মাদক নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ কাম্য
সম্পাদকীয়
🕐 ৯:৫৯ পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ১২, ২০২১
মাদকের রয়েছে নানামুখী কুফল। তবুও মাদক থেকে বিরত হচ্ছে না একশ্রেণির মানুষ। আরেক শ্রেণির অর্থলোলুপ মানুষ মাদকাসক্তদের বদৌলতে গড়ে তুলছে টাকার পাহাড়। গতকাল খোলা কাগজে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, মিয়ানমার সীমান্তবর্তী টেকনাফ বলতে গেলে ইয়াবা পাচারকারীদের কাছে স্বর্গরাজ্য। দীর্ঘদিনের চেষ্টায়ও এ অঞ্চলের জমজমাট ইয়াবা ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের কেন্দ্র করেও এই মাদক পাচার চলছে। সম্প্রতি নোয়াখালীর ভাসানচর দ্বীপে স্থানান্তর করা রোহিঙ্গাদের কাছ থেকেও পাওয়া গেছে ইয়াবা। ফলে প্রাণঘাতী এই মাদক পাচারের গতিপথ ও বিস্তৃতি নিয়ে শঙ্কা আরও বাড়ল। তবে পুলিশের দাবি, কক্সবাজার থেকে নোয়াখালীর ওই দ্বীপে যাওয়ার সময়ই শরণার্থীরা সেখানে এই মাদক নিয়ে গেছেন।
ভাসানচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহে আলম জানান, গত ১৯ জানুয়ারি থানাটি উদ্বোধনের পর থেকে এখন পর্যন্ত এক হাজার ২৩৩ পিস ইয়াবাসহ চার রোহিঙ্গাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মাদক নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দিয়ে তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তিনি জানান, সর্বশেষ গত বুধবার ৬০৩ পিস ইয়াবাসহ নুর মোহাম্মদ নামের এক রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়েছে। এর আগে ৬৩০ পিস ইয়াবাসহ তিন জনকে আটক করে পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটককৃতরা জানিয়েছে, কক্সবাজারের শরণার্থী শিবির থেকে ভাসানচরে আসার সময় নিজেদের জিনিসপত্রের মধ্যে করে এসব ইয়াবা নিয়ে এসেছিল তারা। কক্সবাজারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত ডিসেম্বর থেকে ছয় দফায় মোট ১৭ হাজার ৯৯৫ জন রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে নিয়ে গেছে সরকার।
কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরগুলোতে সহিংসতার অন্যতম কারণ ছিল ইয়াবা ব্যবসাÑ এমনটা দাবি করে ভাসানচরের রোহিঙ্গা নেতা নুরুল ইসলাম মুঠোফোনে জানান, ‘সেখানকার পরিস্থিতি খুবই খারাপ ছিল। ভেবেছিলাম ভাসানচরে এসে অন্তত শান্তিতে থাকা যাবে। কিন্তু এখানেও ইয়াবা পৌঁছে যাওয়াটা আমাদের জন্য দুশ্চিন্তার বিষয়।’ ভাসানচরেও মাদক ব্যবসা শুরু হলে অশান্তি নেমে আসবে মন্তব্য করেন টেকনাফের লেদা ডেভেলপমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলম। তিনি বলেন, ‘যারা সেখানে মাদক ব্যবসা চালুর চেষ্টা করছে তাদের চিহ্নিত করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। বিশেষ করে রোহিঙ্গাদের দ্বীপে নেওয়ার সময় তাদের মালপত্রের ব্যাগগুলো কঠোরভাবে তল্লাশি না করায় তারা মাদক বহনের সুযোগ পাচ্ছে।’
কক্সবাজারের শিবিরগুলো থেকে ভাসানচরগামী রোহিঙ্গাদের প্রথমে উখিয়ার ট্রানজিট ক্যাম্পে এনে রাখা হয়। সেখান থেকে তাদের চট্টগ্রামে জাহাজ পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হয় পুলিশ পাহারায়। তবে ওই সময় কাউকে তল্লাশি করা হয় না বলে জানান আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন-৮ (এপিবিএন) এর অধিনায়ক শিহাব কায়সার খান। তিনি বলেন, ‘উখিয়া ট্রানজিট পয়েন্ট থেকে জাহাজ পর্যন্ত তাদের নিরাপদে পৌঁছানোর দায়িত্ব পালন করি আমরা। এর আগে অন্যান্য বাহিনী তাদের দেখভাল করে।’ মানবিক কারণেই বাংলাদেশ আশ্রয় দিয়েছিল মিয়ানমারে দমনপীড়নের শিকার রোহিঙ্গাদের। অন্য দেশে এসে সেই তারাই অপরাধমূলক কাজে জড়িত হবেন এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। মাদক নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ ও অপরাধীদের শনাক্তকরণে সংশ্লিষ্ট আরও তৎপর হবেন বলেই আমাদের প্রত্যাশা।
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228