চামড়া সংগ্রহে প্রতিবন্ধকতা দূর করুন
সম্পাদকীয়
🕐 ৭:৩৫ অপরাহ্ণ, জুলাই ২২, ২০২০
অল্প কিছুদিন পরেই পালিত হবে মুসলমান সম্প্রদায়ের অন্যতম উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা। এই ঈদ একদিকে বয়ে আনে আনন্দ, অন্যদিকে ঈদকে কেন্দ্র করে বিকশিত হয় অর্থনীতি। মৌসুমি ব্যবসায়ী, চামড়া ব্যবসায়ীরা যেমন এর সুফল ভোগ করেন, তেমনি অনাথ-এতিমসহ নানা শ্রেণির প্রতিনিধিও।
বিগত বছরের মতো এবার চামড়া শিল্পে দেখা দিচ্ছে সংকটের ঘনঘটা। গতকাল খোলা কাগজে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে চতুর্মুখী সংকটের মুখে পড়েছে চামড়া সংগ্রহের প্রধান মৌসুম ঈদুল আজহা। করোনা মহামারির কারণে ক্রেতা-বিক্রেতা কম, গতবারের চামড়া মজুদ থাকা, যথেষ্ট পুঁজির অনিশ্চয়তা এবং চীন-যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বে চামড়া রপ্তানি আন্তর্জাতিক বাজারে অনিশ্চয়তা লেগে থাকায় এবার চামড়া সংকট প্রবল হতে যাচ্ছে।
করোনাভাইরাসে বিশ্ব থমকে আছে। থমকে আছে বাংলাদেশও। দেশের উৎপাদন বিপণন, আমদানি-রপ্তানি সবকিছু চলছে সীমিত আকারে। জীবন বাঁচানোই এখন প্রধান কাজ। সেখানে চামড়া সংগ্রহের মতো কাজ সহজ হবে না। আবার অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড থমকে থাকার কারণে চামড়া সংগ্রহের মতো পুঁজির সমস্যা রয়েছে। ট্যানারি মালিকরা সহজ সুদের ব্যাংক ঋণের দিকে চেয়ে আছেন।
এখন পর্যন্ত পুঁজির সমস্যা সমাধান না হওয়ায় ঈদকেন্দ্রিক চামড়ার সংকট সমাধান দৃশ্যমান নয়। বাংলাদেশ ট্যানারি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত উল্লাহ বলেন, এবার চামড়া সংগ্রহ করা সহজ হবে না। করোনাভাইরাসের কারণে প্রায় ৭০০ কোটি টাকার চামড়া পড়ে আছে। ২০০ থেকে ২৫০ কন্টেইনার চামড়ার ডেলিভারি নিচ্ছেন না চীনা আমদানিকারকরা। এ কারণে উদ্যোক্তারা আর্থিক সমস্যার মধ্যে রয়েছেন।
হাজারীবাগ থেকে সাভারে ট্যানারি পল্লী স্থানান্তর করা হলেও পুরোপুরি কাজ শুরু করা যায়নি। সিটিপিসহ অবকাঠামো পুরোপুরি প্রস্তুত না হওয়ার কারণে ক্রেতারাও আসছেন না। ২০১৭ সালে কারখানার স্থানান্তর করার সময় উদ্যোক্তারা যে ঋণখেলাপি হয়েছেন তার থেকে ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব হয়নি। পশুসম্পদের পাশাপাশি পশুর চামড়া বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার অন্যতম উৎস। সারা বছর দেশে প্রায় দুই কোটি ৩১ লাখ ১৩ হাজার গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া জবাই হয়। এর অর্ধেকই হয় ঈদুল আজহায়।
২০১৯ সালে পশু কোরবানি হয়েছে ১ কোটি ৬ লাখ। পশুসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী খামারি পর্যায়ে এবার পশু প্রস্তুত রয়েছে এক কোটি ৯ লাখ। এর বাইরে ব্যক্তিপর্যায়ে আরও পশু প্রস্তুত রয়েছে। প্রতি বছর ৫ শতাংশ করে পশুর চাহিদা বৃদ্ধি পায়। সে হিসাবে এবার পশু বৃদ্ধির কথা থাকলেও করোনায় মানুষের আয়-রোজগার কমে যাওয়ায় কোরবানি কিছুটা কমবে। তারপরও কোটির ওপর পশু জবাই হবে। আর এ পশুর চামড়া সংগ্রহ করতে হবে ট্যানারি মালিকদের।
এবার কোরবানির চামড়া ক্রয়ে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা ঋণ দেবে রাষ্ট্রায়ত্ত তিন ব্যাংক সোনালী, জনতা ও অগ্রণী। তবে এ ঋণে চাহিদা কতটা মিটবে তা নিয়ে সংশয়ে ট্যানারি মালিকরা। পরিস্থিতি বিবেচনায় এবার ঈদে চামড়া সংগ্রহে কোনো প্রস্তুতি নেই বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। বিগত বছরগুলোর মতো এবার চামড়া শিল্পে ধস নামুক এটা কারোরই কাম্য নয়। সংশ্লিষ্টদের ব্যবসায়ীদের পাশে দাঁড়িয়ে এই দোদুল্যমানতা দূর করা সময়ের দাবি।
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228