ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

ই-সিগারেটে নিয়ন্ত্রণ কাম্য

সম্পাদকীয়
🕐 ১২:২৮ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০২১

ই-সিগারেটে নিয়ন্ত্রণ কাম্য

তামাক ও তামাকজাত পণ্য সুস্বাস্থ্যের অন্তরায়। সরকারও বিভিন্ন সময়ে এর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় প্রচারণা চালিয়েছে। তবুও বন্ধ হয় না ব্যবহার। বরং তামাক ফিরে আসছে নতুন নতুন চেহারা নিয়ে! সম্প্রতি খোলা কাগজে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে ইমার্জিং টোব্যাকো প্রোডাক্টস-এর (ই-সিগারেট, ভ্যাপিং, হিটেড টোব্যাকো প্রোডাক্ট) ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ বা বন্ধে কোনো পদক্ষেপ না থাকায় এর ব্যবহার তরুণ এবং যুব সমাজের মধ্যে উদ্বেগজনক হারে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। রাস্তা, ক্যাম্পাস, তরুণদের আড্ডাস্থল, বিভিন্ন মার্কেট এবং রাস্তার মোড়ে গড়ে ওঠা ভ্যাপিং ক্লাবে এসব পণ্যের ব্যবহার ব্যাপক হারে চোখে পড়ছে। এ ছাড়া ঢাকা ও বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে গড়ে উঠেছে অনেক বিক্রয় কেন্দ্র। অনলাইন এবং ফেসবুকে ব্যাপকভাবে ই-সিগারেট সামগ্রী নিয়ে আলোচনা, বিক্রয় হয়। তারপর হচ্ছে হাতবদল।

 

মূলত তরুণ এবং শিশুদের টার্গেট করে বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এসব ইমার্জিং টোব্যাকো প্রোডাক্টস উৎপাদন ও বাজারজাত করছে তামাক কোম্পানিগুলো। উদ্ভাবনী কৌশল এবং আকর্ষণীয় ডিজাইনের কারণে কিশোর এবং তরুণদের মাঝে বিশেষত বিদ্যালয়গামী শিশুদের মধ্যে এসব তামাকপণ্যের জনপ্রিয়তা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এসব পণ্য ব্যবহারের মাত্রা কতটা বিস্তার লাভ করেছে সে বিষয়ে সর্বশেষ কোনো গবেষণালব্ধ তথ্য-উপাত্ত নেই। গ্লোবাল অ্যাডাল্ট টোব্যাকো সার্ভে ১৫ বছর ও তদূর্ধ্ব জনগোষ্ঠীর মধ্যে পরিচালিত হয় বলে এই গবেষণার মাধ্যমে ইমার্জিং টোব্যাকো প্রোডাক্ট ব্যবহারের প্রকৃত চিত্র পাওয়া কঠিন।

সর্বশেষ আদমশুমারি অনুযায়ী বাংলাদেশের মোট জনগোষ্ঠীর ৪৯ শতাংশই তরুণ, যাদের বয়স ২৪ বছর বা তার নিচে। অর্থাৎ বাংলাদেশ এখন ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ট সময়কাল অতিবাহিত করছে যেখানে, নির্ভরশীল জনগোষ্ঠীর তুলনায় কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বেশি। একটি দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং ইতিবাচক পরিবর্তনে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ট জনগোষ্ঠীর অবদান অতি গুরুত্বপূর্ণ। তামাক কোম্পানিগুলোও এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে এই বিশাল তরুণ জনগোষ্ঠীকে যেকোনো উপায়ে তামাকপণ্য ও ইমার্জিং টোব্যাকো প্রোডাক্টে আসক্ত করে নিজেদের ব্যবসা সম্প্রসারণ এবং মুনাফা বৃদ্ধি করতে চায়। এজন্য তারা ইমার্জিং টোব্যাকো প্রোডাক্টস অর্থাৎ ইলেক্ট্রনিক সিগারেট, ভ্যাপিং, হিটেড টোব্যাকো প্রোডাক্ট ইত্যাদিকে সিগারেটের ‘নিরাপদ বিকল্প’ হিসেবে ভোক্তা এবং নীতিনির্ধারকদের সামনে উপস্থাপন করছে।

বিশ^স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক প্রকাশিত এ প্রতিবেদনে ই-সিগারেটকে সুনিশ্চিতভাবে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর পণ্য হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ইউএস সার্জন জেনারেল রিপোর্ট ২০১৬ এ ই-সিগারেটসহ নিকোটিনযুক্ত সকল পণ্যকে ‘অনিরাপদ’ বলে অভিহিত করা হয়েছে। বিশেষ করে ২০১৯ সালে ই-সিগারেট বা ভ্যাপিং-সৃষ্ট শ্বাসসযন্ত্রের জটিলতা যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন রাজ্যে মহামারীর আকার ধারণ করলে এই ইমার্জিং টোব্যাকো প্রোডাক্টসগুলোর সত্যিকারের চেহারা আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসে। বাংলাদেশে ইমার্জিং টোব্যাকো প্রোডাক্টসের ব্যবহার বাড়লেও বন্ধে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। বিদ্যমান পরিস্থিতি বিবেচনায় ইমার্জিং টোব্যাকো প্রোডাক্ট অর্থাৎ ই-সিগারেটসহ সকল ভ্যাপিং এবং হিটেড তামাকপণ্যের উৎপাদন, আমদানি, বিক্রয় ও বাজারজাতকরণ নিষিদ্ধ করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। আমরাও মনে করি, সরকারকে এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমেই সম্ভব নাগরিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা।

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper