শ্রমিকবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করুন
সম্পাদকীয়
🕐 ১০:০০ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ২৪, ২০২০
করোনাভাইরাস যে সংকট ও নেতিবাচক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছিল, সেটা নানা ক্ষেত্রে বিরাজমান এখনো। তবে তৈরি পোশাকশিল্পে সৃষ্টি হচ্ছে স্বস্তির পরিবেশ। এ স্বস্তির মধ্যেও রয়েছে অস্বস্তির চোরাকাঁটা। গতকাল খোলা কাগজে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনা অভিঘাত মোকাবিলা করে অনেকটাই স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসেছে। ফিরেছে তৈরি পোশাকের কার্যাদেশও। করোনা আক্রান্ত ঊর্ধ্বমুখী সময়ে শ্রমিক ছাঁটাই করা হয়েছিল। কিন্তু এখন কার্যাদেশ বাড়লেও শ্রমিক বাড়ানো হচ্ছে না। শ্রমিক ও শ্রমিক সংগঠনগুলো বলছে, কম শ্রমিক দিয়ে আগের একই কাজ করানো হচ্ছে। ফলে শ্রমিকদের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। অন্যদিকে উদ্যোক্তারা বলছেন, চাপ সৃষ্টি হওয়ার মতো কার্যাদেশ এখনো আসেনি।
করোনাকালে প্রায় প্রতিটি কারখানায় শ্রমিক ছাঁটাইয়ের ঘটনা ঘটে। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, ১১৭টি কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। অবশ্য বিজিএমইএর মতে, বন্ধ হওয়া কারখানার সংখ্যা তিন শতাধিক। এর বাইরে আংশিকভাবে লে-অফ ও ছাঁটাইয়ের ঘটনা ঘটে। মহামারীর ভয়াবহতা কমে এলে তৈরি পোশাক কারখানার কার্যাদেশ স্বাভাবিক হতে থাকে। এ সময় কম শ্রমিক দিয়েই উৎপাদনের স্বাভাবিক ধারা অব্যাহত রাখেন মালিকরা; শ্রমিকদের ওপর বাড়তি লক্ষ্যমাত্রা দিয়ে দেওয়া হয়। এ বিষয়ে গার্মেন্ট শ্রমিক ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক সৌমিত্র কুমার বলেন, সাভার-আশুলিয়া শিল্পাঞ্চল থেকে অহরহ খবর আসছে। ৮ ঘণ্টার পর বাড়তি সময় কাজ করতে না চাইলে শ্রমিকদের ছাঁটাইয়ের হুমকি দেওয়া হচ্ছে।
গার্মেন্টস শ্রমিক সাথী আক্তার মিরপুর-১০ নম্বর সেকশনের একটি কারখানায় অপারেটর হিসেবে কাজ করেন। তিনি জানান, তিনি সকাল সাড়ে ৭টায় বাসা থেকে বের হন। সপ্তাহের অধিকাংশ দিনই সকাল ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত কারখানায় কাজ করেন। বাসায় ফেরেন সাড়ে ১০টায়। বাসায় জরুরি কাজ থাকলেও সাধারণ ডিউটি করে ফিরতে পারেন না। বাড়তি ডিউটি করতে না চাইলে চাকরিচ্যুতির ভয় দেখানো হয়। সাথী বলেন, আমরা আর পারছি না। কখনো কখনো ওভারটাইমের টাকা ছাড়াই কাজ করানো হয়। আবার কখনো কখনো শিপমেন্টের কথা অতিরিক্ত কাজ করানো হয়।
জিম্মি করে উৎপাদন বাড়ানো সঠিক পন্থা নয়। করোনার মধ্যে যে শ্রমিক উৎপাদন বৃদ্ধি অব্যাহত রেখেছে, সেই শ্রমিককে চাকরির ভয় দেখিয়ে উৎপাদন বৃদ্ধি করাটা অন্যায় বলে মনে করেন গার্মেন্ট শ্রমিক ঐক্য ফোরামের সভাপতি মোশরেফা মিশু। তিনি বলেন, কারখানা এলাকা থেকে অনেক শ্রমিক ফোন করে তাদের দুর্দশার কথা জানাচ্ছে। যে শ্রমিক মহামারীর মধ্যে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে উৎপাদন প্রক্রিয়াকে সচল করেছে, সেই শ্রমিককে ভয় দেখিয়ে বেশি উৎপাদন করিয়ে নেওয়া এবং শ্রমিকরা উৎপাদন করতে না চাইলে ছাঁটাই করা হলে খারাপ বার্তা যাবে। করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর ঊর্ধ্বমুখী সময়ে কারখানা খুলে দেওয়া হলে সব শ্রমিকই কাজে যোগ দেন। তখন ঝুঁকি নিয়ে অনেক শ্রমিক আক্রান্তও হন। মৃত্যুর ঘটনাও ঘটে। যে শ্রমিকরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অকাতরে শ্রম-ঘাম নিংড়ে দিচ্ছেন তাদের ওপর বাড়তি চাপ প্রয়োগ কাম্য নয়। সংশ্লিষ্টরা শ্রমিকবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করবেন বলেই আমাদের প্রত্যাশা।
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228