ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

হাওরে ফিরুক স্বস্তি

সম্পাদকীয়
🕐 ১০:০৯ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২০

দেশে হাওর-বাঁওড়কেন্দ্রিক পর্যটন বিকাশের সম্ভাবনা থাকলেও শেষপর্যন্ত সঠিক পরিকল্পনার অভাবে তা হয়ে ওঠেনি। উল্টো নেতিবাচক সংবাদের শিরোনাম হচ্ছে হাওর। অথচ চাইলে হাওর-জলেও বইয়ে দেওয়া যেত সুসংবাদের ধারা! গতকাল খোলা কাগজে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, বর্ষার পানিতে টইটম্বুর হাওর ক্রমেই মৃত্যুপুরী হয়ে উঠছে। বারবার ঘটছে নৌ দুর্ঘটনা। সুনামগঞ্জ-নেত্রকোনা হাওরে চলতি বছর জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৪ মাসে নৌ দুর্ঘটনায় ৩৬ জনের মর্মান্তিক প্রাণহানি ঘটেছে। গত বছরের সেপ্টেম্বরে সুনামগঞ্জের কালিয়াকোটা হাওরের নৌকাডুবিতে নিহত হন ১০ জন। গত এক বছরে হাওরে নিভেছে প্রায় অর্ধশত প্রাণ। প্রতিকূল আবহাওয়া, ধারণক্ষমতার বেশি যাত্রী বহন, নৌ ব্যবস্থাপনা না মানাসহ কিছু কারণে এসব দুর্ঘটনা ঘটছে বলে মনে করছেন হাওর পাড়ের মানুষ।

দুর্ঘটনা রুখতে ১৪ দফা নির্দেশনা মানার বাধ্যবাধ্যকতা দিয়েছে জেলা প্রশাসন। এসব নির্দেশনা ভাঙলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থার হুঁশিয়ারি দিয়েছে জেলা প্রশাসন। চলতি বছরের ২৭ জুন দিরাই উপজেলার কালনী নদীতে নৌকা ডুবিতে শিশুসহ ২ জনের মৃত্যু হয়। জুলাই-আগস্ট মাসে সুনামগঞ্জ জেলার ধর্মপাশা, তাহিরপুর ও ছাতক উপজেলায় নৌ-ডুবিতে ৫ জনের প্রাণহানি ঘটে। এদের মধ্যে ৩ জন তাহিরপুর উপজেলার। ৫ আগস্ট নেত্রকোনার মদন উপজেলার হাওরে নৌকা ডুবে ১৭ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। চলতি মাসের ৯ তারিখ সুনামগঞ্জ-নেত্রকোনার মধ্যবর্তী গুমাই নদীতে নৌকা ডুবিতে ১২ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়া গত বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর দিরাইয়ের কালিয়াকোটা হাওরে নৌকা ডুবে ৬ শিশুসহ ১০ জনের মৃত্যু হয়। বিচ্ছিন্নভাবেও প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে।

দুর্ঘটনার বিষয়ে হাওরপাড়ের বাসিন্দারা মনে করেন, সড়কপথে পরিবহন চলাচল করার জন্য নির্দিষ্ট নিয়মনীতি থাকলেও নৌপথে চলাচলে কোনো নিয়মনীতি নেই। এ কারণে ট্রলার বা নৌকাচালকরা ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী বহন করেন। ফলে প্রতিনিয়তই ঘটছে নৌ দুর্ঘটনার ঘটনা। নৌপথে এরকম দুর্ঘটনা রোধ করতে ট্রলার বা নৌকার ফিটনেস যাচাই, যাত্রী ধারণক্ষমতা, যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য লাইফ জ্যাকেট নিশ্চিত করা প্রয়োজন। নৌঘাট থেকে রাজস্ব আদায়ের পাশাপাশি যাত্রী সুরক্ষার জন্য নিয়মনীতি প্রণয়ন করাও জরুরি। অন্যথায় নৌপথে প্রাণহানির ঘটনা রোধ করা সম্ভব নয় বলে মনে করছেন হাওর বিশেষজ্ঞরা। সুনামগঞ্জ হাওর বাঁচাও আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক বিজন সেন রায় বলেন, হাওরের জনপদ সুনামগঞ্জ ৬ মাসই পানি নিচে থাকে। হাওরের বৈরী আবহাওয়া ও নৌকা চলাচলে নৌ চলাচলে নির্দিষ্ট নিয়ম না মানায় প্রতিনিয়ত ঘটছে নৌ দুর্ঘটনা।

নৌপথে চলাচলকারী নৌ চলাচলে অনাকাক্সিক্ষত দুর্ঘটনা এড়ানোর লক্ষ্যে প্রচলিত আইন ও বিধি বিধানসহ বিভিন্ন নির্দেশাবলি মেনে চলতে ১৪টি নির্দেশনা প্রদান করেছে জেলা প্রশাসন। এতে বলা হয়েছে- অভ্যন্তরীণ নৌযানসমূহকে সার্ভে এবং নিবন্ধন করতে হবে, সার্ভে সার্টিফিকেট (ফিটনেস) নৌযানের প্রকাশ্য স্থানে ঝুলিয়ে রাখতে হবে, নিবন্ধন সনদপত্র নৌযানে রাখতে হবে ইত্যাদি বিষয়। যে হাওরাঞ্চল জুড়ায় সৌন্দর্যপিয়াসী চোখ, সেখানে অনাকাক্সিক্ষত মৃত্যু কাম্য নয়। সংশ্লিষ্টরা এ বিষয়ে সতর্ক পদক্ষেপ নেবেন বলেই আমাদের প্রত্যাশা। ফেরানো হোক স্বস্তির পরিবেশ।

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper