চামড়ায় ধস : সংশ্লিষ্টদের পাশে থাকুন
সম্পাদকীয়
🕐 ৫:৩০ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ১২, ২০২০
সদ্য সমাপ্ত ঈদুল আজহার পর গবাদি পশুর চামড়া নিয়ে যে তুঘলকি কা- চলছে তা এক কথায় অপ্রত্যাশিত। এতে করে মৌসুমি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীসহ অন্যান্য ক্ষেত্রের সুবিধাভোগীরা বঞ্চিত হচ্ছেন। সবচেয়ে বড় বিষয়- প্রতিষ্ঠিত একটি শিল্পকে নানাভাবে বিতর্কিত করা হচ্ছে। গতকাল খোলা কাগজে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, বছরের পর বছর ধরে ট্যানারি মালিকদের কাছ থেকে পাওনা বকেয়া না পাওয়াসহ প্রয়োজনীয় সরকারি সহযোগিতা না পাওয়ায় ঝিমিয়ে পড়েছে উত্তরাঞ্চলের প্রবেশদ্বার শিল্প সমৃদ্ধ বগুড়া অঞ্চলের চামড়া ব্যবসা। স্থানীয় পরিবেশ অনুকূলে থাকা সত্ত্বেও কেবলমাত্র কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় ধস নেমে এসেছে এই ব্যবসায়। অথচ একযুগ আগেও রমরমা ছিল বগুড়ার চামড়া ব্যবসা। যেমন লাভবান ছিলেন ব্যবসায়ীরা, তেমনি এই খাত থেকে উল্লেখযোগ্য হারে রাজস্ব পেত সরকার। তাই দ্রুত জেলা পর্যায়ে প্রণোদনা দেওয়াসহ ট্যানারি স্থাপনের বিকল্প নেই বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।
স্থানীয় ব্যবসায়ীদের দাবি, ক্রমান্বয়ে বগুড়ায় পশুর চামড়ার বাজারে ধস নামছে। বেশ কয়েক বছর ধরে চামড়ার বাজার নিম্নমুখী হলেও এবার চামড়া কেনাবেচা হয়েছে পানির দরে। মৌসুমি ব্যবসায়ীরা মাঠে নামলেও চামড়া কিনছেন অনেক হিসাব-নিকাশ করে। অনেক জায়গায় বাড়িতে চামড়া পড়ে থাকলেও কেউ কিনতে আসেনি। চামড়ার মূল্য এতটাই কম ছিল, অনেকে রাগে অভিমানে চামড়া ফেলে পর্যন্ত দিয়েছেন। মূল্য কম হওয়ায় আশানুরূপ স্থানে দানও করতে পারেননি অনেকে। ব্যবসায়ীরা বলেন, কোরবানি উপলক্ষে গরুর চামড়া কেনা হয়েছে ২৫০ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৫৫০ টাকায়। ছাগলের চামড়া কেনা হয়েছে ১০ থেকে সর্বোচ্চ ২৫ টাকায়। আর ভেড়ার চামড়া দেওয়া হয়েছে ছাগলের চামড়ার সঙ্গে ফ্রি। তবুও যেন লোকসান আতঙ্কে রয়েছেন তারা।
ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন- বগুড়া একটি ঐতিহ্যবাহী শিল্প নগরী। গোটা বাংলাদেশসহ এশিয়া অঞ্চলে বগুড়ার আলাদা পরিচিতি রয়েছে। এ জেলায় এমন অনেক ব্যবসায়ী রয়েছেন, যারা করদাতা হিসেবেও গোটা দেশে সুনাম কুড়িয়েছেন। অথচ সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এখানকার চামড়া ব্যবসা। ব্যবসায়ীরা বলেন, বছরের পর বছর টাকা আটকে ট্যানারি মালিকরা বেকায়দায় ফেলেছেন বগুড়ার ব্যবসায়ীদের। ঢাকার ট্যানারি মালিকদের কাছে পাওনা টাকা চাইতে চাইতে হয়রান হয়ে পড়েছেন তারা। বিপুল পরিমাণ টাকা পাওনা থাকা সত্ত্বেও এখনও বাকিতে ট্যানারিতে চামড়া দিতে হচ্ছে তাদের। তাই বাধ্য হয়ে তারাও কম দামে চামড়া কিনছেন সাধারণ মানুষদের কাছ থেকে।
সব মিলিয়ে হয়তো ৫০ থেকে ৬০ হাজার গরু এবং ৩৫ থেকে ৪০ হাজার ছাগল কোরবানি করা হয়েছে। চামড়ার মূল্য বাদ দিয়ে শুধুমাত্র একটি গরুর চামড়া প্রক্রিয়াজাত করতেই লবণ ও শ্রমিকসহ দুই থেকে আড়াইশ’ টাকা খরচ পড়ে যায়। এত টাকা খরচ করে বছরের পর বছর ধরে ট্যানারি মালিকদের কাছে জিম্মি হয়ে থাকতে হচ্ছে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের। এই চিত্র শুধু বগুড়ার নয়, সারা দেশের। চামড়ার বাজারে ধস নামায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের পাশে দাঁড়ানো সময়ের দাবি। সংশ্লিষ্টরা এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন বলেই আমাদের প্রত্যাশা।
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228