বাল্যবিয়ের অভিশাপ থেকে মুক্তি পাক কিশোরীরা
সম্পাদকীয়
🕐 ১১:৫০ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ০৫, ২০২০
আক্ষরিক অর্থেই বাল্যবিয়ে এক ধরনের অভিশাপ। বিশেষ করে কিশোরীদের জন্য। বাল্যবিয়ের কারণে একটি কিশোরী জীবনের শুরুতেই বড় ধরনের হুমকিতে পড়ে। তার ভবিষ্যৎ জীবনও হয়ে পড়ে অন্ধকারাচ্ছন্ন। এ বিষয়ে প্রকাশিত গতকাল খোলা কাগজের প্রতিবেদনে বলা হয়, চলমান করোনা পরিস্থিতিতে হঠাৎ বাল্যবিয়ে বেড়ে গেছে দেশে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা পরিস্থিতিতে দারিদ্র্য বৃদ্ধি পাওয়া, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকা, নিরাপত্তাহীনতাসহ বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার কারণে বাল্যবিয়ের জন্য কিশোরীদের ওপর চাপ সৃষ্টি হচ্ছে, যা অনেক ক্ষেত্রে তাদের মৃত্যুঝুঁকিতে ফেলে দিচ্ছে।
গত ২৬ অক্টোবর টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার ফুলকি পশ্চিমপাড়া গ্রামে বিয়ের ৩৪ দিনের মাথায় অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী নুর নাহারের (১৪) মৃত্যু নিয়ে এরই মধ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে সচেতন মহল। ওই কিশোরীকে বিয়ে দেওয়া হয়েছিল ৩৫ বছর বয়সী রাজীব খানের সঙ্গে। অপ্রাপ্ত বয়সে বিয়ে হওয়ায় শারীরিক সম্পর্কের কারণে মেয়েটির রক্তক্ষরণ হয়, যার পরিণতিতে সে মারা যায়। সব শেষ কুড়িগ্রামের উলিপুরে নবম শ্রেণির এক ছাত্রীকে বিয়ে করে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেন ৪৫ বছরের ইউপি চেয়ারম্যান আবু তালেব সরকার। ইউনিসেফের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, বিশে^ বাল্যবিয়েতে শীর্ষে থাকা ১০টি দেশের মধ্যে ৮ম অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। আর তালিকায় থাকা বাকি নয়টি দেশই আফ্রিকার। গত বছর এই তালিকায় পঞ্চম অবস্থানে ছিল বাংলাদেশ।
সংস্থাটি বলছে, যদিও বাংলাদেশে বাল্যবিয়ের প্রবণতা ১৯৭০ সালের তুলনায় ৯০ শতাংশেরও বেশি কমেছে, তা সত্ত্বেও এখনও এই হার অনেক বেশি। বর্তমানে দেশের ২০-২৪ বছর বয়সী নারীদের ৫১ শতাংশের বিয়ে হয়েছে তারা শিশু থাকা অবস্থাতেই। এটি এই দেশকে ৩ কোটি ৮০ লাখ ‘শিশু কনের’ দেশে পরিণত করেছে, যাদের বিয়ে হয়েছে তাদের ১৮তম জন্মদিনের আগেই। আবার এদের মধ্যে ১ কোটি ৩০ লাখ নারীর বিয়ে হয়েছে তাদের বয়স ১৫ বছর হওয়ার আগেই। এছাড়া বাংলাদেশ জনমিতি ও স্বাস্থ্য জরিপের তথ্যানুযায়ী, গেল ৩ বছর ধরে দেশে বাল্যবিয়ের হার বেড়েছে। ২০১৭ ও ১৮-তে বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছেন ৬০ শতাংশ নারী। ইউনিসেফের কনসালটেন্ট পুলিক রাহা বলেন, কোভিড আসার পর দেশের গরিব পরিবারগুলো নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে শুরু করে, তাদের টাকা-পয়সা ও ইনকাম কমে যায়।
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা বলেন, বিভিন্ন গবেষণার কাজে গিয়ে টাঙ্গাইলের নুর নাহারের মতো বাল্যবিয়ের শিকার অনেক মেয়ের সঙ্গেই কথা হয়েছে, যাদের বয়স এখন ১৬-১৭ বছর। তাদের বিয়েও হয়েছে দু-তিন বছর আগে। তাদেরও বিয়ের পর অনেক রক্তক্ষরণ হয়েছে। তবে তাদের ভাগ্য হয়তো কিছুটা ভালো, তারা এখনও বেঁচে আছে। বাস্তবতা যখন এই পর্যায়ে তখন আসলেই কি সম্ভব হবে বাল্যবিয়ে ঠেকানো? এ পর্যন্ত যা ঠেকানো হয়েছে তা আদতে খুবই কম। মূলত দারিদ্র্যের কারণেই বাল্যবিয়ের প্রাদুর্ভাব দেখা যাচ্ছে। দারিদ্র্যের কষাঘাত থেকে মুক্তির পাশাপাশি জনসচেতনতাও জরুরি বাল্যবিয়ে বন্ধে। কিশোর-কিশোরীর জীবন কুঁড়িতেই যেন বাধাগ্রস্ত না হয়। বিশেষ করে কিশোরীদের এ অভিশাপ থেকে মুক্তি দিতে সংশ্লিষ্টরা আরও আন্তরিক হবেন বলেই প্রত্যাশা।
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228