কিশোর অপরাধ দমন জরুরি
সম্পাদকীয়
🕐 ১:৩৮ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২১
নানা ধরনের অপরাধে কিশোরদের জড়ানোর প্রবণতা কমেনি বরং বেড়েছে। অপরাধের পরিধিও বেড়েছে। কিশোরদের অপরাধে জড়ানো নিয়ে বেশ কিছু গবেষণা থাকলেও সেগুলোর প্রতি নজর বা তা থেকে প্রতিকারের ব্যবস্থা নেওয়ার আগ্রহ সরকারের বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলোর নেই। আইন ও নীতিমালা থাকলেও তার বাস্তবায়ন হচ্ছে না। জাতিসংঘ শিশু সংস্থা ইউনিসেফের হিসেবে বাংলাদেশে কিশোর-কিশোরীদের সংখ্যা তিন কোটি ৬০ লাখ।
বর্তমান সময়ে অনেক কিশোর-কিশোরী অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। করোনায় লকডাউনের সময় কিশোর অপরাধীরা খানিকটা নিষ্ক্রিয় ছিল। স্বাস্থ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা খানিক শিথিল হওয়ার পর তারা আবার তৎপর হয়ে উঠেছে। প্রায় এক বছর ধরে বন্ধ আছে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এতে কিশোরদের মধ্যে পড়াশোনার চাপ ও আগ্রহ দুটিই কমে গেছে। এতে পাড়ায়-মহল্লায় চায়ের দোকানে কিশোরদের আড্ডা বেড়ে গেছে। এ সুযোগকেই কাজে লাগাচ্ছে এলাকাভিত্তিক গ্রুপগুলো। তারা নিজেদের দল ভারী করতে এসব কিশোরকে দলে টানছে। এর মধ্য দিয়েই কিশোররা জড়িয়ে পড়ছে মাদক-ইভটিজিং-ছিনতাইসহ নানা অপরাধে। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করতে জড়িয়ে পড়ছে খুনোখুনিতেও। এমনকি তারা টিকটক লাইকিকে কেন্দ্র করে নতুন করে গ্যাং গড়ে তুলছে। টিকটকের নায়িকা বানানোর টোপ দিয়ে কিশোরী ধর্ষণের মতো অপরাধে মামলাও হয়েছে রাজধানীর ভাটারা থানায়।
কিশোররা জড়িয়ে পড়ছে জঙ্গিবাদেও। মোটরসাইকেল নিয়ে দিনে দুপুরে তাদের মহড়া দেওয়া, মেয়েদের উত্ত্যক্ত করাসহ নানা অপকর্মে অতিষ্ঠ হয়ে উঠছেন এলাকার মানুষ। পুলিশের কাছে কিশোর অপরাধের যে রেকর্ড আছে তাতে দেখা যায়, ঢাকা ও এর আশপাশে ১২টি কিশোর গ্যাং সক্রিয়। এর আটটির সঙ্গেই রাজনৈতিক নেতাদের সম্পৃক্ততার অভিযোগ পাওয়া যায়। আর সারা দেশে আরও কমপক্ষে ৩৫টি কিশোর গ্যাং রয়েছে। কিন্তু কেন কিশোররা অপরাধে জড়াচ্ছে? সংশ্লিষ্ট গবেষকদের মতে, কিশোরদের অপরাধ থেকে বিরত রাখতে পারে পরিবার, সমাজ, ধর্ম ও বন্ধুবান্ধব। এটা মূলত সামাজিক নিয়ন্ত্রণ। আজকাল এই নিয়ন্ত্রণ অনেকখানি ফিঁকে হয়ে গেছে। আগে কিশোররা প্রকাশ্যে ধূমপান করলেও পাড়ার মুরব্বিরা শাসন করতেন। এখন সে শাসন কমে গেছে। প্রযুক্তি ও বিশ^ায়নের সঙ্গে অভিভাবকরা অনেক সময় তাল মেলাতে পারছেন না। সন্তান কী করে সময় কাটায়, ডিজিটাল ডিভাইস হাতে নিয়ে তারা কী করে- সেটা অনেক ক্ষেত্রেই অভিভাবকরা বুঝে উঠতে পারেন না।
পুলিশের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, কিশোর অপরাধ দমনে তারা তৎপর রয়েছেন। গোয়েন্দা পুলিশের নজরদারি অব্যাহত রয়েছে। তাদের মতে, কিশোর গ্যাংয়ে যদি রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা জড়িত থাকেন তাহলে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। কিশোর অপরাধীদের তৎপরতা এরই মধ্যে কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। বিট পুলিশিংয়ের সদস্যদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এলাকার মাদক ও কিশোর গ্যাং গ্রুপগুলোকে প্রতিরোধ করার। গুরুত্বের সঙ্গে তারা এ দায়িত্ব পালন করছেন। ঢাকা নগরীতে নিম্ন আয়ের অভিভাবকদের সন্তান এসব কিশোর গ্যাংয়ের মধ্যে বেশি জড়িয়ে পড়ছে। কিশোর গ্যাংগুলো এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করছে। এসব বিষয়ে অভিভাবকদের সতর্ক থাকতে হবে। সে সঙ্গে এলাকার সচেতন নাগরিকদেরও খেয়াল রাখতে হবে। সব শিশুকে শিক্ষা কার্যক্রমের আওতায় রাখা এবং শিশু একাডেমি ও শিল্পকলা একাডেমির মতো প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা জোরালো করতে হবে। কিশোর উন্নয়নে অনেকগুলো পক্ষের সম্পৃক্ততা ও সমাজের সংশ্লিষ্ট সকল মহলের সচেতনতা জরুরি।
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228