বাণিজ্য নয়, সেবাকে প্রাধান্য দিন
সম্পাদকীয়
🕐 ৭:৪১ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ০৯, ২০২০
চিকিৎসাসেবার বিনিময়ে অর্থ নেওয়া হলেও সেটা কখনোই বাণিজ্য নয়। পুরোটাই সেবাখাত হিসেবে পরিগণিত। বর্তমানে করোনাভাইরাসের গভীর সংকটকালে একশ্রেণির বেসরকারি প্রতিষ্ঠান মওকা বুঝে হাতিয়ে নিচ্ছে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা। জিম্মি বানানো হচ্ছে রোগীদের। মানুষ রোগে-শোকে স্রষ্টার পরে যাকে স্মরণ করে তিনি হলেন ডাক্তার। মানুষের বিশ্বাস চিকিৎসার মাধ্যমে যাবতীয় রোগ থেকে সুস্থ করে তুলতে পারেন ডাক্তার।
কিন্তু চিকিৎসার মতো সেবামূলক পেশা আজ সাধারণ মানুষের কাছে মূর্তিমান আতঙ্ক। কিছু অসাধু ডাক্তারের হীন, ঘৃণ্য, অমানবিক কর্মকা-ের কারণে প্রায় সব ডাক্তারকে মানুষ ভাবছে কসাই, আর তাদের পরিচালিত প্রাইভেট ক্লিনিকগুলো হচ্ছে কসাইখানা।
গতকাল খোলা কাগজে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকারি হাসপাতালে সুষ্ঠু চিকিৎসা না পাওয়ার শঙ্কায় অনেকে যান ঝকঝকে, চকচকে থাকা প্রাইভেট ক্লিনিকগুলোতে। অনেক ভুক্তভোগী অভিযোগ করেছেন সেখানে আলোর নিচেই অন্ধকার। যখন হাসপাতাল থেকে বের হবেন তখন বুঝতে পারেন কোন কুয়োর মধ্যে এসে পড়েছেন। বিলের কাগজ হাতে পাওয়ায় মনে হয় তাদের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে।
নামে-বেনামে বিলের মাধ্যমে টাকার পরিমাণটাই বেড়েছে কিন্তু কাক্সিক্ষত সেবা মেলেনি। অভিযোগ রয়েছে, রোগীকে যে সব সেবা বা ওষুধ দেওয়া হয়নি তারও বিল করা হয়। শুধু তাই নয়, মুমূর্ষু রোগীর জন্য তাৎক্ষণিক প্রয়োজন আইসিইউ বা নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র। সেখানেও চলে প্রাইভেট ক্লিনিকগুলোর জালিয়াতি। রোগী মারা যাওয়ার পরও রোগীকে আইসিইউতে রেখে বিল বেশি করারও অভিযোগ রয়েছে। এমতাবস্থায় মানুষ চিকিৎসা ছাড়াই মরে যাওয়াটাকেই শ্রেয় মনে করছেন।
করোনা আক্রান্ত হয়ে গত ২৩ মার্চে আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা ৩৬ বছর বয়সী সাইফুর। সেরে ওঠার পর ২ জুন ছাড়পত্র দেওয়ার সময় ১ লাখ ৭০ হাজার ৮৭৫ টাকার বিল ধরিয়ে দেওয়া হয় তাকে। তার ছোট ভাই আরিফুর রহমান বলেন, বহু কষ্টে এক লাখ ৫০ হাজার টাকা জোগাড় করে মঙ্গলবার মধ্যরাতে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন তারা। বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সাইফুর বলেন, ‘ডেডিকেটেড’ হাসপাতালে কোভিড-১৯ চিকিৎসার খরচ সরকার দিচ্ছে, এটা জেনেই আনোয়ার খান মডার্নে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু মঙ্গলবার যে বিল তাকে দেওয়া হয়, তা ছিল সাধ্যের বাইরে। ভর্তি হওয়ার পর থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত তার রক্তের দুটি পরীক্ষা এবং তিনটি এক্স-রে হয়েছে। আর হাসপাতাল থেকে সরবরাহ করেছে শুধু নাপা ট্যাবলেট।
এসব বিষয়ে স্বাস্থ্য সচিব আব্দুল মান্নান বলেন, হাসপাতালে যে মানের চিকিৎসা দেওয়া উচিত যথাযথভাবে তা দেওয়া হচ্ছে না, আমি নিজেই তার প্রমাণ। হাসপাতালে রোগী ভর্তি হতে পারছে না, এই সমস্যা বাংলাদেশে প্রকট। গত সোমবার রাজধানীর মহাখালীতে জাতীয় বক্ষব্যাধি এবং শেখ রাসেল জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট পরিদর্শনে গিয়ে এসব কথা বলেন স্বাস্থ্য সচিব। জানতে চেয়ে খুদে বার্তা দিয়েও সাড়া পাওয়া যায়নি স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদের। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসাকে বাণিজ্য নয়, সেবা হিসেবেই প্রাধান্য দেওয়া হোক। সংশ্লিষ্টরা এ বিষয়ে নজর দেবেন বলেই আমাদের প্রত্যাশা।
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228