ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

পাটকল শ্রমিকরা দাঁড়াবেন কোথায়!

সম্পাদকীয়
🕐 ৮:৫৪ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ০৪, ২০২০

যে পাটকে আদর করে বলা হতো স্বর্ণালি আঁশ সেই পাটই কি অবশেষে হয়ে দাঁড়াল ‘গলার কাঁটা’! কাদের জন্য লোকসানি খাতে পরিণত হল, সেই হদিস বের করার চেষ্টা সংশ্লিষ্টরা কখনোই করেননি। গতকাল খোলা কাগজে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ইতিহাস ঐতিহ্যের স্মারক পাটখাতের ইতি ঘটতে যাচ্ছে। নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে কোনোমতে টিকে ছিল সরকারি পাটকল।

সম্প্রতি পাটমন্ত্রীর ঘোষণার মধ্য দিয়ে পাট যুগের সমাপ্তি ঘটতে যাচ্ছে। স্বাধীনতার পরপরই রাষ্ট্রায়ত্ত পাটশিল্পের যাত্রা। ১৯৭২ সালের পাটকলের সংখ্যা ৭৭টি থাকলেও ২০২০ সালে তা দাঁড়িয়েছে ৩২টিতে। মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়া ও পরে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলযুগের সূচনার কারণে আওয়ামী লীগ সরকারকে আপনজন মনে করেন এ খাতের শ্রমিকরা।

প্রবীণ পাটকল শ্রমিক নেতা ও বাংলাদেশে ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সভাপতি শহিদুল্লাহ চৌধুরী বলেন, অতীতে পাটকলের দুর্দিনে আওয়ামী লীগ সঙ্গে থেকেছে। ১৯৮৪ সালে জেনারেল এরশাদ পাটকল বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেন। সে সময় শ্রমিকরা আন্দোলন করে তা প্রতিরোধ করেন। সে আন্দোলনে ১৪ জন শ্রমিক জীবন দেন। ১৯৯৩ সালে বিশ^ব্যাংকের সঙ্গে সাইফুর রহমানের এক চুক্তির আলোকে পাটকলকে বেসরকারি খাতে দেওয়ার চেষ্টা করে খালেদা জিয়া সরকার। সে সময়ও শ্রমিকরা আন্দোলন করে ঠেকিয়ে দেন।

সে আন্দোলনে ১৭ জন শ্রমিক জীবন দেন। এসব আন্দোলনে থেকেছে আওয়ামী লীগ। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে নিহত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ দেয়। ২০০৯ সালের ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ কিছু উদ্যোগ নেওয়ার ফলে পাটকল লাভজনক শিল্পে পরিণত হয়। এ অবস্থা ২০১৩ সালের জুন পর্যন্ত চলতে থাকে। তারপর আর পাটের দিকে খেয়াল করেনি বর্তমান সরকার। এবার পিপিপিতে পাটকল চালুর নামে আগের সরকারগুলোর পথ অনুসরণ করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার।

পাটকল শ্রমিকরা স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের প্রধান হাতিয়ার হিসেবে কাজ করেছেন। স্বাধীনতা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর ডাকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতেন পাটকল শ্রমিকরা। ১৯৬৯ সালের অসহযোগ আন্দোলন থেকে শুরু করে সব আন্দোলেন পাটকল শ্রমিকরা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। তথ্যানুযায়ী, ১৯৭২ সালের ২৬ মার্চ রাষ্ট্রপতির আদেশে ‘পিও ২৭’ (বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল এন্টারপ্রাইজেস ন্যাশনালাইজেশন অর্ডার ১৯৭২) অনুযায়ী ব্যক্তি মালিকানাধীন ও পরিত্যক্ত পাটকলসহ সাবেক ‘ইপিআইডিসি’-এর মোট ৬৭টি পাটকলের তদারকি, পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশন গঠিত হয়। ১৯৮১ সালে এর নিয়ন্ত্রণাধীন মিলের সংখ্যা ছিল ৮২। এসব পাটকল প্রতিষ্ঠাকালে ব্যক্তি মালিকানাধীন হিসেবে প্রতিষ্ঠা হলেও স্বাধীনতা পরবর্তী সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র ভাবনা থেকে পাকিস্তানিদের ফেলে যাওয়া এসব পাটকল রাষ্ট্রীয়করণ করা হয়।

পাটকলের অধিকাংশের অনেক সম্পত্তি ও শ্রমিকদের কল্যাণে স্কুল এবং শ্রমিক কলোনি থাকার কারণে সমাজতান্ত্রিক যে ভাবনা থেকে সরকার জাতীয়করণ করে, তা অনেকটাই সহায়ক ভূমিকা পালন করে। কিন্তু পরবর্তীকালে দক্ষতার অভাব, সরকার বদল ও সরকার ব্যবস্থায় সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার বিপরীতে উদার মুক্তবাজার ব্যবস্থা প্রাধান্য পাওয়ায় সরকার। পাটকল শ্রমিকরা যাতে অসহায় হয়ে না পড়েন এই করোনাকালে, সরকারকে সেই ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper