উদ্যানের সবুজকে হত্যা করবেন না
সম্পাদকীয়
🕐 ১২:০৩ অপরাহ্ণ, মে ০৭, ২০২১
যে পরিমাণ গাছপালা দরকার বাংলাদেশের, তা নেই। বরং নানাভাবেই কমছে গাছ। যে হারে কাটা হচ্ছে, সে হারে রোপণ হচ্ছে না। রোপণ হলেও চারা থেকে বৃক্ষ থেকে যে সময় প্রয়োজন তাও কম নয়। এর মধ্যে দেশের গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থান থেকে গাছ কাটার সংবাদ এলে সেটা অস্বস্তিই বয়ে আনে! রমনা পার্ক-সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে বলা হয় ঢাকার ফুসফুস। সবুজে ঘেরা পাখ-পাখালির কিচিরমিচির শব্দে মুখরিত এ উদ্যানে নগরবাসীর কাটে স্বস্তির সময়। অথচ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রকৃতির রূপ ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে খোদ সরকারি প্রতিষ্ঠান। রেস্টুরেন্ট বানানোর নামে উদ্যানের অর্ধ-শতাব্দীর শতাধিক পুরনো গাছ কেটে উজাড় করছে গণপূর্ত অধিদফতর।
কয়েক দিন ধরে খোদ রাজধানীর বুকে বৃক্ষ হত্যার এই আয়োজন দেখে হতাশা আর ক্ষোভে উদ্বেলিত নগরবাসী। গাছ কাটার প্রতিবাদে ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বইছে সমালোচনার ঝড়। এর আগেও কয়েকবার উদ্যানের গাছ কাটার উদ্যোগ নিয়েছিল সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এমনকি গাছের যাতে কোনো ক্ষতি না হয় সেজন্য স্বাধীনতা জাদুঘরও নির্মাণ করা হয়েছে উদ্যানের মাটির নিচে। তাই এ সামান্য রেস্টুরেন্ট বানাতে নির্দয়ভাবে গাছ কাটা মেনে নিতে পারেননি নগরবাসী। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সব প্রবেশপথসহ বিভিন্ন স্থানে অন্তত ৭টি রেস্টুরেন্ট স্থাপন করার কাজ শুরু করেছে গণপূর্ত বিভাগ। তাদের দাবি, এ জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদনও রয়েছে। এ বিষয়ে গণপূর্ত অধিদফতর জানায়, নিয়ম মেনেই গাছ কাটা হচ্ছে!
নিয়মানুযায়ী নগরে ২৫ ভাগ বনভূমি থাকতে হবে। রাজধানীতে ২৫ ভাগ বনভূমি নেই উল্লেখ করে নগর পরিকল্পনাবিদ স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, সবুজ ধ্বংস করে রেস্টুরেন্ট বানানো ভয়াবহ অপরাধ। এর বিরুদ্ধে সবাইকে সোচ্চার হতে হবে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নিয়মিত আড্ডা দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। গাছ কাটার প্রতিবাদে সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আয়োজন করে শিল্প প্রদর্শনীর। এ সময় ক্ষোভ প্রকাশ করে এক শিক্ষার্থী জানান, ইতিহাসের সাক্ষী সবুজের সমারোহ গাছ-গাছালির ছায়াঢাকা পাখিডাকা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। দেশের নতুন প্রজন্ম, পরবর্তী প্রজন্ম বংশ পরম্পরায় শত শত বছর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান দেখবে এবং ঐতিহাসিক গুরুত্বকে স্মরণ করবে। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত স্থানগুলো চিহ্নিত করেই ঢাকার এই খোলা ময়দানকে উন্মুক্ত রাখা সম্ভব।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে রাত কাটে ছিন্নমূলদের। এভাবে দয়া-মায়া-হীন গাছ কাটার কারণে তারাও ক্ষোভ প্রকাশ করে। এক পথ-কিশোর বলে, গাছগুলো থাকলে আমাদের মাথার ওপর ছাদ থাকে। গত মঙ্গলবার ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অযথা রেস্টুরেন্ট নির্মাণ ও নির্বিচারে গাছ নিধন বন্ধ করাসহ ৬ দফা সুপারিশ জানিয়েছে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা)। তবুও গাছ কাটা বন্ধ করেনি গণপূর্ত অধিদফতর। সরেজমিনে দেখা যায়, নতুন করে আরও অনেক গাছের গায়ে ‘লাল চিহ্ন’ দেওয়া হয়েছে; যেগুলোও কাটা হবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে রাতের আঁধারেও গাছ কেটে নেওয়া হয়। এই বৃক্ষহত্যা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। রক্ষণাবেক্ষণের বদলে ‘ভক্ষণ’ অনুচিত। বঙ্গবন্ধু তথা মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এমন নেতিবাচক কর্মকা- কাম্য নয়। সংশ্লিষ্টরা বিষয়টি নতুন করে ভাববেন বলেই প্রত্যাশা।
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228