাকার ঘর ভাঙা হচ্ছে।
অন্যদিকে ফুলছড়ি রেঞ্জের নাপিতখালী বিটের সড়কের পাশে বনায়ন ও পাহাড় কেটে উঠতে থাকা সুরম্য ভবনটি ভাঙা হচ্ছে না। কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ঈদগাঁ থানা ভবনও ফকিরাবাজারের পাশে লাগোয়া সামাজিক বনায়নের গাছ ও পাহাড় কেটে প্রায় দু’একর জমি কাঁটাতারে ঘিরে বিশালাকার দৃষ্টিনন্দন ভবন তুলছেন ফিরোজ আহমদ নামে (স্থানীয়ভাবে থানার দালাল হিসেবে পরিচিত) এক ব্যক্তি। ভবনের পাশে তৈরি হয়েছে টিনের ছাউনি দেওয়া ভাড়া বাসাও। স্থানীয়রা বলছেন, বনবিভাগসহ সব সেক্টর ম্যানেজ করেই ফিরোজ অত্যাধুনিক বাড়ি করছেন। ২০২০ সালের করোনাকাল থেকে ভবন নির্মাণ কাজ এক বছর ধরে চলছে। কিন্তু বনবিভাগ, পরিবেশ অধিদপ্তর কিংবা অন্য কোনো সংস্থা দৃশ্যমান এ নির্মাণ কাজে বাধা দিতে যায়নি। ফলে স্থানীয় বনপ্রেমী জনতা কিংবা পরিবেশবাদী সংগঠনও প্রতিবাদ করছে না।
বনবিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এমন অভিযানের জন্য প্রয়োজন পর্যাপ্ত জনবল। ফিরোজ ভবন করে ফেলেছেন। এখন একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করতে হবে। কিন্তু এতে স্থানীয়রা সার্বিকভাবে সহযোগিতা পাচ্ছেন না। জেলা প্রশাসনের সহযোগিতা পেলে শিগগিরই বনবিভাগ অভিযান চালাবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। এদিকে বনবিভাগের জমিতে ভবন তোলার কথা স্বীকার করে ফিরোজ আহমদ বলেন, ‘যেখানে বাড়ি করেছি, এটি বনবিভাগের জায়গা ঠিক আছে। কিন্তু শুধু আমি কেন, আমার পাশে অনেকেই বন বিভাগের জমিতে ঘর করে আছে। আমার বাবা এখানে বাড়ি করেছেন অনেক আগে। বাড়িটি আমি সংস্কার করেছি মাত্র।’
এ বিষয়ে ঈদগাঁ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল হালিম বলেন, ‘আমি আসার পর থেকে একবার তাকে দেখেছি। এরপর তার থানায় ঢোকা নিষেধ করা হয়েছে।’ কক্সবাজার বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (উত্তর) তহিদুল ইসলাম বলেন, ‘কক্সবাজারের বন দেশ এবং স্থানীয়দের সম্পদ। এটি রক্ষায় বন বিভাগকে সহযোগিতা করা সবার দায়িত্ব। ভবনটির বিষয়ে জেনেছি। বনবিভাগ থেকে উচ্ছেদ মামলা করা হয়েছে। আমরা আশা করছি শিগগিরই এই বনভূমি উদ্ধার করতে পারব।’ বনভূমি গ্রাস মানে নিজের পায়েই কুড়াল মারা। এটা দখলবাজরা অনুধাবন করে পিছিয়ে এলে নিজেদেরই মঙ্গল। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সংশ্লিষ্টরা পরিবেশ-প্রকৃতি বাঁচাতে এগিয়ে আসবেন বলেই প্রত্যাশা।
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228