ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪ | ১০ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

কান্নার দিন আজ

সম্পাদকীয়
🕐 ৩:০৫ অপরাহ্ণ, আগস্ট ১৫, ২০২০

পরাধীনতার শৃঙ্খল ভাঙতে, সাম্য প্রতিষ্ঠা করতে শতাব্দীতে অল্প ক’জন মহামানব আসেন পৃথিবীতে। তেমনই একজন মহাপুরুষ জন্মেছিলেন বাংলাদেশেÑ শেখ মুজিবুর রহমান। হাজার বছরের লাঞ্ছিত ও শোষিত বাঙালির জীবনে তিনি এসেছিলেন আলোকবর্তিকা হয়ে। ছাত্রাবস্থা থেকেই বঙ্গবন্ধু ছিলেন ন্যায় প্রতিষ্ঠার প্রশ্নে লড়াকু। সাম্যবাদী মতবাদে দীক্ষিত বঙ্গবন্ধু আন্দোলন গড়ে তোলেন লুটেরা পশ্চিম পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। দেশভাগের পর বাংলাদেশ পরিচিতি পায় পূর্ব পাকিস্তান হিসেবে। এ অঞ্চলের মানুষ বাংলা ভাষাভাষী। অন্যদিকে পশ্চিম পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা উর্দু। বাংলাদেশের ওপর যখন উর্দুভাষা চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়, রুখে দাঁড়ান সবাই। মাতৃভাষার বাংলার অধিকার রক্ষায় সৃষ্টি হয় বায়ান্ন’র ট্রাজেডি। সব আন্দোলনেই ছিল বঙ্গবন্ধুর ওতপ্রোত অংশগ্রহণ।

জনগণের স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তিনি একপর্যায়ে ছয় দফা দাবি আদায়ের আন্দোলনে নামেন। নানা হামলা-মামলা মোকাবেলার পর নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন বঙ্গবন্ধু। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ বিপুল ভোটে জয় পায়। কিন্তু শাসকগোষ্ঠীর অপকৌশলে তাকে সরকার গঠন করতে দেয়নি। অনাচার মাত্রা ছাড়ালে সৃষ্টি হয় মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট। পরিস্থিতি অনুধাবন ১৯৭১ সালের সাত মার্চে রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) সেই ঐতিহাসিক ভাষণ দেন বঙ্গবন্ধু। বস্তুত এ ভাষণের মধ্যেই ছিল যুদ্ধের দিকনির্দেশনা। ইতিহাসের পরম্পরায় আসে ২৫ মার্চের কালরাত। পাকিস্তানি জান্তাদের হাতে বন্দি হন বঙ্গবন্ধু। ঢাকা শহর হয়ে ওঠে মৃত্যুর উপত্যকা। প্রতিবাদ-প্রতিরোধে শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। নয় মাস যুদ্ধের পর স্বাধীন হয় বাংলাদেশ। যুদ্ধে প্রাণ দেয় ত্রিশ লাখ মানুষ, সম্ভ্রম হারান দুই লাখ মা-বোন।

পাকিস্তানের বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেয়ে দেশে ফেরেন বঙ্গবন্ধু। হাতে নেন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের শাসনভার। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালরাতে কতিপয় বেপথু ঘাতকের সপরিবারে প্রাণ হারান বঙ্গবন্ধু। শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বাইরে থাকায় প্রাণে রক্ষা পান। রাজনৈতিক নানা উত্থানপতনের পর বর্তমানে ক্ষমতায় রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তি আওয়ামী লীগ। বঙ্গবন্ধু আবার ফিরেছেন মানুষের মাঝে। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ এ বাঙালিকে জাতি প্রতিনিয়ত স্মরণ করে অশ্রুজলে। আজ জাতীয় শোক দিবস। বাঙালির কান্নার দিন। শোককে শক্তিতে রূপান্তরিত করেই এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ, বিনির্মাণ করবে বঙ্গবন্ধুর কাক্সিক্ষত সোনার বাংলা। আমাদের রোদন হয়ে উঠুক শক্তির আধার। বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ করে চলেছে বর্তমান সরকার। এই সরকার বঙ্গবন্ধুর বিচার থেকে শুরু করে যুদ্ধাপরাধের বিচারেও দেখিয়েছে উল্লেখযোগ্য সাফল্য।

বঙ্গবন্ধুকে সম্মান দেখাতে আমাদের উচিত যে বাংলাদেশের স্বপ্ন তিনি দেখে গেছেন, তা পুনর্গঠনে মনোযোগী হওয়া। অপ্রিয় হলেও সত্য, বর্তমানে একটি শ্রেণি গড়ে উঠেছে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধে যাদের এলার্জি। নানা কূটকৌশলে এরা বিতর্কিত মনোভাব বজায় রেখেছে। ষড়যন্ত্র চলছে এখনও। যে স্বপ্ন দেখেছিলেন জাতির পিতা, বাস্তবায়ন এখনো বাকি রয়ে গেছে অনেক। ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত, ধর্মান্ধতা থেকে রেহাই পেলে আমরা এগিয়ে যাব অনেকটাই। বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করে আজ বাঙালি ভাসবে অশ্রু ও রোদনে। শোককে পরিণত করতে হবে শক্তিতে। যে শক্তিবলে গড়তে সমর্থ হব হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালির স্বপ্নের স্বদেশ।

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper